চুক্তির অনিয়ম খতিয়ে দেখছে সিআইআইডি
বাতিল হতে পারে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:৫৯ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ফাইল ছবি
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল হতে পারে। কয়লার দাম, কর অবকাশসহ বাড়তি অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে আদানিকে। এই চুক্তিকে অসম আখ্যায়িত করে দীর্ঘদিন ধরে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে এ চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। এতে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পেয়েছে ভারতের আলোচিত কোম্পানিটি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঝাড়খন্ড রাজ্যে নির্মিত কেন্দ্রেটির বিদ্যুৎ ভারতে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে আদানি। ইতোমধ্যে ভারত সরকার এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করেছে। বিহার রাজ্যের গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ লাইন নির্মাণের অনুমোদনও পেয়েছে কোম্পানিটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে আদানি। এতে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে। চুক্তি পর্যালোচনা করে তা বাতিল করা হতে পারে।
এদিকে আদানির চুক্তিতে শুল্ক কর বিষয়ে অনিয়ম রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি)। ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আদানির চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিশেষ বিধানে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি যাচাই বাছাই করতে তারা একটি কমিটি করেছেন। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অসম চুক্তি
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম বাংলাদেশ সফরের সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ আদানির বিদ্যুতের বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। মোদির সফরের দুই মাস পরই আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ভেতরেই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রস্তাব ছিল আদানির। কিন্তু সমঝোতার দুই বছর পর ২০১৭ সালে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গড্ডা জেলায় ১ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির পরতে পরতে রয়েছে অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত রয়েছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি ৩ মাস পর কত বিদ্যুৎ নেবে, তা আগেই ঘোষণা করতে হবে। যদি বাংলাদেশ এর চেয়ে কম বিদ্যুৎ নেয়, তাহলেও ঘোষিত পরিমাণের সমান দাম পরিশোধ করতে হবে। অথচ বাংলাদেশে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেগুলোর সঙ্গে এমন কোনো শর্ত নেই। চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে পিডিবি কখনোই ৩৪ শতাংশের কম বিদ্যুৎ নিতে পারবে না। কম বিদ্যুৎ নিলে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত কয়লা ব্যবহার করা হতো, তার দাম ও কয়লা পরিবহন ব্যয়ের অর্থ দিতে হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার পরিমাণ, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বেশি ধরা হয়েছে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে কয়লার সিস্টেম লস ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ, অন্য কয়লাভিত্তিক
বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে এমন বিধান নেই।
গত অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচলন (ওঅ্যান্ডএম) খরচ ১ টাকা। জ্বালানি (কয়লা) খরচ প্রতি ইউনিটের জন্য ৭ টাকা ৫৪ পয়সা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুৎ কেনায় গড়ে ব্যয় হয়েছে ১৫ টাকা ১৪ পয়সা। চুক্তিতে অসম সুবিধার জন্য আদানির ওঅ্যান্ডএম ব্যয়ও অন্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, আদানির চুক্তির সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই এ চুক্তি বাতিল করতে হবে।
বিদ্যুৎ কেনার বিল সময়মতো পরিশোধ না করায় আদানি পিডিবির কাছে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে। এই বকেয়া পরিশোধে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয় আদানি পাওয়ার। এর পর ১৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে।