avertisements 2

ডিজিটাল ফাঁদ: ইউটিউব থেকে জুয়ার নেশায় শিশু-কিশোররা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:২১ এএম, ২২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

 ছবি: সংগৃহীত

বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ইমন (১৬), ইচ্ছে বৈমানিক হওয়ার। তাই নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয় বেছে নেয়া। অবসরে ইউটিউবে বিমান চালনার কৌশল দেখে সময় কাটে তার। এক দুপুরে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিল ইমন। গেম খেলে আয় করুন হাজার হাজার টাকা— বিজ্ঞাপন বার বার তার সামনে আসছিল। বিনা পরিশ্রমে লাখোপতি হওয়া যাবে এমন বিজ্ঞাপনের লোভে পড়ে ইমন। কৌতুহলবশত এমন এক বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে সে। তাতেই ফাঁদে পড়ে ইমন; ঢুকে পড়ে অনলাইন ক্যাসিনো গেম ‘জিঙ্গা পোকার’ সাইটে। এক সময় নিজে একাউন্ট খুলে যুক্ত হয়ে যায়। এভাবেই ডিজিটাল ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে এই কিশোর। অনলাইন জুয়ার নেশায় পেয়ে বসে তাকে। কিন্তু বাবার পরিশ্রমের টাকা জুয়ায় হারতে হারতে এখন সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

ইমন আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘প্রথমে অ্যাপই আমার অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা দিল, যা দিয়ে চিপ কিনে খেলা শুরু করে দেই। টাকা হাতে দেয়নি, ছিল কোম্পানির একাউন্টেই। প্রথমে বেশ ভালোই লাভ হচ্ছিল। সপ্তাহখানেক পরেই টাকা হারাতে লাগলাম। যতই হারছিলাম, ততই জেদ চেপে যাচ্ছিল। জিততে তো হবেই, হেরে যাওয়া টাকাও ফিরিয়ে আনতে হবে। ৬ মাসে আমি অন্তত ৩৫ হাজার টাকা নষ্ট করেছি। এই পুরো টাকাই বিকাশে রিচার্জ করে খেলেছি, যা আমার মা বাবা কেউই জানতো না।’

নবম শ্রেণির ছাত্র হয়ে কীভাবে ৩৫ হাজার টাকা হাতে এল— এমন প্রশ্নের জবাবে ইমন বলে, ‘আমার বাবা প্রবাসী, ব্যাংকে টাকা পাঠায় আমার মায়ের অ্যাকাউন্টে। রেমিট্যান্স বাবদ ব্যাংক কিছু টাকা কমিশন দিত। মা আমাকে তার কিছু টাকা আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে রাখতে দিত। যখন বাজিতে হারতে লাগলাম, তখন বাবার পাঠানো টাকা অল্প অল্প করে সরাতে শুরু করি। তা খেলায় চলে যেত। হেরে যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে আবার খেলতাম। এক কথায় নেশার জালে আটকে ছিলাম ছয়টা মাস। কিছুতেই বের হতে পারছিলাম না। মাকেও বলতে পারছিলাম না। এক বড়ভাইকে বিষয়টা জানাই। তিনি আমার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেন। অনেক কষ্ট হয়। বাসায় যদি জেনে যায়।’

বাবার আইডি দিয়ে জুয়ার অ্যাকাউন্ট
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু ইমন একা নয়, ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী অন্তত পাঁচজন কিশোর ফেঁসে আছে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে। কেউ স্পোর্টস বেটিং সাইটে, কেউ ক্রেজি টাইম নামে অনলাইন লাইভ গেমে, আবার কেউবা লুডুর জুয়ায় আসক্ত। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছর নয় এমন বহু কিশোর এই অনলাইন জুয়ায় সব হারাচ্ছে। এটা প্রচলিত জুয়ার চাইতে আলাদা হওয়ায় প্রথমে কেউ বুঝতেই পারে না। তবে যতক্ষণে বুঝতে পারে, ততক্ষণে আটকে যায় টাকার নেশায়। জুয়া খেলে লাভবান হয়েছে— এমন তথ্য দিতে পারেনি তাদের কেউই।

