avertisements 2

ক্যান্সারে মারা যাওয়া স্বামীকেও দেখতে যাননি সু চি!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:১৫ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪২ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইং মিন্টসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে দেশটির সেনাবাহিনী। সোমবার ক্ষমতা দখলের পর এক বছরের জন্য সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী।

গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতি করে এনএলডি ক্ষমতায় এসেছে—এমন অভিযোগ করার পর শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে সরকারের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা গ্রহণের’ হুমকি দেয় সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারে ১৯৬২ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর সেনা-শাসন চলেছে ২০১১ সাল পর্যন্ত। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় গৃহবন্দি থেকেই সেনা-শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে এসেছিলেন নেত্রী অং সান সু চি।

১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৫ বছর তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। দেখা করতে পারেননি স্বামী, ছেলেদের সঙ্গে। তারপরও গণতন্ত্রের জন্য তার আপোসহীন লড়াইয়ে গোটা বিশ্বেই আলোড়ন তুলেছিলেন সু চি।

১৯৪৫ সালের ১৯ জুন মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সু চির জন্মগ্রহণ। তার দুই বছর বয়সের সময় খুন হন বাবা।

১৯৮৮ মায়ের দেখাশোনায় মিয়ানমারের ফেরত আসেন সু চি। কয়েক দশক ধরে চলা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন।

১৯৮৯ আন্দোলন গুঁড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী। নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। গৃহবন্দী হন সু চি।

১৯৯১ ইয়াঙ্গুনে নিজ বাড়িতে বন্দী থাকাকালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় সু চির।

১৯৯৯ সালে সু চির স্বামী ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক মাইকেল অ্যারিস ক্যানসারে মারা যান। জান্তা সরকার দেশে ফেরা আটকে দিতে পারে—এমন আশঙ্কায় মৃত স্বামীকে দেখতে মিয়ানমার ছেড়ে যাননি তিনি।

এরপর ২০১০ সালে শেষপর্যন্ত গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি মেলে সু চির।

১০ বছর পেরিয়ে আবারও এক সেনা অভ্যুত্থানে ফের বন্দি হলেন তিনি। সদ্য হয়ে যাওয়া নির্বাচনের ফল নিয়ে বেসামরিক সরকার এবং প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিনের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটেই মিয়ানমারে নতুন এ সামরিক অভ্যুত্থান এবং সু চির আবার বন্দিত্বে ফেরা।

এর আগে সু চি তার মুক্তির পর ২০১২ সালের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হলে মিয়ানমারের সেনা সরকার ক্রমশ গণতান্ত্রিক কাঠামো স্বীকার করতে শুরু করেছিল। এরপর ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় সু চির দল। স্টেট কাউন্সেলরের বিশেষ ভূমিকা পান সু চি।

সু চি ‘র এই জয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। তার জয়কে সবাই প্রত্যক্ষ করেছিল কর্তৃত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জয় হিসাবে। তবে সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য এই একটি নির্বাচনে জয়লাভই যথেষ্ট ছিল না।

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা শুরুর সময় সেনাবাহিনী কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও সংসদের ২৫ শতাংশ আসন সেনার জন্য সংরক্ষিত থেকে গেছে। সু চি’র সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোও থেকে গেছে সেনাদের জন্য সংরক্ষিত। ফলে সুচি ও তার দল এনএলডি –কে একদিকে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা এবং দেশকে আবার সামরিক শাসনের দিকে ঝুঁকতে না দেওয়ার একটি নাজুক অবস্থানে পড়তে হয়েছে।

তাল কেটেছে একবছরের মধ্যেই। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন অত্যাচার চালাতে শুরু করে তখন সু চি’র বলিষ্ঠ কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি। রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করলেও সুচি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যকলাপের ওপর সু চি সরাসরি তেমন কোনও কর্তৃত্ব ছিল না। উপরন্তু প্রকোশ্যে তিনি সামরিক বাহিনীর সাফাই গাওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দিত হন। গণতন্ত্রের প্রচারক হিসাবে সু চি যেসব পদবী অর্জন করেছিলেন তা কেড়ে নেওয়া হয়, বেশ কিছু পুরস্কারও ফিরিয়ে নেয়া হয়। নোবেল কমিটিও নোটিশ জারি করে।

 

 
তবে এতসবকিছুর পরও মিয়ানমারে সু চি ছিলেন বিপুল জনপ্রিয়। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই সু চির সামরিক বাহিনীর সমালোচনায় মুখর না হওয়াকে বেসামরিক শাসন সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় দাওয়াই হিসাবেই দেখেছেন।

কিন্তু সুচি যা কিছু বলেছেন বা করে এসেছেন তা সত্যিকারের বিশ্বাসবশতই হোক বা আপোসের কারণেই হোক, তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি তা-ই স্পষ্ট হল এ সপ্তাহে। মিয়ানমারের গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকাবাহী সু চি আবার সেনাবাহিনীর হাতেই আটক হলেন। সঙ্গে আটক হলেন তার দলের নেতারাও।

মুক্তি লাভের ১০ বছর পর সু চি এখন আবার দৃশ্যত সেইখানেই ফিরে যাচ্ছেন, যেখান থেকে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছিলেন, সেই আটকাবস্থায়। তার ভাগ্য ঝুলে আছে সেনাবাহিনীর খেয়ালখুশির ওপর।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2