জিয়াকে ধরে এনে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:২৯ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নিজের ইচ্ছায় নয়, সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতারাই জিয়াউর রহমানকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রবিবার (২৭ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৬ মার্চ দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাহেব প্রথম ঘোষণা পাঠ করেন। পর্যায়ক্রমে ওখানে যারা ছিলেন তারা একে একে পাঠ করেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী সাহেব তখন বলেছিলেন, একটা আর্মির লোক নিয়ে আসো, তাহলে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব আসবে। যা মেজর রফিকের বইয়ে উল্লেখ আছে।’
জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানিদের অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ থেকে সে তো কোনও বাঙালি সৈনিক বা কাউকে বাঁচাতে চেষ্টা করেনি। যার জন্য সেখানে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়। সেখানে বাকি যে বাঙালি অফিসার ছিল, তারা তাদের সৈন্যদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিল। কিন্তু জিয়া কেন ২৫ মার্চ পর্যন্ত থাকে? চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিয়েছিল উল্টো তাদের গুলি করেছে। তাদেরকে মেরেছে।’
তিনি বলেন, ‘সোয়াত জাহাজ থেকে যখন অস্ত্র নামাতে যায়, তখন তাকে ধরা হয়, সবাই আটকায়। তারপর তাকে ধরে নিয়ে আসা হয় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এবং এটা (স্বাধীনতার ঘোষণা) পাঠ করানো হয়। কেউ এতটুকু করলে আওয়ামী লীগ তা কখনোই অস্বীকার করেনি। যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিল। কিন্তু সেটা রক্ষা করতে পারেনি। কারণ, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানের হাত ছিল। মোশতাক-জিয়া একসঙ্গে মিলেইতো এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যে কারণে খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা আসলাম বেগ জিয়াউর রহমানকে প্রশংসামূলক চিঠি দিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী যখন দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। তখন জিয়াউর রহমানকে এই চিঠি কেন লিখবে? জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার থাকতে পারে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে থাকেনি। যেখানে গোলাগুলি হতো, তার থেকে তিন মাইল পেছনে চলে যেতো। আমাদের চট্টগ্রামের মোশাররফ ভাই এখনও জীবিত, তারা একইসঙ্গে রণক্ষেত্রে ছিল। যার জন্য নাম দিয়েছিল মিস্টার রিট্রিট। পাকিস্তানি কোনও সৈনিকের ওপর একটা গুলি চালিয়েছে, বা পাকিস্তানিদের বিপক্ষে একটি গুলি চালিয়েছে, এটা বিএনপি দেখাতে পারবে না। কিন্তু সে নাকি মুক্তিযোদ্ধা।’
১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু ছাত্রদের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়াস’ তৈরি করেছিলেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, সব মহকুমায় এটা তৈরি করেছিলেন, যাতে তারা স্বাধীনতার একটা নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করবে। ধীরে ধীরে মানুষের ভেতরে এটা উদ্বুদ্ধ করবে। এইভাবে ধাপে ধাপে তিনি এগিয়েছেন। হঠাৎ করে একদিনে ঘোষণা দেননি। কিন্তু প্রত্যেকটা পদক্ষেপ অত্যন্ত সুচারুভাবে নিয়েছিলেন বলেই এবং কখন কী হবে তিনি জানতেন। সেইভাবে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলেই আমরা এত তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম।’
মিথ্যা কথায় বিএনপি এক্সপার্ট মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমরা পারবো না। তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছে। অবশ্য এখন আর ভাঙা রেকর্ড কেউ চিনবে না। সবতো ডিজিটাল। একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে।’
মিথ্যা বলা বিএনপির ভালো গুণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাঙা সুটকেস ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কোকো লঞ্চ— ১, ২, ৩ বেরোলো। তারপর ডান্ডি ড্রাইং বেরোলো। কত কিছু বেরোলো। যাত্রাতো ওইটা দেখিয়ে হয়েছিল। খালেদা জিয়ার ছেলের পাচার করা কিছু টাকা আমরা ফেরত এনেছি। এরা দুর্নীতি আর ভোটের কথা কীভাবে বলে? উন্নয়ন ওদের চোখে পড়ে না কী করে?’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ ওদের ভোট দেবে কেন? ওদের নেতা কে? এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী অথবা গ্রেনেড হামলার আসামি, অর্থপাচারকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে তাদের নেতা। সেই দলকে মানুষ কেন ভোট দিতে যাবে? মানুষতো ভোট দেবে না। মাটি ও মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আমরা যে ওয়াদা করেছি সেটা পূরণ করেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশ এগিয়ে যাবে। কেউ পেছনে টানতে পারবে না।’