avertisements 2

ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেফতার ২

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫২ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে চাওয়া যুবকদের টার্গেট করে একটি চক্র। এরপর নানান প্রলোভন দেখিয়ে ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তির পর ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে দেশ থেকে নিয়ে যায় চক্রটি। পরে দুবাই-সিরিয়া হয়ে লিবিয়া নিয়ে অমানসিক নির্যাতন করে দেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে দেশে ও লিবিয়ায় গড়ে উঠা চক্রের এমন কার্যক্রমে ভুক্তভোগী হয়েছেন অর্ধশত। তবে শেষ পর্যন্ত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক  সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান মো. হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ইউরোপে পাঠানোর নাম করে দুবাইয়ে নেওয়ার পর ডলার, পাসপোর্ট নিয়ে অবৈধ পথে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করা হচ্ছে বাংলাদেশিদের। সম্প্রতি সফিকুল নামে এক বাংলাদেশিকে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি, নির্যাতন করা হয় টাকার দাবিতে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ফিরিয়ে আনা হয় লিবিয়া থেকে অপহৃত সফিকুলকে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে মানব পাচারকারী চক্রে জড়িত আরও অনেকের নাম জেনেছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার চক্রের দুই সদস্য হলেন— বাদশা (৩১) এবং রাজিব মোল্লা (৩৫)।

ডিবি প্রধান বলেন, সারা দেশে অনেক থানাতেই মানব পাচারের অভিযোগে মামলা হচ্ছে। অনেক তরুণ-যুবক ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তিতে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে অনিশ্চিত যাত্রা শুরু করে। তাদের অনেককে দুবাই নিয়েই জিম্মি করা হয়।

উদ্ধার ভিকটিম সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রেফতার বাদশা তাকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গত ৪ অক্টোবর ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে দুবাই পাঠায়। সেখানে রাজিবের আত্মীয় দুবাইয়ে অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য সবুজ এয়ারপোর্টে ভিকটিমসহ আরও ২০ জনকে রিসিভ করে একটি বাসায় নিয়ে যায়।

এরপর দুবাই থেকে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার মিসরাত এলাকার একটি ক্যাম্পে আটকে রাখে। সেখানে বাদশা ও রাজিবের বোন জামাই গাইবান্ধার সুলতানের নেতৃত্বে ভিকটিমকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভিকটিমকে নির্যাতন করে মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে কান্না শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।

লিবিয়া থেকে উদ্ধারের পর দেশে ফেরা ভুক্তভোগী সফিকুল বলেন, দুবাই যাওয়ার পরই বুঝতে পারি একা নই, আরও অনেক বাংলাদেশিকে তারা এখানে আনার পর জিম্মি করেছে। লিবিয়ায় নেওয়ার পর ভয়ানক নির্যাতন নেমে আসে। অথচ দেশে থাকতেই সাত লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কথা ছিল ইতালিতে চাকরি হওয়ার পর বাকি পাঁচ লাখ টাকা নেবে। কিন্তু তারা ইতালি তো দূরের কথা লিবিয়ায় নিয়ে বন্দি করে, নির্যাতন করে টাকা আদায় করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য। বাদশা ও রাজিব দেশের বেকার যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকদের ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেকে এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ মারা গেছেন। কেউ এখনো টাকা দিতে না পারায় নির্যাতিত হচ্ছেন, বন্দি জীবনযাপন করছেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, দেশের বাইরে যারা মানব পাচারে জড়িত তাদের গ্রেফতার সম্ভব নয়। যেহেতু মামলা হয়েছে, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি দেশ থেকে যদি কেউ বৈধভাবে ইউরোপ পাঠানোর স্বপ্ন দেখাতে না পারে সেজন্য দেশে অবস্থান করা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

হারুন অর রশীদ বলেন, প্রলোভন ও চক্রের খপ্পরে পড়ে তরুণরা জিম্মি হচ্ছে লিবিয়ায়, পরিবারগুলো নিঃস্ব হচ্ছে। তাই যথাযথ প্রক্রিয়ায় বৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2