নারায়ণগঞ্জ শহরের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশতিয়াক মায়ানের (১৭) প্রিয় খেলা ফুটবল। মেসির বর্তমান ক্লাব ইন্টার মিয়ামির খেলা টিভিতে না দেখালেও, কোন সাইটে খেলা দেখা যাবে তা সে ভালোই জানে। অনলাইন দুনিয়ায় এক্সপার্ট হয়ে ওঠা মায়ানও জড়িয়েছে ওয়ানএক্স নামের স্পোর্টস বেটিং সাইটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিজ্ঞাপন থেকেই এই সাইটে যুক্ত সে। বাবার আইডি কার্ড ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। ‘ম্যাচ প্রেডিকশন’ বেটিংয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকারও বেশি নষ্ট করেছেন। পরিবারে জানাজানি হওয়ার পর বিব্রত এই কিশোর। মা-বাবার সামনে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সামনে জুয়াড়ি হিসেবে কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে মায়ানের।

মায়ানের পরিবার বেশ স্বচ্ছল। তার চাহিদা মেটাতে চাইলে ২/৩ হাজার টাকা দিতে দ্বিধাবোধ করতো না কেউ। সিগারেট কিংবা প্রকাশ্য বাজে অভ্যাস না থাকায় পরিবার বিশ্বাস করতো তাকে। কিন্তু অনবরত বাজিতে টাকা হারাতে থাকায় ঘর থেকে টাকা সরাতে শুরু করে সে। বিষয়টি তার মা টের পেতেই বেরিয়ে আসে অনলাইন বেটিংয়ে আসক্তির বিষয়টি।

গোপনে চলছে যে খেলা
অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে। মূলত হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে মেন্টরের অধীনে ভারত, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম থেকে ক্যাসিনো গেম পরিচালিত হয়। এক মেন্টরের অধীনে কয়েক হাজার প্লেয়ার অংশ নেয়। এসব মেন্টর মূলত অংশগ্রহণকারীদের আস্থা সৃষ্টির জন্য লাইভ স্ট্রিমিং গেম পরিচালনা করে থাকে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের নাগরিকদের উপস্থিতি ছিল বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

স্পোর্টস কেন্দ্রীক বেটিংই বেশি জনপ্রিয়। সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে – ওয়ানএক্স বেট, লাইনবেট, মেলবেট, বেট ৩৬৫, বেট উইনার, মেগাপারি। এদের মধ্যে বেট ৩৬৫ ছাড়া বাকি সাইটগুলোর ডিজাইন একই রকমের। ওয়ানএক্স বেট সাইপ্রাস থেকে পরিচালিত। মেলবেট, মেগাপারি বেটিং সাইটে বাংলাদেশের পতাকা, বাংলা ভাষার অস্তিত্ব দেখা যায়। যদিও বাংলাদেশে অনলাইন বেটিং সাইট পরিচালনার অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

দেখা দিচ্ছে মানসিক বিপর্যয়
তবে অনলাইন জুয়া কেবল অনলাইন লেনদেনের উপর নির্ভরশীল নয়। অনলাইন লুডু খেলতে গিয়ে বাজি ধরা এবং ক্যাশ লেনদেনেও জড়িয়ে পড়েছে অপ্রাপ্ত বয়স্করা। শহরের হোসিয়ারি কারখানায় শ্রম দেয়া ১৫/১৬ বছরের কিশোররাও অবসর সময়ে এসব অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। সারা মাস কাজ করে যা আয় করছে তার বড় একটি অংশ নষ্ট হচ্ছে জুয়ায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেটিং সাইটগুলোর টাকার লোভনীয় বিজ্ঞাপন আকর্ষিত করছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের। বিজ্ঞাপনের বাইরেও বন্ধুদের মাধ্যমে অনেকে বেটিংয়ে জড়িয়ে পরে। শুরুর দিকে সাইটগুলোতে গ্রাহকরা লাভের মুখ দেখলেও দ্রুতই তা পরিবর্তন হতে থাকে। হারিয়ে ফেলা টাকা উদ্ধারে আরও বেশি বেটিংয়ে যুক্ত হয়। এর ফলাফল শেষ পর্যন্ত শুধুই লোকসান। কোনো আয় ছাড়া বড় অংকের টাকা ব্যয় হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে কিশোররা। অপরাধবোধে ভুগতে থাকে প্রতিনিয়ত। 

