নজিরবিহীন উত্তেজনা
ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব আগরতলা মিশনে ভিসা সেবা বন্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:৫২ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার। তলবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হন ভারতীয় হাইকমিশনার- ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। দুই দেশে হচ্ছে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ। হামলা হয়েছে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে। বাংলাদেশের পতাকা ছেঁড়া ও পোড়ানো হয়েছে ভারতের দুটি শহরে। সীমান্তের দিকে রোডমার্চের ঘোষণা দিচ্ছে ভারতের রাজ্যভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠনগুলো। বাংলাদেশেও জেলায় জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলো দিচ্ছে পাল্টা হুমকি। সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বন্ধ হয়েছে ভারতে থাকা বাংলাদেশের একটি মিশন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে দেওয়া হয়েছে নি-িদ্র নিরাপত্তা। তলব করা হয়েছিল হাইকমিশনারকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এ ধরনের উত্তেজনা কখনো দেখা দেয়নি। জানা গেছে, বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ঘিরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলায় ২৫ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পু রীক ধামের অধ্যক্ষ। তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা ছিলেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গত জুলাইয়ে ইসকন থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে দেখছে দুই দেশের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও ভারতের কয়েকটি রাজনৈতিক দল। প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ করছে তারা। বিক্ষোভ চলাকালে চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সুতারকান্দি স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাও করে একদল উগ্র প্রতিবাদকারী। হামলা করা হয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে। উগ্রপন্থিদের বিক্ষোভে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আগরতলাসহ ভারতে বাংলাদেশের সব মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকা অবমাননা, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের কুশপুতুল দাহ ও ভারতের কিছু রাজনীতিবিদের আপত্তিকর বক্তব্য নিয়ে বিক্ষোভ চলছে বাংলাদেশেও। সতর্ক রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
আগরতলায় বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা বন্ধ : আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর সেখানে কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসাসেবা বন্ধ থাকবে। গতকাল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ঘটে। সেখানে হামলা, ভাঙচুর, ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ভেঙে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত সাতজনকে আটক এবং নির্লিপ্ততার জন্য পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব : ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে গতকাল তলব করে বাংলাদেশ। বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব এম রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন হাইকমিশনার। বৈঠক শেষে প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বহুমুখী ও বিস্তৃত। কোনো একটি ইস্যুতে এ সম্পর্ক সংকুচিত হবে না। শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ভারত।’
সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি-বিএসএফ : ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারীরা। এ বিক্ষোভ ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দেশের সীমান্তে যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি বা অপতৎপরতা রোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল এ তথ্য জানান বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম।
অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ এলাকার আট জেলার বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে ভারত। দুই দেশের সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন এলাকায় কাঁটাতার লাগানোরও উদ্যোগ নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি সূর্যকান্ত শর্মা শিলিগুড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উত্তরবঙ্গের আট জেলায় ১ হাজার ৯৩৭ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সেখানে থারমাল ক্যামেরা, নাইটভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সীমান্তের ভারতীয় অংশের চেকপোস্টে বসানো হচ্ছে বায়োমেট্রিক লক। এ ছাড়া সীমান্তে বেড়া দিতে জমি অধিগ্রহণে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতা পাওয়া গেছে।
ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা : ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয় বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। এ কর্মসূচি কেন্দ্র করে ভারতীয় হাইকমিশন এলাকায় কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ভারতীয় হাইকমিশনে প্রবেশের বিভিন্ন রাস্তায় সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বাঁশতলা থেকে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখী রাস্তায় কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি।