গণঅভ্যুত্থানের সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ১৬ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫ | আপডেট:  ০১:৩১ এএম,  ৫ নভেম্বর,
                                    বুধবার,২০২৫
                                
                        
                    চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার (গণঅভ্যুত্থানের সনদ) তৈরি করা হবে, যার ভিত্তিতে হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান এবং দুদক সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদন জমা হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু হলো মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটার মাধ্যমে আমরা আলোচনা শুরু করব সবার সঙ্গে যে, সবার মনের মধ্যে সায় দিচ্ছে কি না; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না, সেটার আলোচনা।’
সংস্কার কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আলোচনার রসদ আপনারা তৈরি করে দিয়েছেন। সে আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়টা কী হবে সেটাও আমরা জেনে রাখি, একটা মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হবে। সবাই একমত হবেন না। কিছু অংশে একদম একমত হবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম যে, একা একা স্বপ্ন দেখলাম? মানুষের স্বপ্নের অংশ নেই, সেটা তো হতে পারে না। আমরা কতটুকু সে (গণ-অভ্যুত্থানের) স্বপ্ন নিয়ে আসছি, সেটার জন্যই এ আলোচনা। এটা বাইরে থেকে চাপানো জিনিস না; ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস।’
‘যে আলোচনা হবে, সে আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন আপনারা (সংস্কার কমিশন) মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের স্বপ্ন একাকার হয়ে যাবে, তার মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে,’ বলেন অধ্যাপক ইউনূস।
এই সনদের ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ওই যে নতুন বাংলাদেশের চার্টার, সেই হবে চার্টারটা; সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে; কিন্তু চার্টার হারিয়ে যাবে না। এ চার্টার থেকে যাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে। এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা চাচ্ছি সব দল এই চার্টারে সাইন অন করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ওই যে বললাম ঐকমত্য। আমাদের বাংলাদেশি, বাঙালি জাতির সনদ বুকে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি পারি, যত বেশি অঙ্ক পরিমাণে বাস্তবায়ন করতে পারি, বাস্তবায়ন করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এটার ভিত্তিতে, এই চার্টারের ভিত্তিতে।’
বৈঠকে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, ‘যে চার্টার আমরা ধরে রেখেছি, তার যত কিছুই হোক, এটা যেন আমাদের হাত থেকে ছেড়ে না যায়। তাহলে এই স্বপ্নের যে কন্টিনিউটি, সেটা থাকবে কী করে? আমরা সে স্বপ্নের কন্টিনিউটি চাই, বাস্তবায়ন চাই।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন তারই একটা অংশ হবে। চার্টারের একটা অংশ হবে। ঐকমত্যের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার তো হারিয়ে যাবে ঐকমত্য না হলে। সেভাবেই আমরা অগ্রসর হতে চাই। কাজেই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদের সেই গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং তার জন্য পরবর্তী অধ্যায় শুরু।’
এ সনদ অনুসরণ করে পরবর্তী সরকার অগ্রসর হবে আশা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না, এটা একটা ঐতিহাসিক নোট। এ ঘটনাটা, আজকের ঘটনাটা ইতিহাসের, ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণটা সবাই আমরা বুঝি, কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। এত ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি, এই ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকে ইতিহাসের সৃষ্টি। আজকের এ অনুষ্ঠান, সে ইতিহাসের অংশ। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট দেওয়ার বিষয় না।’
ইউনূস বলেন, ‘আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারছি কি না, সেটা সামনে নিয়ে যেতে পারছি কি না, সেই ইতিহাসের যে অঙ্গীকার ছিল, সে অঙ্গীকারটা আমরা পূরণ করতে পারছি কি না সেটিই আমাদের প্রশ্ন এবং আত্মবিশ্বাস যে আমরা পারব।’ তিনি বলেন, ‘আজকের যে রিপোর্টগুলো আমরা হাতে নিলাম, ডেফিনেটলি এটা ইন্টেলেকচুয়াল একটা বড় এক্সারসাইজ দেশের জন্য। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু আজকের গুরুত্বটা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজের জন্য না। আমরা মানুষের মনোভাবকে, মানুষের স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পেরেছি কি না সেটাই প্রশ্ন। কাজেই আমাদের বিচার (মানদণ্ড) হবে, আমরা সেই স্বপ্নকে ধারণ করতে পেরেছি কি না। আজকে তার (সেই স্বপ্নের) যাত্রা শুরু হলো।’
সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের একটা উচ্চাংশে আমরা এসেছিলাম একটা নতুন দেশ, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে। এটার কাঠামো রচনা করার কাজ, দায়িত্ব- আপনাদের কাছে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে, এখন সে স্বপ্নগুলোর রূপরেখাগুলো তুলে ধরার জন্য। কাজেই এই ক্লাসরুমে পড়া হবে, অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে, এ রকম ব্যাপারটা না। জাতির পুনরুত্থান হলো, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পুনরুত্থান হলো, সেই পুনরুত্থানকে আমরা ধারণ করতে পেরেছি কি না সেটিই আমাদের বিবেচ্য বিষয় হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্র্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর। এরপর গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রথম ধাপে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় ৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের জন্য ৩১ জানুয়ারি ও বাকি পাঁচটি কমিশনকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দিতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা আছে আগামী মাসের শেষের দিকে।
এই কমিশনগুলো ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। সুপারিশমালা প্রস্তুতে এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করা হয়েছে।
 


                                    
                                    
                                    
                                    
                                    


