রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনী অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের ভীত করে: পিটার হাস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৫৬ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনী অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের ভীত করে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়। এমন একটি বাংলাদেশ যা গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, সুশাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীল।
মঙ্গলবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)-এ দেওয়া বক্তৃতায় এসব বলেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, টেকসই এবং বিস্তৃত পরিসরে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জন, শ্রম মানের উন্নয়ন, অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করা এবং একে বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং সংযোগের জন্য উন্মুক্ত করাই হলো আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত যে, আমরা অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে আরো দ্রুততার সঙ্গে বহুদূর যেতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যবসায়ী এ অঞ্চলে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। আমরা বাংলাদেশকে এমন একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করতে চাই যা বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হবে।
পিটার হাস বলেন, আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই আরো ভালোভাবে জানতে হবে যে তাদের জন্য বাংলাদেশে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই আমেরিকান ব্যবসাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোম্পানির প্রধানরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তাহলে সেখানেই ব্যবসা করতে যাবে যেখানকার বাজার তারা বোঝে।
বাজার খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নিতে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর জোরালো কারণ রয়েছে উল্লেখ করে মার্কিন দূত বলেন, এই চ্যালেঞ্জিং সময়েও বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রগতির গল্পটা দারুণ। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এই দেশের জিডিপি এমনকি কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়েও বেড়েছে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতে অর্থনীতি আগামী বছর ৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো সংস্কারের দরকার রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিদেশে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক একটি স্মার্ট কোম্পানি যে দেশে বিনিয়োগ করবে সেই দেশে অবশ্যই একটি উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও পানির সহজ ও অবিরত প্রাপ্যতা এবং সু-প্রশিক্ষিত জনবলসহ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় দেখতে চায়। এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে।
তিনি বলেন, একটি কোম্পানি নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা পেতে চায়। রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনী অস্থিতিশীলতা তাদের ভীত করে। সহজবোধ্য নীতি কাঠামো দেখতে চায় এবং তারা আইনের সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ দেখতে চায়। একটি কোম্পানি জানতে চায় যে যদি কোন ধরনের বিরোধ তৈরি হয় তাহলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে এবং আদালত কালবিলম্ব না করে দ্রুততা ও ন্যায্যতার সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে।
একটি কোম্পানি তার স্থানীয় প্রতিযোগীদের তুলনায় কঠোরভাবে কর দিতে কিংবা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বেশি তদন্তের মুখোমুখি হতে চায় না। জানতে চায় যে তারা সহজেই ও অবিলম্বে তাদের লাভ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশ কী এ কথা বলতে পারে যে এখানে পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো রয়েছে যার অধীনে ব্যবসাগুলো পরিচালিত হবে? যখন আমরা দেখি যে মামলার শুনানির সময় পেতেই কয়েক বছর সময় লেগে যায়। আমেরিকান ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেদের মতো করে খুঁজবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে।