avertisements 2

টিউলিপের পথে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৫ | আপডেট: ১২:৪৯ এএম, ২১ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫

Text

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপের পথে হাঁটতে হচ্ছে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। দুর্নীতিকাণ্ডে বিতর্কিত টিউলিপ ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এবার পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক পদ থেকে অপসারণের দাবি উঠেছে। তাকে এই পদ থেকে অপসারণ করতে স্বাস্থ্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশের ভাবমূর্তির কথা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। তাকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে উল্লিখিত দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ (সোমবার) সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। দুদকের প্রস্তুত করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী করেছেন। সায়মা ওয়াজেদের ক্ষেত্রে, প্রার্থীর যোগ্যতা হিসাবে যেসব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা কেবল কাগুজে ও ফরমায়েশি। মেয়ের অযোগ্যতাকে ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা তার মেয়ে পুতুলকে সঙ্গে করে ভারত নিয়ে যান। নিজের পারিবারিক প্রভাব এবং তার নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন এবং একই সঙ্গে তাদের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাষ্ট্রীয় সম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পুতুল নিজ নামে পূর্বাচল নতুন শহরে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ, ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্পে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ফাউন্ডেশনের নামে উপার্জিত অর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে করমুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে চূড়ান্ত করা চিঠিতে।

পুতুলকে অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে প্রস্তুত করা দুদকের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সার্বিকভাবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এহেন ব্যক্তি বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হয়ে ডব্লিউএইচও’র একটি সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর এবং বিশ্বমণ্ডলে দেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায়, তাকে (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদ বাতিলপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা পালানোর পর তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির গোপন তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এর ধারাবাহিকতায় সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠার প্লট বাতিলে রিট করেন। আবেদনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচলে অবৈধভাবে যেসব প্লট বরাদ্দ হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করার আদেশ চাওয়া হয়। এছাড়া এসব বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত ও সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয় আবেদনে। এরপর গত ১২ জানুয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বেআইনিভাবে বরাদ্দের অভিযোগে পুতুলকে প্রধান আসামি ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে মামলা করেছে দুদক। মামলায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের পর তার পরিবারের সদস্যদের অনিয়মের বিষয়গুলো আরও স্পষ্টভাবে সামনে আসছে, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, শুধু টিউলিপ ও পুতুল নয়, জয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে তার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া রূপপুরসহ ৯ প্রকল্পে হাসিনা পরিবারের ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি এবং শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে আট প্রকল্পের তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অনুসন্ধান টিম। এর আগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে শেখ হাসিনা, রেহানা, জয়, টিউলিপসহ অন্যদের বিদেশি ব্যাংক হিসাবের নথির বিবরণ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এছাড়া সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের আমলে ফাইলবন্দি হয়ে যাওয়া পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অনুসন্ধান পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন করে অনুসন্ধান শুরুর প্রক্রিয়া চলছে নভোথিয়েটার দুর্নীতিকাণ্ডের। এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। জানা যায়, যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে, সেই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, মীরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন, মীরসরাইয়ের ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প। সম্প্রতি এসব প্রকল্পের তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এসব প্রকল্পের প্রস্তাব/প্রাক্কলন, অনুমোদিত প্রস্তাব/প্রাক্কলন, বাজেট অনুমোদন, বরাদ্দ, অর্থ ছাড়করণ, ব্যয় অর্থের পরিমাণ ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র এবং এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো তদন্ত হয়ে থাকলে প্রতিবেদন ও প্রকল্প সময়ের পৃথক সারসংক্ষেপ কপি চাওয়া হয়েছে। 
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2