সুবিধাবাদী ইমরান খান?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ক্রিকেটার তারকা থেকে পাকিস্তানের ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতা বনে যান পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। ২০১৮ সালে আগস্টে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তবে বিরোধীদলের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর মদদে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন পিটিআই প্রধান।
পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন, দেশটির সেনাবাহিনীই ইমরান খানকে গড়ে তুলেছেন। ইমরান খান এখনো মনে করেন, তাকে সেনাবাহিনীর বিরাট অংশ এখনো তাকেই সমর্থন করে।
চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। দেশটির জাতীয় পরিষদের ৩৪২জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন সদস্য তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দেন। তবে ইমরান খান দাবি করেছেন, বিরোধীদল বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাকে গদি থেকে হটিয়েছে। তিনি বিদেশি শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেছেন।
গদি হারানোর পর থেকে পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে বিশাল বিশাল র্যালির আয়োজন করেন ইমরান খান। তিনি র্যালিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে ধুয়ে দেন। সেইসঙ্গে তাকে উৎখাতে বিদেশি ষড়যন্ত্র হিসেবে ‘যুক্তরাষ্ট্র’ যে কাজ করেছে তা হাজার হাজার লোকের সমাবেশে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদেরকেও একহাত নেন।
তবে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই ধীরে ধীরে বিপাকে পড়তে শুরু করেছিল ইমরান খান সরকার। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি। এ ছাড়া রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তখন তার মস্কো সফরও পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি।
গত অক্টোবরের শেষের দিকে, পাকিস্তানের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন দেশটির শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার–সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লেফটেন্যান্ট–জেনারেল নাদিম আনজুম এবং প্রধান সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল বাবর ইফতিখার। সংবাদ সম্মেলনে তারা ইমরান খানের বিরুদ্ধে এক প্রকার বোমা ফাটান।
ইমরান খান।
জেনারেল নাদিম বলেন, সরকার টেকাতে ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেনাপ্রধান হিসেবে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা বাজওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ইমরান খানের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আসল কারণ জেনারেল বাজওয়া।
এছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে নতুন করে শুরু করা লংমার্চে পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের আবার কড়া সমালোচনা শুরু করেন ইমরান খান। তিনি গুজরানওয়ালার লংমার্চের ভাষণে তার এই আন্দোলনকে তুলনা করেন ১৯৭০-৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের সঙ্গে। এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
ইমরান খান।
বিশ্লেষকদের মতামত, ইমরান খান নিজের সুবিধার জন্যই এটিকে এখন একে ভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাইছেন। এদিকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে যে দোষ দিচ্ছিলেন-তা থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন ইমরান খান। সম্প্রতি তিনি ব্রিটিশ দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
সেখানে তিনি বলেন, ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে ‘দোষ দিচ্ছেন না’। ইমরান বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সম্পর্ক চান।
ক্ষমতাচ্যুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আর দোষ না দেওয়ার ইমরান খানের গত রোববারের মন্তব্যকে ‘বিস্ময়কর’ বলছে দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা ডন। তাহলে কী ফের ক্ষমতায় আসতে সুবিধা পেতেই ইমরানের এই ভোল পাল্টানো।
ইসলামাবাদভিত্তিক কলামিস্ট ফররুখ সেলিম জিও নিউজে লিখেছেন, পাকিস্তানে এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারলে নিজে লাভবান হবেন-এই ভেবে আগুন নিয়ে খেলছেন ইমরান খান। তিনি ইমরান খানকে মস্ত বড় গল্পকারক হিসেবে আখ্যা দেন। এছাড়া লংমার্চে নিজে গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়েও রাজনীতি করছেন বলে ইমরান খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।