avertisements 2

আলোচনায় ফের সংলাপ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ মার্চ, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:২০ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে ফের আলোচনায় সংলাপ। নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর দেশে বিদেশী চাপ বাড়ছে। আর এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সংলাপের বিষয়টিও বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপ হবে কি হবে না, এ নিয়ে জনমনে কৌতূহলের শেষ নেই। তবে বড় দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসাতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত। 

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকাতে বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নতুন উদ্যমে সংলাপের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আর এ কারণেই বিএনপিসহ আগে যেসব দল সংলাপে অংশ নেয়নি তাদের নতুন করে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। তবে বিএনপি এখনো সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থানে। তাই ইসির দেওয়া সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। তার পরও ইসি মনে করছে, বিএনপি হয়ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে এবং কোনো এক সময় সংলাপে যাবে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৯ মাস বাকি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বিএনপি সব সময়ই বলে আসছে। যদিও বিএনপি তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার বিষয়ে সরকার ও ইসির ওপর দেশে বিদেশী বিভিন্ন মহলের প্রচ- চাপ রয়েছে। স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট  জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছেন।  দেশের বুদ্ধিজীবীরাও চাচ্ছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক।

এ জন্য তারা সরকার ও ইসিকে সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনও বলছে, বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন তেমন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই ইসি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আবারও নতুন করে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে। ২৩ মার্চ বিএনপিকে সংলাপের জন্য চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। 

বর্তমান নির্বাচন কমিশন সব সময়ই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনের হঠাৎ  দেওয়া চিঠি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। তবে বিএনপিকে  ভোটে আনতে এই চিঠির  পেছনে সরকারের ইচ্ছার বহির্প্রকাশ ঘটেছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে বলাবলি হচ্ছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিএনপিকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে সরকারের  কোনো সংশ্লিষ্টতা  নেই। আমরা ২৩ মার্চ চিঠি দিয়েছিলাম। আমার মনে হয় উনারা  পেয়েছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আমার কাছে এখনো কোনো জবাব আসেনি। 

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানায় । এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৭টি দল সংলাপে অংশ নিলেও বিএনপিসহ ১২টি দল অংশ নেয়নি। তবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আগে সংলাপে অংশ না নেওয়া ১২টি দলকে এবার নতুন করে চিঠি দিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানায় ইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনার বিষয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত। ইতোমধ্যেই প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তারা দফায় দফায় বৈঠক করবে। তারা চাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বড় বড় রাজনেতিক দলের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করতে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনের আস্থায় আনতে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়। তাই সম্প্রতি বিএনপিকে সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। সরাসরি না হলেও বিএনপি ভার্চুয়ালি সংলাপে অংশ নিতে পারবে বলেও ইসির চিঠিতে জানানো হয়। কিন্তু বিএনপি চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়। 

সংলাপের চিঠি পাওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আমরা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবো না। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে আমরা নির্বাচনে যাব। তাই বর্তমান ইসির সংলাপে আমরা যাব না, আগেও যাইনি। তার পরও বিএনপিকে আবারও ইসির সংলাপে ডাকা সরকারের নতুন কূটকৌশল বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

ইসির সংলাপের বিষয়ে বিএনপির এমন নেতিবাচক মন্তব্যের পর মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে চার নির্বাচন কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কূটকৌশল নয়, আলোচনা করতেই বিএনপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুরো জাতিকে অবহিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই; বিএনপিকে দেওয়া সংলাপের চিঠির সঙ্গে সরকারের কোনো সংস্রব নেই, সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

আর নির্বাচন কমিশন কূটকৌশল হিসেবে এ কাজটি করেনি। বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্যই চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূল জিনিসটা হলো আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি, সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই বিএনপিকে সংলাপে ডাকিনি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছিÑ আনুষ্ঠানিক না হলেও, অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। ইসির পক্ষ থেকে আলোচনার কোনো সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিএনপি আলোচনায় সম্মত কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে।

সিইসি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে দলীয় শাসনটাই মুখ্য।  তবে বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন কখনো সম্ভব হয় না। দলগুলোর চর্চার মাধ্যমে তা বিকশিত হোক, গণতান্ত্রিক সরকার সংহত হোক, এটা চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আমরা ব্যথিত হই যখন বলা হয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। আমরা কখনো আজ্ঞা বহন করিনি। আমরা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আলাপ করে আমাদের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়। তবে আমরা বিএনপিকে দেওয়া চিঠির জবাব পাইনি। আমি চিঠি দিয়েছি, তাই জবাব দিলে আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে। তাই বিএনপি মহাসচিব মহোদয়কে সে চিঠি দিয়েছি। তার জবাব যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে পত্রের মাধ্যমে আসবে, সেটাই কাক্সিক্ষত। এর পর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।

 কূটনৈতিক মহলের সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে বিএনপিকে এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ ধরনের বিষয় আমাদের জানা নেই। আমাদের চিন্তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্ত থেকেই এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা।

 উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইসির সঙ্গে  বৈঠক করে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ)। বৈঠকের পর ইএমএফ সদস্য এবং নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানাল বলেন, আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পক্ষপাতহীন ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে এবং সব নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এর আগে-পরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও ইসির সঙ্গে বৈঠক করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি জানতে চায়।

এ ছাড়া সব দলকে নির্বাচনে আনতে ইসির করণীয় জানতে চায়।  আর সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। তাই এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে দেওয়া ইসির সংলাপের চিঠি দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়। 
এদিকে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ  চৌধুরী। তবে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী ওই সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর সমবেদনা জানাতে গুলশানের অফিসে গেলে প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং ওই সময় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে টেলিফোন করলেও তাতে সাড়া না দেওয়ার কথা জানিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপ করেও তাতে কোনো সুফল না আসার কথা জানালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার পরও সংলাপ করার অনুরোধ করেন।

তবে সেখানে উপস্থিত দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তাই এ পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ হওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে নির্বাচন কমিশন বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলে সরকারের তরফ থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সংলাপ করে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও মনে করছে নির্বাচনের আগে বড় দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা  না হলে সংকট হতে পারে। এই সংকটের কথা যখন বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে এমন এক পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকারকে হটাতে হলে একটি গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন। তাই দেশে  শীঘ্রই গণঅভ্যুত্থান হবে। আর বিএনপি নেতাদের এমন হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে রাজপথে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবেলা করা হবে। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2