বেটিং সাইটে লোকসান দেখার পরেও কেন দ্রুত সরে আসে না ভুক্তভোগীরা? কিশোরদের ভাষ্য, সাইটগুলোতে একসাথে ১০/১৫টা বাজি ধরার সুযোগ থাকে। ১৫টির মধ্যে পাঁচটিতে জয় পাওয়া গেল, ১০টিতে লোকসান হয়। এরপর মনে হয় কয়েকটি প্রেডিকশনে জয় পাওয়া খুবই সহজ, কিংবা রিস্ক বেটিং করলে হারানো টাকা উদ্ধারসহ কয়েকগুণ লাভ আসবে— এই লোভ থেকেই ফাঁদে জড়িয়ে বার বার টাকা হারাচ্ছেন আসক্তরা।

অনলাইন জুয়ার প্রভাবে উদ্বেগ দেখা গেছে অভিভভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে। প্রেডিকশন বেটিংয়ে জড়িয়ে যাওয়া মায়ানের মা বলেন, ‘আমি শুনে অবাক হয়েছি মোবাইলেও জুয়া খেলা যায়। এখন সহজে মোবাইল ধরতে দিই না। এসএসসি শেষ করুক, তারপরে হাতে ফোন দেব। এনিয়ে সারাদিন মন খারাপ করে থাকে। কোচিংয়ে টেস্ট পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট আসেনি। দুশ্চিন্তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।’

কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ মনোবিদদের
অনলাইন বেটিংয়ে আসক্ত শিশুদের মনোচিকিৎসা নেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানালেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বললেন ‘আমরা বেশ কিছু কিশোর পেয়েছি যাদের বয়স ১৪ থেকে ১৮। তারা পরিবার থেকে গোপনে টাকা সরিয়ে অনলাইন জুয়া খেলছে। তাদের এই মানসিক অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে আমরা তাদের কাউন্সেলিং করছি। অনেককে ফিরিয়ে এনেছি।’

অধ্যাপক হেলালের মতে, সবার আগে পরিবারকে খেয়াল রাখতে হবে। আসক্ত শিশু-কিশোররা পড়ালেখা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। সামাজিকভাবে এরা বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। মেজাজ দেখাতে শুরু করে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আর সব কিছুই করে আসক্তি মেটাতে, টাকার প্রয়োজনে। আর তা করতে গিয়ে তাদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে; মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে শুরু করে।

তিনি বলেন, আসক্তদের ফেরাতে প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। বেটিং সাইটগুলোতে সরকারি সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি দরকার। সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবারে থাকা কম্পিউটার-মোবাইল ফিল্টারিং করতে হবে। বাবা মায়ের খেয়াল রাখতে হবে শিশু কোন কোন সাইটে যাচ্ছে। আর আসক্তদের শারীরিক,-মানসিক নির্যাতন না করে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

আইনের সুযোগ নিচ্ছে অনলাইন জুয়াড়িরা
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি আজিজ আল মামুন বলেন, ‘জুয়ার সাধারণ মামলাগুলোতে মূলত তাৎক্ষণিক সাজা দিয়ে দেয়া হয়। নামমাত্র সাজা বলা যায়। যেমন ২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আর অনলাইন জুয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত এমন কোনো মামলা বা আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে, আমার জানা নেই। ফলে যেটার আইন বা বিধি নেই, সুযোগটা নিচ্ছে অনলাইন জুয়াড়িরা।’

মানি লন্ডারিং বা সাইবার আইনে তাদের বিচার করা যায় কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ‘প্রথমত অভিযোগ আসতে হবে কিংবা পুলিশকে মামলা করতে হবে। তা যদি না করে তাহলে কীভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আগাবে? এই অনলাইন জুয়া নিয়ে নারায়ণগঞ্জে কোন আসামিই ধরা হয়নি এখন পর্যন্ত।’

অনলাইন জুয়ায় নজর নেই পুলিশের
অন্তত ৮ বছরের বেশি সময় ধরে অনলাইন বেটিং চলছে সারা দেশে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত এনিয়ে কাজ করেনি পারেনি স্বীকার করেছেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। ঠিক কতগুলো সাইটে অনলাইন জুয়া চলে তা জানেন না পুলিশ কর্মকর্তারাও। কাজ করতে না পারায় অফিসিয়ালি বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ। 

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন ‘প্রথমত অনলাইন ক্যাসিনো বা বেটিংয়ের উপর কোন আইন দেশে নেই। একটি খসড়া আইন প্রস্তাবনায় আনা হলেও তা পাশ হয়নি। ডিএমপির সাইবার ইউনিট কিছুদিন কাজ করলেও বর্তমানে সেই কাজ বন্ধ আছে।


