সাত জেলায় লকডাউন
রাজধানী ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৬ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় শনাক্ত রোগীর হার প্রায় ৪০ শতাংশ। একই সঙ্গে রাজধানীতেও বাড়ছে সংক্রমণ। এক মাস আগে শনাক্তের হার সাত শতাংশে নেমে এলেও এখন সেটি দ্বিগুণ হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে গতকাল ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে রাজধানী ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী ৯ দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া এই সাত জেলায় সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ এ বিধিনিষেধের আওতায় থাকবে। ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তাবয়ন করার দাবি জানিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, সীমান্তবর্তী জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কেউ লকডাউন মানেনি, স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। এবার সাত জেলার লকডাউন যেভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে বাস্তবায়ন না হলে ঢাকার পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৬৩৬ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৬৭ জন। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৪ এপ্রিল এক দিনে ৫ হাজার ১৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। অর্থাত্ দেশে করোনা সংক্রমণ ফের মধ্য এপ্রিলের পর্যায়ে।
এদিকে সাত জেলায় লকডাউনের আদেশে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধের সময়ে এই সাত জেলায় সার্বিক কার্যাবলি/চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) বন্ধ থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন : কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুত্, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। এই বিধিনিষেধের কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল সোমবার বিকালে সচিবালয়ে বলেন, আজ মঙ্গলবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাত জেলায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।
এই সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকছে প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না। এসব জেলায় সরকারি অফিসগুলো কীভাবে চলবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ থাকবে। বর্তমানে সাতক্ষীরা, বাগের হাটের মোংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, বেনাপোল, শার্শা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা দামুরহুদা, পুরো মাগুরা, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া এবং বগুড়া পৌরসভায় একই ধরনের বিধিনিষেধ চলছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ঢাকার বিষয়ে নতুন কোনো বিধিনিষেধ আসছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, লকডাউন যেভাবে ঘোষণা দিয়েছে, সেইভাবে যেন বাস্তবায়ন হয়। এর আগে অতীতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও মূলত তা ছিল অকার্যকর। যে কারণে সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে লকডাউন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতেই হবে।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। পরিস্থিতি বিপজ্জনক। অক্সিজেন সংকট। এখনো সিলিন্ডার অক্সিজেন ব্যবহূত হচ্ছে। তিনি বলেন, লকডাউন যেন লকডাউনের মতো হয়। যেভাবে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে, সেভাবেই যেন বাস্তবায়ন হয়। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে।
আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যেসব জেলায় সংক্রমণ হার ১০ ভাগের ওপরে, সেসব জেলায় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি যেন সবাই মেনে চলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে যার করোনা পজিটিভ তাকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। একই সঙ্গে ঐ পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে যখন সংক্রমণ বাড়ে, তখন সেখানে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউই সেই লকডাউন মানেনি। সেখানে যদি লকডাউন বাস্তবায়ন হতো, তাহলে করোনার বর্তমান এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন ঢাকাকে রক্ষা করতে সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।