আর্ন্তজাতিক চাপে কাশ্মিরের নেতাদের সঙ্গে আজ মোদির বৈঠক
আর্ন্তজাতিক চাপে কাশ্মিরের নেতাদের সঙ্গে আজ মোদির বৈঠক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৫ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই নরেন্দ্র মোদির সরকার আজ নয়াদিল্লিতে কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য ডেকেছে। খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির সভাপতিত্বে কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও উপস্থিত থাকবেন। যদিও সভার আলোচ্য বিষয়বস্তু ঘোষণা করা হয়নি, তবে মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের ভারত অঞ্চলে ইউনিয়ন টেরিটরি নীতি বা স্বায়ত্তশাসন পুনঃস্থাপন এবং নতুন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ এ বছর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ বা অনানুষ্ঠানিক গোপন আলোচনার ফলাফল হিসাবে প্রত্যাশিত ছিল।
মোদি সরকার ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে ৩৫ অনুচ্ছেদ এ দ্বারা প্রদত্ত সুরক্ষা এবং স্বায়ত্তশাসন রদ করে অঞ্চলটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন করে দেয় এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মোদি এবং শাহের কাশ্মীর পরিকল্পনা যে দর্শনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল, তা গত বছর পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা দুটি বড় কাশ্মীরি দলের কার্যকর বিকল্প তৈরিতে ব্যর্থ হয়। ফলে শীর্ষস্থানীয় কাশ্মীরি নেতাদের মুক্তি দেওয়া হয় এবং জেলা উন্নয়ন কাউন্সিলের তড়িঘড়ি নির্বাচনে এসব দলকে বাইপাস ও প্রান্তিকীকরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মোদির ব্যর্থতার অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরে প্রতিশ্রুত বিস্তৃত ব্যবসায়িক বিনিয়োগে ব্যর্থতা, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকাটিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতির অভাব। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিকভাবে চীন কাশ্মীর ইস্যুটি বহুজাতিক ফোরামগুলোতে উত্থাপন ও সমর্থন করে আসছে। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে চীনা আধিপত্য ও ভারত জুড়ে করোনার ভয়াবহতা কাশ্মীরে মোদি সরকারের সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এসবের মধ্যে খুব সম্ভবত বাইডেন প্রশাসনের চাপের মুখে বিজেপি সরকার কাশ্মীরের ওপর থেকে ৪ জি মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যোগাযোগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের দ্বৈত-ফ্রন্টের সম্মিলিত সামরিক হুমকির সম্ভাব্যতার মুখোমুখি হয়ে মোদি সরকার ২০২০ সালে পাকিস্তানের সাথে ব্যাকচ্যানেলে আলোচনা শুরু করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে মার্চে দু’দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি ঘটে। এটি খুব শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্ততায় কাশ্মীর আলোচনায় মোদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ছাড় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী একটি ‘কার্যকর পরিবেশ’ তৈরির অন্তর্গত।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণের পেছনে মোদির একটি দ্বিপক্ষীয় এবং মানবিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রস্থান নির্ধারিত হওয়ার কারণে এখানে একটি ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও সামনে এসেছে। পাকিস্তানের মাটিতে আমেরিকান ঘাঁটি স্থাপনের জন্য আমেরিকা এবং পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আমেরিকাও ভারতকে কাশ্মীর ইস্যুতে চাপ দিচ্ছে এবং লাদাখে চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত সঙ্কট অমিমাংসিত রয়ে গেছে।
এছাড়া, মোদির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এবং শাহের ২০১৯ এর বাগাড়ম্বটি নীরবতার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ভারত ভয়াবহ করোনা বিপর্যয় এবং মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে। দেশটির পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক অপমানজনক নির্বাচনী ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং একাধিক রাজ্যে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখোমুখি।
এদিকে, গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে গণতন্ত্র বিষয়ক শুনানির সময় মাকিন সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া ডিন থম্পসন স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘কাশ্মীর এমন একটি অঞ্চল যেখানে আমরা তাদের(মোদি সরকার)কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে দেখেছি: বন্দীদের মুক্তি, ৪জি যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, সেই প্রকৃতির জিনিস। সেখানে আমরা অন্যান্য নির্বাচনী পদক্ষেপগুলো নিতে দেখতে চাই এবং আমরা তাদের এটি করতে উৎসাহিত করেছি এবং তা অব্যাহত রাখব।’ সূত্র : দ্য ওয়্যার।