পুলিশ কখনও নিজেই কখনও আসামিদের ধরার চেষ্টা করেছিল কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিএমপিতে অল্পকয়েকটা কেস নিয়ে কাজ শুরু করেছিলে, পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আর অনলাইন বেটিং নিয়ন্ত্রনে আইন দরকার ছাড়া কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব না।’

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন
বেটিং সাইটগুলোতে মূলত বাংলাদেশি মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেই টাকা লেনদেন করে। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়ই বেশি ব্যবহার করা হয়। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বেটিংয়ের জন্য টাকা জমা দেয়া ও জয়ী হলে টাকা তোলার জন্য সাইটগুলো থেকে ট্রানজেকশন নম্বর দেয়া হয়। সেই নম্বর কখনই একরকম থাকে না। সংখ্যা ও অক্ষর মিলিয়ে এই নাম্বার তৈরি করা হয়, যা কিছু সময় পরপরই পরিবর্তন হতে থাকে। তাই কোনো নম্বরে টাকা প্রবেশ করছে বা বের হচ্ছে তা গোপন থাকে। তবে অনুসন্ধানে সবগুলো টেলিফোন অপারেটরেই নম্বর ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তা দিয়ে তৈরি বেশ কয়েকটি ওয়ালেট নম্বর ও ট্রানজেকশন নম্বর আমরা হাতে পেয়েছি। (০১৮১৪****১০/ ০১৭০১****৫০/ 71K5SR11DZ)

সাইট বন্ধ করেও থামানো যাচ্ছে না: বিটিআরসি
বিটিআরসি উপপরিচালক এস এম তাইফুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত অনলাইন বেটিং সাইটগুলো বন্ধ করে যাচ্ছি। আমাদের চোখের সামনে সার্চ করে যেগুলোই পাচ্ছি সেগুলো বন্ধ করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা কোনো সংস্থা থেকে কোনো সাইট বন্ধের জন্য সুপারিশ করলে সেগুলো বাংলাদেশ থেকে ব্লক করে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিজ্ঞাপন বন্ধের জন্য গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউবকে অনুরোধ করা হয়— এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া।’

দেশের অনেক সাইটে সহজেই প্রবেশ করা যাচ্ছে— এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওয়ানএক্স বেট আমরা ২০২১ সালে বন্ধ করেছি। এগুলো ক্লাউড আইপি ব্যবহার করে। যখনই তাদের আইপি ব্লক করি, তখনই তারা আরেকটি আইপিতে নিজেদের ট্রান্সফার করে। ওয়ানএক্স বেট, মেলবেট, বেট উইনার আমরা একাধিকবার ব্লক করেছি এবং তা ২০২১/২২ সালের মধ্যেই। টেকনোলজির দিক থেকে তারাও যথেষ্ট এডভান্স এবং বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। আইপি চেঞ্জ করার কারেণ টেকনিক্যালি তাদের রোধ করা যাচ্ছে না।’

মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ দেশ থেকে পাচার হবার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ ব্যাংক এর দেখার বিষয়। তারা যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে মোবাইল ব্যাংকিংগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তবে বিটিআরসি থেকে এই বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’

সরকারের অবস্থান জানতে বক্তব্য মেলেনি উপদেষ্টার
আমরা সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকদিন চেষ্টা করি। কয়েক দফা তার মুঠোফোন নম্বরে ফোন করলেও কেউ তা রিসিভ করেননি। পরে, খুদে বার্তায় অনলাইন জুয়া নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে প্রশ্ন পাঠালেও কোনো উত্তর আসেনি। ফিরতি কোন উত্তর না পেয়ে, আমরা আবারও তাকে কল করি। (৩০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪ টায়) উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারী ফোন রিসিভ করেন। নিজের পরিচয় জানালে সহকারী জানাতে চান কী নিয়ে কথা বলতে চাই? বিষয় শুনে সহকারী ফোনে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পরই জানিয়ে দেন যে, উপদেষ্টা এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চান না।

(বয়সজনিত সংবেদনশীলতা এবং সাংবাদিকতার নীতিমালার অনুসরণ করে ভুক্তভোগীদের প্রকৃত নাম গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।)

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2