avertisements 2

কোথায় যাচ্ছে মহামারির বিশ্ব

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০১ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

করোনা মহামারিতে দুই বছর ধরে বিপর্যস্ত রয়েছে বিশ্ব। এই ভাইরাসের প্রভাবে আসন্ন নতুন বছরেও ধরণি মলিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার নতুন নতুন ধরন সৃষ্টির ফলে এমনটা ভাবা হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলার জন্য টিকা বৈষম্যের কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনার ডেলটা ধরনের প্রভাব কমতে না কমতে ওমিক্রনের সৃষ্টি হয়েছে। এটা দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। নতুন ধরন রোধে দেশে বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এই ধরন। এ বিষয় নিয়ে গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, আমরা একটি খুব খারাপ শীত মোকাবিলা করছি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার করোনা মোকাবিলায় অনেক ভালো অবস্থানে আছি আমরা। এখন আমাদের নিরাপদ ও কার্যকর টিকা এবং চিকিৎসাসামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিশেষজ্ঞ মারিয়া ফন খেরখভ বলেছেন, করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমাদের কাছে উপকরণ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা যদি এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করি, তাহলে অবশ্যই ২০২২ সালে মহামারির সমাপ্তি হবে। করোনার টিকা প্রথমে বাজারের আসার এক বছরের মধ্যে প্রায় ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে ২৪ বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে বিশ্ব। এতে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে টিকার চরম বৈষম্য রয়েছে। যখন ধনী দেশগুলো অতিরিক্ত টিকা মজুদ করেছে, তখন দুর্বল ও গরিব দেশগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরাও প্রথম ডোজ টিকার নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলোর ৬৭ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষের ১০ শতাংশও টিকা নিতে পারেনি। এ জন্য মহামারির অবসান করতে হলে টিকা বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, করোনার নতুন ধরন কিছু স্থানে নাটকীয়ভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এমনকি মারাত্মক ঝুঁকিও তৈরি করছে। এরই মধ্যে কিছু দেশ বুস্টার ডোজ দিতে শুরু করেছে। তবে প্রতিটি মানুষের পূর্ণ ইমিউনিটি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব নিরাপদ হবে না।

টেডরস বলেছেন, বুস্টার দিয়েও মহামারিকে এড়াতে পারবে না। বরং এই বুস্টার মহামারিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেছেন, ওমিক্রনের সৃষ্টিই এটার প্রমাণ। এই বিষয়ের সঙ্গে একমত হয়েছেন ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও জীববিদ্যার অধ্যাপক গৌতম মেনন। তিনি বলেন, এখন ধনী দেশগুলোর সবচেয়ে বড় স্বার্থ হচ্ছে গরিবদের টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

রায়ান সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বনেতারা যদি টিকার সহজলভ্যতা পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে। আর এগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করলে কর্তৃপক্ষ ও বিজ্ঞানের ওপর আস্থা হারাবে তারা। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ অ্যান্তনি ফুসি বলেছেন, এখনও ওমিক্রনের বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় আসেনি। এটা অন্যান্য ধরনের তুলনায় কম ঝুঁকির হলেও এটি বেশি সংক্রামক, যা একেবারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। তিনি বলেন, 'যখন আপনি খুব বেশি আক্রান্তদের পাবেন, সেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও হাসপাতাল ব্যবস্থা তাদের সামাল দিতে পারবে না।'
চীন থেকে শুরু হওয়া এই ভাইরাসে পুরো দুই বছর ধরে কাবু করে রেখেছে বিশ্বকে। এতে এ পর্যন্ত ৫৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বিভিন্ন ধরন তৈরি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ভারতে তৈরি হওয়া ডেলটা ধরনই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

টিকা বৈষম্যের পাশাপাশি এ নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বও এই মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়াতে সহায়তা করেছে। এরই মধ্যে গতকাল ওমিক্রনে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওইদিন দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক রোগীও শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সম্প্রতি এ ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আগামী বছর থেকে টিকা বাধ্যতামূলক করবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2