avertisements 2

কাঠগড়ায় নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জুন, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৫৭ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

লিফট ছিলো বন্ধ। আবর্জনাময় রাস্তায় গাড়ি রেখে এগোলেন সিঁড়ির দিকে। ৮২ বছরের বৃদ্ধ নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস উঠছেন সিঁড়ি ভেঙ্গে। দৃঢ় পদক্ষেপে পদানত হতে থাকে সিঁড়ির একেকটি কঠিন ধাপ। ৪ নং রাজউক এভিনিউ। ঢাকার শ্রম আদালত। গুটগুটে অন্ধকারে মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। সামনে নোবেল লরিয়েটের সহজাত, নির্বিকার অবয়ব। ছবি উঠছে সেকেন্ডে সেকেন্ডে। চোখ খোলা টিভি ক্যামরাগুলো দেখাচ্ছে লাইভ। ঘটনাস্থলের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন দেশবাসী। দেখলো সারা দুনিয়া। দেখো দেখো !

শান্তিতে নোবেল জয়ী একমাত্র বাংলাদেশী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিজ দেশের শাসন বিভাগের প্রতাপ দেখো ! দেশকে এক অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ কাঠগড়ায়। ‘বিচার’ হবে তার। অপরাধ-তার প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ টেলিকম লি:’ নাকি শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা দেয় নি। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করেনি। গণছুটি নগদায়ন করেনি। এজাহার মতে, এটি শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারার লঙ্ঘন। এ মামলায় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। আজ (মঙ্গলবার) সকালে ঢাকার শ্রম আদালতে তার উপস্থিতিতে গঠন করা হয় অভিযোগ। এর মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো: আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মো: শাহজাহানকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তারাও হাজির ছিলেন অভিযোগ গঠনকালে।

মামলাটি দায়েরের পর এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই বছর ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকারপক্ষ। শুনানি নিয়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এ সময় পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ওই রুলের শুনানি শেষে গত বছর ১৭ আগস্ট বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান এবং বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের ডিভিশন বেঞ্চ রুল খারিজ করে দেন। পরে মামলা বাতিলে আপিল বিভাগে যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৮ মে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো: নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ ড.মুহাম্মদ ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।

এছাড়া মামলার অপর আসামি টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূর জাহান বেগম ও শাহজাহানও পৃথকভাবে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।

মূল মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ প্রমিকদেও দেয়ার কথা থাকলেও তা তাদেও দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে দায়ের করা হয় এ মামলা।

ঢাকার ৩ নম্বর শ্রম আদালত অভিযোগ গঠনের পর সংবাদকর্মীরা ঘিরে ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। সাংবাদিকরা জানতে চান, এই মামলার মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে কোনোরূপ অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে কি না। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেননি। তবে তার পক্ষের এক আইনজীবী বলেন, তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে কি না- এ বিচার আপনারাই করুন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, আজকে অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য ছিলো। একটি অভিযোগ ছিলো, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি। তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা বললাম, গ্রামীণ টেলিকম চুক্তিভিত্তিক কাজ করে। তিন বছরের জন্য। গ্রামীণ ফোন এবং নকিয়ার সার্ভিসের জন্য। তার (গ্রামীণ টেলিকম) চুক্তিই তিন বছরের জন্য। সে নিজেই চুক্তিভিত্তিক কাজ করে। সুতরাং তার চুক্তি তিন বছর পর পর সবাইকে নবায়ন করে। তার চুক্তি নবায়নের রাইট নেই। সুতরাং এটি সার্ভিস রুলস অনুযায়ী হবে। তার পরের প্রশ্নটি হচ্ছে-শ্রমিকদের অর্জিত ছুটি। আইন অনুযায়ী অর্জিত ছুটি দিতে হবে ১৮ দিন। আমরা দিচ্ছি ২০ দিন। সেই কাগজপত্রও দেয়া হলো। তারপর বলা হলো ২৩৪ ধারায় প্রফিট দেয়া হয়নি। আমরা বললাম, আমরা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এটি সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি কোনো শ্রমিক-কর্মচারিকে দেয়া হয় না। কোম্পানি আইনেও বিধান আছে এই প্রফিট শ্রমিককে দেয়া নিষিদ্ধ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আজকে ফৌজদারি ক্রিমিনাল ২২৮ ধারায় মামলাটি এখানে আনা হয়েছে। লেবার আইনের ৮ এর ৪ এর ৭ এবং ৮ এবং ১১৭ এবং ২৩৪ ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এটি শ্রম আইনের মামলা। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির মামলা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটির চেয়ারম্যান। সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এটি। এই কোম্পানি লাভ করা নিষেধ। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় কোম্পানি কোনো লাভ করবে না। এটির সমস্ত লভ্যাংশ পরবর্তী উন্নয়নের জন্য একটির পর একটি ব্যবহৃত হবে। এটি আইনের বিধানে থাকা সত্ত্বেও সেখানে এ মামলা করা হলো। তাদেরকে বলা হলো, শ্রমিকরা এর লভ্যাংশ পাবার অধিকারী না। এবং কর্মচারিও এর লভ্যাংশ পাবে না। তারপরের কথা হলো, ১১৭ ধারা অনুযায়ী ।
এই গ্রাউন্ডে মামলা হতে পারে না। লেবার আইনে বলা আছে, মামলা করতে পারবে শুধুমাত্র লেবার ইন্সপেক্টর। ১৯ এর ৫ এ শুধুমাত্র লেবার ইন্সপেক্টরের কথা বলা আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। আমরা আজকের আদেশের বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাবো। সেখানে ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।

এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আরেক আইনজীবী বলেন, পরিদর্শনের পর আমাদের শ্রম পরিদর্শক নোটিশ করেছেন। আমরা ২ বার নোটিশের জবাব দিয়েছি। আমরা আইনের মধ্যে থেকেই সব কাজ করেছি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2