সবজি-মাছে আগুন, ঝাঁজ বেড়েছে পেয়াঁজেরও
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ মার্চ,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:০০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে।সঙ্গে ব্যাপক হারে বেড়েছে মাছের দামও। সোমবার সকালে ঢাকার কাঁচাবাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
কয়েক মাস ধরে গরু ও খাসির মাংস ছোঁয়াই যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় মাছ দিয়ে মাংসের স্বাদ নেওয়ার চেষ্ট করছিলেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। রমজান সামনে রেখে মাছের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির দামও। মাংসের পর সবজি ও মাছের এ অসহীয় মূল্যে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
রাজধানীর বসন্ধুরা এলাকার জোয়ার সাহারা মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে; অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ৩০০ টাকা।সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা অথচ যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬০ টাকা। পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। কই মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা।চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ টাকা। শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫০ টাকা।
মাছের দাম বাড়ার বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ী সুলাইমান ইসলাম বলেন, মাছের ফিডের (খাবার) দাম বাড়ার পর থেকে মাছের দাম বেড়ে গেছে। ফিডের দাম বাড়ায় মাছচাষিদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের নিকট বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে ক্রয় করার ফলে ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মাছের দাম সহনীয় হবে বলে আশা করছেন ওই ব্যবসায়ী।
অন্যদিকে শীতের শেষের দিক থেকেই বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কয়েক দিন থেকে আরও বেড়েছে সব সবজির দাম। দুই-একটি সবজি ছাড়া কোনো সবজিই ৫০-৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
বসুন্ধরা এলাকার জোহার সাহারা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পটল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা অথচ আগে ছিল ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, সজনে প্রতি কেজি ২০০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ২০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা।
ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ।
এদিকে ঊর্ধ্বগতির বাজারে কয়েকটি সবজির তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে দাম কমেছে। যেমন— করলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। অন্যদিকে ডিম হালি প্রতি ৫ টাকা করে কমেছে। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ টাকা।
অন্যদিকে মাংসের দাম খুব একটা বাড়েনি। গরু ৭৫০টাকা, খাসি ১২০০ টাকা, ব্রয়লার ২৫০ টাকা, সোনালী ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে সবজি বিক্রেতা কবির মিয়া যুগান্তরকে বলেন, শীতকালীন সবজি বেশি উৎপাদিত হয়, ফলে কিছুটা দাম কম থাকে। শীত শেষ হয়ে গেছে এ জন্য সবজি উৎপাদনও কমে গেছে। এর ফলে দাম বাড়ছে । রমজান মাসে আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
সবজির দাম কেন বাড়তি—এ বিষয়ে একই বাজারের সবজি বিক্রেতা সবুজ আলী বলেন, শীতের মৌসুম শেষে সবজির দাম বাড়তি থাকবে এটা স্বাভাবিক। কারণ এ সময় শীতের সবজির মৌসুম শেষে সিজনাল সবজিগুলো আর হচ্ছে না। নতুন মৌসুমের সিজনাল সবজি উঠতে শুরু করলে আবার দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে শীতের সময় যতটা কম দামে সবজি কেনা গেছে, এখন আর অতটা কমে সবজি পাওয়া যাবে না।
সোমবার বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আব্দুর রহিম। বর্তমান কাঁচাবাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একই রকমভাবে বাজারে বাড়তি দামে সব পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে।কষ্টের বিষয় হলো— কোনো জিনিসের দাম বাড়লে পরে আর তা কমে না। যতই দিন যায়, ততই বাড়তেই থাকে। আমাদের বেতন তো আর সপ্তাহ বা মাস পর পর বাড়ে না। শীতের ভরা মৌসুমে সবজির দাম কিছুটা কম ছিল; কিন্তু শীত কমতে শুরু করতেই সবজিগুলোর দাম হু হু বেড়েছে।
বসুন্ধরা এলাকায় বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম। বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাংস কেনা তো মুশকিল আবার মাছের বাজারও চড়া। তবে আগে তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কই এমন জাতীয় মাছ কিনে খাওয়া যেত কিন্তু এখন আর এগুলোর কম দাম নেই। এসবের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আয়-ব্যয়ের হিসেব এখন মেলানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ডাল, ভাত, মাছ সবজি খেয়ে যারা কোনোভাবে টিকে থাকছে, তাদেরও এখন বিপদ। অতিরিক্ত দামের কারণে আমরা সাধারণ মানুষরা আগে থেকেই ভালো মাছ খেতে পারি না। আর যেসব কম দামি মাছ ছিল, এখন সেগুলোর দামও বেড়ে গেছে। একইভাবে বেড়েছে সবজির দাম। আমরা সাধারণ ক্রেতারা কোথায় যাব?