কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতের হাসপাতাল, হোটেল ব্যবসা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:৪৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশিদের ভারত ভ্রমণ একেবারেই কমে গেছে। ভিসা জটিলতায় রোগীরা আসতে পারছেন না। পর্যটন ভিসাও দিচ্ছে না ভারত। চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে দেশটির আয়ের অন্যতম খাত দুটিতে। চিকিৎসা ও পর্যটন ঘিরে বেসরকারি উদ্যোগ ধসে পড়তে বসেছে। ফলে তারাই বাংলাদেশ ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
ভারতীয় ভিসা সীমিত করেছে সরকার। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কলকাতা, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি এবং ত্রিপুরার একাধিক চিকিৎসক ও হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগী বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। আবাসিক হোটেলে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদা, বারাসাত ও ত্রিপুরার আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি। ফলে ভিসা পেয়েও থাকার জায়গা সংকটের আশঙ্কায় কেউ ভারতে পা বাড়াচ্ছেন না। এ অবস্থায় কলকাতার একাধিক হাসপাতালে এখন রোগীর আকাল।
চিকিৎসকদের ভাষ্যে, আগস্ট থেকেই কমতে শুরু করে। বর্তমান ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি রোগী কমে গেছে। আগে মাসে গড়ে যেখানে ২৫ হাজার বাংলাদেশি মেডিকেল ভিসা পেতেন, এখন তা ঠেকেছে ৭০০ থেকে এক হাজারে। এদের বেশির ভাগই পুরোনো রোগী।
ভারত সরকারের দাবি, তাদের মেডিকেল ট্যুরিজমে বাংলাদেশিদের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ভারতীয় চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন আইএমএ সম্প্রতি জানিয়েছে, শুধু কলকাতার হাসপাতালে রোগী কমেছে ৩০ থেকে ৩৭ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গের ডা. এন কাঞ্জিলাল ও ডা. কৌশিক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসা নিতে আসাদের ভারতের জাতীয় পতাকা প্রণাম করে প্রবেশ ও রোগী না দেখার ঘোষণা চিকিৎসা নিয়মের পরিপন্থি। দাগি অপরাধীও চিকিৎসকদের কাছে অন্য রোগীর মতো সমান। রোগীর কোনো জাত, ধর্ম ও দেশ হয় না। তবে জানান, ভিসা জটিলতায় তারা বাধ্য হয়ে টেলিমেডিসিন সেবা ও অনেককে আসার জন্য সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।
চিকিৎসকদের দাবি, দু’দেশের মধ্যে অস্থিরতায় রোগীদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন মেডিকেল ব্যবসা। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দুই দেশকে কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত ও মধুর করতে এগিয়ে আসার দাবি জানান দুই চিকিৎসক।
এদিকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বয়কটের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতার বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এবং সরকার বয়কটের সিদ্ধান্ত তুলতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের রোগীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
ভারতের মেডিকেল হাব বলে পরিচিত চেন্নাইয়েও বাংলাদেশি রোগীর সংকট দেখা গেছে। বাংলাদেশি রোগী টানতে সম্প্রতি হাসপাতালগুলো সরকারকে ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করার আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে চেন্নাইয়ের অনেক চিকিৎসক বাংলাদেশে চেম্বার শুরু করেছেন।
কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশি আব্দুল হাই জানান, মেডিকেল ভিসা ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কিডনির যে জটিলতা, তাতে আরও কয়েক মাস থাকা দরকার। ভিসা না পেলে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। বিকল্প হিসেবে স্বজনদের সঙ্গে থাইল্যান্ডে যাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ করেছেন তিনি।
গত পাঁচ দিন ঢাকা ও শিলিগুড়ির মধ্যে বন্ধ বাস চলাচল। যাত্রী না থাকায় কাউন্টার ফাঁকা। ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশি পর্যটকের যেমন আকাল, তেমনি ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত সম্প্রচারে তৈরি হওয়া আতঙ্কে কেউই বাংলাদেশমুখী হতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ।
প্রায় লাটে উঠেছে হোটেল ব্যবসা। সরকারের উদ্দেশে উত্তরবঙ্গের ট্যুরিজমের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, এভাবে আর কত দিন? মূলত চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছাতে পারলে খুলে যায় পর্যটনের দুয়ার। দার্জিলিং, সিকিম, আসাম, বিহার থেকে নেপাল, ভুটান এমনকি চীন সীমান্ত। এ জন্য সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে এ এলাকায়। চাহিদা বিবেচনায় পর্যটক সুবিধার জন্যই চালু হয়েছিল ঢাকা-শিলিগুড়ি সরাসরি ট্রেন ‘মিতালী’ ও বেসরকারি বাস পরিষেবা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ভারতই ট্রেন বন্ধ করে দেয়। এবার পর্যটক সংকটে বন্ধ হলো বাস।
মাল্লাগুড়ি এলাকায় সংশ্লিষ্ট পরিবহন সংস্থার কর্মী শিবপ্রসাদ ঘোষ বললেন, যাত্রী হচ্ছে না। যা দু-একজন আসছেন, বাস চালানো সম্ভব নয়। ভারত সরকার ভিসা দিচ্ছে না। কীভাবে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে? আমাদের দাবি, ভারত সরকার ভিসা দেওয়া শুরু করুক।
সংশ্লিষ্ট পরিবহন সংস্থার ম্যানেজার বাবলু ঘোষ বলেন, দুই মাস ধরেই যাত্রী কম। এখন পাওয়ায় যাচ্ছে না। এ দেশের মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে ভয় তৈরি হয়েছে।
হাসমি চক, মহাত্মা গান্ধী চক, জংশন, মাল্লাগুড়ি, বিধান মার্কেট এলাকার একাধিক হোটেলে এসে বাংলাদেশিরা থাকতেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশিদের যাতায়াত শিলিগুড়িতে একেবারে কমে গেছে। আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারাই ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসছেন। সে ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষ। পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বহু মানুষ এ দেশে আসেন। সংখ্যাটি তলানিতে ঠেকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।