ট্রাম্প নোংরা বলায় চটেছেন ভারতীয়রা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৫৪ এএম, ২৪ অক্টোবর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:৪১ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন আমেরিকার প্রেডিসেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে ভারতের দায়বদ্ধতা নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘ভারতের বাতাসেই নোংরা রয়েছে।’’
উপলক্ষ ছিল আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্ক। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসা প্রসঙ্গে চিন, রাশিয়া ও ভারতের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘‘চিনের অবস্থা দেখুন। কী রকম নোংরা একটি দেশ। রাশিয়া বা ভারতকে দেখুন। কী নোংরা, দূষিত বাতাস।’’
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক বসিয়ে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্যের পরিপন্থী আচরণেরও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের গোড়ায় বাইডেনের সঙ্গে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে ট্রাম্প প্রশ্ন তুলেছিলেন ভারতে করোনায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও। আমেরিকায় কোভিডে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আপনি যখন সংখ্যা নিয়ে কথা বলছেন তা হলে বলি, আপনি জানেনই না চিনে কত মানুষ মারা গিয়েছেন। আপনি জানেন না, ভারতে কত জন মারা গিয়েছেন। তারা কেউই সঠিক তথ্য দেয় না।’’
আমেরিকা প্রতিযোগিতা মূলক আবহে বিশ্বাস করে জানিয়ে ট্রাম্পের দাবি, ‘‘আমি প্যারিস চুক্তি রক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ চাকরি, হাজার হাজার সংস্থাকে ছাড়তে পারব না।’’ তাঁর অভিযোগ, ভারত ও চিনের কলকারখানাগুলি দূষণ ছড়ালেও সেগুলি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক তৎপরতা নেই । কিন্তু পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে আমেরিকাকে চাপে ফেলার চেষ্টা চলছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য ঘিরে শুক্রবার মোদীকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের টুইট, ‘ট্রাম্প: বন্ধুত্বের ফল। ১. ভারতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন ২. বলেছেন, ভারত বাতাস দূষিত করছে। ভারতের বাতাস নোংরা। ৩. ভারতকে শুল্ক বসানোর রাজা বলেছেন। ‘হাউডি মোদী’র পরিণাম’।
ঘটনাচক্রে, দু’মাস আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নেমে মোদীর স্লোগান ধার করেছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচন চেয়ে ট্রাম্পের ‘আরও চার বছর’ (ফোর ইয়ার মোর) প্রচারের সূচনায় ‘ভিডিয়ো ক্যাম্পেনিং’-এ তুলে ধরা হয়েছিল ট্রাম্প-মোদীর দু’টি যৌথ জনসভার কিছু বাছাই করা ক্লিপিংস। প্রথমটি, গত সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ সভা। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়ের সামনে কূটনীতির বেড়া টপকে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়েছিলেন মোদী। দ্বিতীয়টি, গুজরাতের আমদাবাদে ‘নমস্তে ট্রাম্প’। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দু’দিনের ভারত সফরে এসে সেখানে পুনর্নির্মিত মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম (সর্দার পটেল স্টেডিয়াম) উদ্বোধনে গিয়েছিলেন ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতে মোদী দাবি করেছিলেন, তিনি এবং ট্রাম্প মিলে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন।
তবে কেন হঠাৎ অবস্থান বদলালেন রিপাবলিক্যান নেতা? রাজনীতির কারপবারিদের একাংশ মনে করছেন, এ বার ২০ লক্ষ অনাবাসী ভারতীয় ভোটের বড় অংশই যে ডেমোক্র্যাটরা পেতে চলেছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। বাইডেন তাঁর ‘রানিং মেট’ হিসেবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে বেছে এ বিষয়ে টেক্কা দিয়েছেন ট্রাম্পকে। ফলে কট্টরপন্থী শ্বেতাঙ্গ ভোটের লক্ষ্যেই ট্রাম্পের এই ভোলবদল।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্যের সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য মোদীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক তেহসিন পুনেওয়ালা। তাঁর টুইট, ‘মনে করুন কী ভাবে আমাদের শহিদ লৌহমানবী ইন্দিরা গাঁধী আমেরিকা সফরে গিয়ে (বাংলাদেশ যুদ্ধপর্বে) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং বিদেশসচিব হেনরি কিসিঞ্জারকে তাঁদের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন’।