সাগরে ভাসছে ২ শতাধিক রোহিঙ্গা, বাঁচানোর আকুতি আসিয়ানের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১০ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি ভারত মহাসাগরে ভাসছে নারী-শিশুসহ প্রায় ২০০ রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা। খাবার ও পানির অভাবে প্রাণ হারানোর শঙ্কার মুখোমুখি হওয়া এ মানুষদের বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান। ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি তাদের উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে আঞ্চলিক এই জোট। -দ্য কুইন্ট, দ্য প্রিন্ট, আলজাজিরা
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল থেকে মালয়েশিয়াগামী একটি নৌকার ওই যাত্রীদের সবাই টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা। মাঝসাগরে বিপদগ্রস্ত এই রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী চার দেশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ানের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস অব হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট এবং দ্য প্রিন্টের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলেছে, গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে নারী ও শিশুসহ ২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। কিন্তু মালাক্কা প্রণালী পার হয়ে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপুঞ্জের কাছাকাছি আসার পর সেটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
গত তিন সপ্তাহে সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পারেননি নৌকার মাঝিরা। এদিকে টানা ২০ দিন সমুদ্রে ভাসতে থাকা নৌকাটির খাবার ও পানির মজুত শেষ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগেই। ক্ষুধা ও পানিশূন্যতায় ইতোমধ্যে কয়েকজন যাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রোববার নৌকাটির প্রধান মাঝি তার আত্মীয় এবং কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত শরণার্থী মোহাম্মদ খান রেজওয়ানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বলেন, আমরা এখানে মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।’ পরে মোহাম্মদ খান রেজওয়ান শরণার্থী শিবির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাগরে ভাসতে থাকা রোঙ্গিাদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। ভারতীয় দৈনিক দ্য প্রিন্টকে রেজওয়ান বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। তাদের খাবার-পানি সব ফুরিয়ে গেছে।
এপিএইচআরের বোর্ড সদস্য ইভা সুন্দারি বিবৃতিতে বলেন, ২০০ মানুষ নিয়ে দিনের পর দিন ধরে একটি নৌকা সমুদ্রে ভাসছে এবং খাবার ও পানির অভাবে সেই নৌকার লোকজন মৃত্যুর প্রহর গুনছে— ন্যূনতম বিবেকসম্পন্ন লোকজনের জন্যও এটা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। এই ক্ষুধার্ত-নিরাশ্রয় লোকজনদের অবহেলা করা মনুষ্যত্বকে অপমান করার শামিল। সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠী। তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিও কেড়ে নিয়েছে দেশটির ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনী। মিয়ানমারে যাবতীয় সরকারি সুবিধা-সেবা-অধিকার থেকে রোহিঙ্গারা চরমভাবে বঞ্চিত; যাদের বেশিরভাগের বসবাস আরাকান রাজ্যে।
২০১৭ সালে আরাকানের কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে হামলা চালায় সশস্ত্র রোহিঙ্গাগোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। তারপর আরাকানের সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করেন দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে টিকতে না পেরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আরাকান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পরিকল্পিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল তাতমাদৌ নামে পরিচিতি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।