চীনের কথা বলে উত্তরাখন্ডের রাস্তা বানাতে চান মোদি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিল আসাম রাইফেলসের শিবির। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার অন্দরে অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবনসিরি জেলার সেই জায়গায় এখন গড়ে উঠেছে পুরোদস্তুর একটি চীনা গ্রাম! সম্প্রতি আমেরিকার গোয়েন্দা দফতরের একটি প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হয়েছে ওই গ্রামের উপগ্রহচিত্রও। সেখানেরও বলা হয়েছে, দুর্গম ওই অঞ্চলে পঞ্চাশের দশকে আসাম রাইফেলসের শিবিরের কথা। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের গত বছরের বার্ষিক রিপোর্টে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে বলা হয়েছিল, তাসরি চু নদীর তীরে বানানো ওই গ্রামে প্রায় ১০১টি ঘর তৈরি করেছে চীনা সেনা। বক্তব্যের সমর্থনে একটি উপগ্রহ চিত্রও প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটি ২০২০ সালের ১ নভেম্বর তোলা হয়েছে বলে দাবি। রিপোর্ট দাবি করা হয়েছে, ষাটের দশকের গোড়তেই আসাম রাইফেলসকে হটিয়ে তাসরি চু নদীর তিরের ওই এলাকা দখল করেছিল চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। পরে সরে যায় তারা। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ দশক ধরে ধীরে ধীরে ওই অঞ্চল চীনের ফৌজ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। গত বছর নভেম্বরে আরুণাচলের বিজেপি সাংসদ টাপির অভিযাগ করেছিলেন, আপার সুবনসিরি জেলায় এলএসি পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে স্থায়ী কাঠামো বানাচ্ছে চীন। এরপর গত এপ্রিলে আমেরিকার কংগ্রেসে জমা দেয়া বার্ষিক রিপোর্টে ‘অফিস অব দি ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স’ দাবি করেছিল ভারতীয় ভ‚খÐ বেদখলের কথা।
উত্তরাখÐে গারওয়াল হিমালয়ে প্রায় নয়শ কিলোমিটারের চারধাম রাস্তা আছে। যা গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথকে যুক্ত করেছে। মূলত হিন্দু তীর্থস্থানগুলিকে যুক্ত করার কারণে একে চারধাম রাস্তা বলা হয়। সম্প্রতি দেরাদুনের কাছে সেই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে এই রাস্তা সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। বেশ কয়েকটি পরিবেশ সংক্রান্ত এনজিও তার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়। এনজিও-গুলোর বক্তব্য, গত কয়েকবছরে উত্তরাখÐসহ গোটা হিমালয়েই একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে। ক্লাউড বার্স্ট হয়েছে। ফ্লাশ ফ্লাড হয়েছে। সময়ে আসাময়ে বিশাল বিশাল ধস নেমেছে। পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, হিমালয় কেটে যেখানে সেখানে রাস্তা ও বাঁধ তৈরির জন্য প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। গাছ কাটা হয়েছে অসংখ্য। ফলে প্রকৃতির ক্ষতি করে রাস্তা সম্প্রসারণ না করাই ভালো। কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে তারা দশ মিটার রাস্তা চওড়া করতে চায়। কিন্তু এনজিওগুলি বাদ সাধায় মামলা পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে সরকারপক্ষের আইনজীবী রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে চীনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। সরকারপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, চারধাম রাস্তা সীমান্তের খুব কাছে। হিমালয়ের অন্য দিকে চীন বিপুল পরিমাণ পরিকাঠামো তৈরি করেছে। সীমান্তের খুব কাছে তাদের হেলিপ্যাড আছে। এছাড়াও সেনা একাধিক জায়গায় বড় বড় কাঠামো তৈরি করে রেখেছে। ফলে রাস্তা চওড়া করে ভারতও পরিকাঠামো তৈরি করে রাখতে চাইছে।
সরকারপক্ষের বক্তব্য, প্রয়োজনে ওই রাস্তা দিয়ে সেনা যুদ্ধের সামগ্রী দ্রæত যাতে সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, সরকার তার ব্যবস্থা করে রাখতে চাইছে। সাম্প্রতিককালে চীনের সঙ্গে ভারতের বিবাদ চলছে একাধিক সীমান্তে। সে কারণেই সীমান্তে পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এনজিও পক্ষের আইনজীবী অবশ্য সরকারের এই যুক্তি মানতে চায়নি। তাদের বক্তব্য, ভারতীয় সেনা উত্তরাখÐে রাস্তা চওড়া করতে চায়নি। সরকার রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সেখানে এ কাজ করতে চাইছে। কারণ ওই রাস্তার সঙ্গে একাধিক হিন্দু তীর্থস্থান জড়িত। ফলে সেনার পরিকাঠামো উন্নয়নের যে কথা বলা হচ্ছে, তা যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলে তাদের দাবি। প্রথম দিনের শুনানিতে বিচারপতিরা জানিয়েছেন, দেশের সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা যায় না। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের কথাও মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু পাশাপাশি প্রকৃতির কথাও ভাবতে হবে। প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো কাজ করা উচিত হবে না। ফলে দুইটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। কীভাবে দুইদিকই রক্ষা করা যায়, এমন একটি সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে হবে। বৃহস্পতিবার ফের শুনানি আছে। দুইপক্ষ কীভাবে সমাধানসূত্রে পৌঁছায়, সেটাই এখন দেখার।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তার বক্তব্য, চীন এবং পাকিস্তান সীমান্তে পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। সে কারণে বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা সম্প্রসারণও প্রয়োজন। তবে গত কয়েক দশকে যেভাবে পাহাড় ফাটিয়ে হিমালয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে এবং রাস্তা চওড়া করা হয়েছে, তা পরিবেশের বিপুল ক্ষতি করেছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। তবে একইসঙ্গে তার বক্তব্য, পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে চীন পরিবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। চীন যদি পাহাড়ের উপর কাঠামো তৈরি করে, সীমান্তের খুব কাছে আধুনিক রাস্তা তৈরি করে, তাহলে ভারতও চুপ করে বসে থাকতে পারে না।