ডাক্তারের কথায় রোগী যেন আশ্বস্ত হতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৭ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে রোগীদের সেবায় চিকিৎসকদের আরও আন্তরিক হওয়ারও পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “মানুষকে সেবা করা ও মানুষের পাশে দাঁড়ানো… কারণ একজন রোগী, আমার তো মনে হয় ওষুধের থেকেও একজন ডাক্তারের মুখের কথায় আশ্বস্ত হলে তার অর্ধেক রোগটাই ভালো হয়ে যায়।
“কাজেই এই আশ্বস্ত যেন হয়, সে ব্যাপারে প্রতিটা ডাক্তারকে আন্তরিকতার সাথে দেখতে হবে।”
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
৭৫০ শয্যার এই হাসপাতালে বিশেষায়িত সেবার পাঁচটি কেন্দ্র- জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপনকেন্দ্র, কিডনি রোগকেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে।
এছাড়া ১০০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট এবং ১০০ শয্যার জরুরি চিকিৎসা ইউনিট থাকবে এ হাসপাতালে।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র মানুষের সেবায় আরও বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে চিকিৎসকদের।
তিনি বলেন, “গ্রামে যেতে হবে, গ্রামের মানুষকে দেখতে হবে, রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে সাধারণ মানুষ আপনাদের উপর আস্থা রাখবে, বিশ্বাস রাখবে আর সহজে চিকিৎসা সেবাটা পাবে।”
অল্প খরচে সেবা নিতে মানুষ যে সরকারি হাসপাতালেই আসে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের বড় বড় সুন্দর বেসরকারি হাসপাতালে বিত্তশালীরা চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন, তবে সাধারণ মানুষ অল্প খরচে চিকিৎসা পেতে সরকারি হাসপাতালে আসে।
“বিশেষ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারণ জাতির পিতার নামে এখানে মানুষ একটু বেশি আসবে স্বাভাবিক। কাজেই গরীব-দুঃখী মানুষও যেন চিকিৎসাটা গুণগত মানের পেতে পারে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা, গবেষণা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের ওপর জোর দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “এখন যেটুকু করছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। তবে গবেষণার উপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গবেষণা এখনও আমাদের অপ্রতুল।
“আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন, শুধুমাত্র চিকিৎসা দিলেই চলবে না, তার সাথে আপনাদের গবেষণা করাটা জরুরি। কারণ আসলে গবেষণা ছাড়া কখনও উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। আমি আপনাদের অনুরোধ করব যে আপনারা এই দিকটায় বিশেষভাবে নজর দেবেন।”
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক বা শিক্ষক আছেন, তাদেরও বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
“তারা যেন এখানে অন্তত আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে পারেন বা তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেন। এই বিষয়ে মনে হয় আমাদের ডাক্তারদের আরেকটু উদার হতে হবে।”
করোনাভাইরাস মহামারী এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও যে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে, সে কথাও এ অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলো নিজেদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেকটা দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাশ্রয়ী হতে বলা হচ্ছে, উন্নত দেশগুলোতে খাদ্য কেনার ক্ষেত্রে রেশন করে দেওয়া হচ্ছে।”
এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষকে আবারও মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদেরকেও নিজ দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সামনে আরও কঠিন সময় আসতে পারে।
“যার যেখানে এক ইঞ্চি জমি আছে সেখানে কোনো না কোনো কিছু উৎপাদন করতে হবে। কারণ খাদ্য নিরাপত্তা না থাকলে হাজার চিকিৎসা করেও তো রোগী বাঁচানো যাবে না। সেটাও আমাদের দেখতে হবে, কারণ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা খুব কাছাকাছি।”
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ‘গড়ে তোলায়’ এখন অনলাইনেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায়, সে কথা তুলে ধরে টেলি মেডিসিন সেবাকে আরও জোরদার করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল ভবনে এ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।