বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৩৩ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে আলাদা ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা বাধা প্রদানের জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশ সময় গত রাতে এক বিবৃতিতে এ ঘোষণার কথা জানান।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে ভিসানীতির ঘোষণা’ শিরোনামে ওই বিবৃতিতে অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে আমি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা 212(a)(3)(C) (3C)-এর অধীনে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি। এ নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীলসমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।
বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত, ভিসা পাবেন না জড়িতদের পরিবারের সদস্যরাও নতুন এই ভিসানীতির বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কেন এত চিন্তিত এমন প্রশ্নের জবাবে দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সর্বত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। এই নীতি সেই প্রচেষ্টাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে তারা তাদের নেতা বেছে নেওয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারেন। এই ভিসা বিধিনিষেধ সরকার বা আওয়ামী লীগের দিকে নির্দেশ করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দূতাবাস জানায়, না, যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এই নতুন নীতির অধীনে বিধিনিষেধগুলো সেই ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে পরিচালিত, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন আচরণে ও কর্মকান্ডে জড়িত। এসব ভিসা বিধিনিষেধ কার বা কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে এর জবাবে দূতাবাস জানায়, এই নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধীদলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। দূতাবাস জানায়, এখন পর্যন্ত এই নীতিমালার আওতায় কোনো ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। দূতাবাস আরও জানায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো স্তরের ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য। রাষ্ট্রদূত হাসের নিরাপত্তা হ্রাস করার বাংলাদেশ সরকারের ১৪ মের সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবে কি এই ঘোষণা এলো- এমন প্রশ্নের জবাবে দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ৩ মে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি।
সরকার বিচলিত নয়-তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, মার্কিন সরকার ঘোষিত নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশ সরকারকে মোটেও বিচলিত করছে না। কারণ সরকার জনগণকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের আর ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র এমন ভিসানীতির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি কোনো ধরনের স্যাংশন নয়। এ ব্যাপারে বরং বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। নির্বাচনের আগে বা পরে যে কোনো প্রকার সহিংসতা ঘটালে সেটা বরং তাদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার নতুন ঘোষিত এই নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর তারা বিস্তারিতভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।