সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার চেষ্টা করছে। সরকারের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছেন আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা, যারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কোনো সংকটে এখন পর্যন্ত ফেলতে দেননি। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠলেও আন্তর্জাতিক নানা চাপ বাংলাদেশের ওপর ক্রমশ বাড়ছে এবং আগামী নির্বাচন আগে এই চাপগুলো বাড়তে থাকবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
দেখার বিষয় যে, এই ধরনের চাপ গুলোকে মোকাবেলা করে কিভাবে সরকার এগিয়ে যায় এবং আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণ এবং গ্রহণযোগ্য করতে পারে। সরকারের ওপর নানারকম আন্তর্জাতিক চাপের ডালপালা ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটা দক্ষতার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে তা নিয়েও অনেকের মধ্যে সংশয় বাড়ছে। যেসব বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে তার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার ইস্যু।
জাতিসংঘ মানবাধিকার নিয়ে এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করেন। এই সফরের শেষ দিনে তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকারের কিছু বিষয় নিয়ে বিশেষ করে গুম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এ নিয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথাও বলেন।
কিন্তু তার পরপরই কে বা কারা প্রচার করেছে জাতিসংঘ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মানবাধিকার নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। এই প্রচারণা যখন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে থাকে তখন জাতিসংঘ থেকে আবার পালটা বিবৃতি দেওয়া হয় এবং তাতে অভিযোগ করা হয় যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এর ফলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং সরকারের মধ্যেও টনক নড়ে। জাতিসংঘের সঙ্গে এই অনভিপ্রেত ভুল বোঝাবুঝির মাশুল সরকারকে দিতে হবে বলে অনেক কূটনৈতিক মনে করছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে, অতিউৎসাহী কিছু ব্যক্তি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে বাহবা কুড়ানোর জন্য এরকম একটি কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এসমস্ত অতি উৎসাহীরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সীমা-পরিসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং বাংলাদেশকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে বলেই অনেকে মনে করেন। শুধু জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী এখন বাংলাদেশ যদি স্বাধীন কমিশন গঠন না করে তাহলে আস্তে আস্তে জাতিসংঘ হয়তো বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিভিন্ন ইস্যুতে নানা রকম কথাবার্তা বলবে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
শুধু জাতিসংঘ না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এখন সরকারের বিভিন্ন বিষয় নয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস অত্যন্ত সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে সিভিল সোসাইটি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে। বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। তার মধ্যে প্রথম রয়েছে গুম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।
দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তৃতীয়ত, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং জনমতের প্রতিফলন ঘটা। এই বিষয়গুলো নিয়ে এখন মার্কিন দূতাবাস নানারকম কাজ করছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সেই নিষেধাজ্ঞাও খুব সহসা প্রত্যাহার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়া কি কি বাণিজ্যিক লেনদেনের মধ্যে যায় সেটিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। সরকার এ কারণেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েও সেখান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর শিল্প বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে অবস্থান এবং অভিপ্রায় গুলো যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং বুঝতে চাইছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে এবং এটি দিয়ে আগামী দিনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে কোনো কোনো মহল মনে করছে।
ইউরোপের দেশগুলো এখন বাংলাদেশের মানবাধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে নজরদারি শুরু করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু পালিত হচ্ছে সে ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সহিংসতাগুলো ঘটেছে সেই সহিংসতা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরকম বাস্তবতায় নির্বাচনের আগে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।