avertisements 2

বিশ্বে খাদ্যসংকট কি চিরস্থায়ী হচ্ছে?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ আগস্ট, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৪৮ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে জুলাইয়ের শেষদিকে বাসমতি ছাড়া অন্য চালের রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক থেকে আসা এ নিষেধাজ্ঞা বিশ্ববাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কারণ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ, বিশেষ করে এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো ভারতীয় চালের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া এ নিষেধাজ্ঞা তাদের অভ্যন্তরীণ চাল রপ্তানির এক-চতুর্থাংশকেও প্রভাবিত করছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে শস্যচুক্তি থেকে রাশিয়ার বের হয়ে যাওয়ার পরপরই, চাল রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা একটি বিস্তৃত খাদ্যসংকট উসকে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরই মধ্যে তাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে ও ক্ষুধার সম্ভাবনা বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত বলছে, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, চরম জলবায়ু, খারাপ আবহাওয়ার (এল নিনো) প্রভাবসহ নানা কারণে তারা চাল রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালে তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে ভারতের গম উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যায়। সেসময় নয়াদিল্লি গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী এ দেশ।

অন্যদিকে শস্যচুক্তি বাতিল হওয়ার পর ইউক্রেন থেকেও গম রপ্তানি এক প্রকার বন্ধ। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দামও ঊর্ধ্বমূখী।

অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম সয়াবিন রপ্তানিকারক ও শীর্ষ ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশ আর্জেন্টিনা ৬০ বছরের মধ্যে খরায় ভুগছে, ফলে এ দুটি শস্যের ফলনও তীব্রভাবে কমে গেছে। সয়াবিন উৎপাদনে শীর্ষ আরেকটি দেশ ব্রাজিলও সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও খরার শিকার হয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে কানাডায় ১৪ বছরের মধ্যে ক্যানোলা তেলের সর্বনিম্ন ফলন হয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম পাম তেল রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেই গত বছর সাময়িকভাবে পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহও কমে গেছে। সব মিলিয়ে ভোজ্যতেলের বাজারেও অস্থিরতা বিদ্যমান।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, চিরস্থায়ী খাদ্যসংকট কি পৃথিবীর স্বাভাবিক অভ্যাসে (নিউ নরমাল) পরিণত হতে চলেছে? বিশ্ব এখন কি করতে পারে?

এক্ষেত্রে আল জাজিরার সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, চরম আবহাওয়া, রপ্তানি রোধ ও ভূরাজনৈতিক ফাটল বিশ্বের খাদ্যনিরাপত্তাকে চিরস্থায়ী ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর একটা সমাধান আছে। অবাধ বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে এমন ফসলের উন্নত জাত আবিষ্কার মানুষকে আসন্ন সংকট মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রথমেই বর্তমান বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটানো তিনটি প্রধান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক...

চাল বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার প্রধান খাদ্য ও প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ৫০০ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি চাল খাওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশে ভারতের অবদান রয়েছে। অন্য বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ হলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) চালের বাজার বিশ্লেষক শার্লি মুস্তাফা বলেন, ভারত বাসমতি ছাড়া অন্য সব চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ কর আরোপ করেছে। অথচ গত দুই বছরে এ ধরনের চাল বিশ্ববাজারে প্রায় ১০ শতাংশ চাহিদা সৃষ্টি করেছে। ভারতের মোট চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশই এ দুই ধরনের চালের ওপর নির্ভরশীল।

তিনি আরও বলেন, এ চাল মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল ও বাংলাদেশসহ নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত। সম্প্রতি ক্যামেরুন, মাদাগাস্কার ও কটে ডি’আইভরির মতো আফ্রিকান দেশগুলো এ ধরনের চালের অন্যতম প্রধান ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

মুস্তাফা বলেন, এ ধরনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, সংকটের ভয়ে বেশি চাল কিনকে চাওয়া দরিদ্র দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

চালের চাহিদা বোঝার জন্য ভারত গত বছর কী করেছিল তা আলোচনা করা যাক। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটি পর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য শুল্কের মাধ্যমে বাসমতি ছাড়া অন্য সাদা চালের আন্তর্জাতিক ক্রয়কে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সে কৌশল ব্যর্থ হয়। কর থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে এ ধরনের চাল রপ্তানি গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন নরেন্দ্র মোদীর দেশটি কিছু চালের রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী দাম বহুগুণে বেড়েছে। এফএও’র সব মূল্য সূচক অনুসারে, চালের দাম গত ১২ বছরের মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জোসেফ গ্লাবার বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে থাই সাদা চালের দাম প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে।

তবে ভারতই একমাত্র দেশ নয়, যেখানে রপ্তানি-নিরোধক ব্যবস্থা রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ খাদ্যনিরাপত্তা আপডেট অনুসারে, মোট ২০টি দেশ তাদের প্রধান খাদ্যপণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে আফগানিস্তান গম, বাংলাদেশ চাল ও ক্যামেরুন উদ্ভিজ্জ তেল এবং খাদ্যশস্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।

অন্যদিকে রাশিয়া এবং উগান্ডা সূর্যমুখী তেল, গম, বার্লি, ভুট্টা ও চালের মতো কিছু পণ্যের ওপর রপ্তানি কর আরোপ করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সামরিক অভিযান’ শুরু হওয়ার পর থেকে বাণিজ্য-সীমাবদ্ধ করার নীতিগুলোর প্রয়োগ বিশেষভাবে বেড়েছে।

ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা

জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক মতিন কাইম বলেন, করোনা মহামারির কারণে এমনিতেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর ওপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাজারকে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বাধিক অস্থির করে তুলেছে। এফএও’র সূচক অনুসারে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়, যা গত প্রায় এক দশকে দেখা যায়নি।

যুদ্ধের আগে রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী গমের রপ্তানির ৩৪ শতাংশ, বার্লির ২৭ শতাংশ, ভুট্টার ১৭ শতাংশ ও সূর্যমুখী তেলের ৫৫ শতাংশ পূরণ করতো। বিশেষ করে কিছু কিছু দেশ দুটি বৃহৎ রপ্তানিকারকের ওপর অনেক বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য তাদের খাদ্যপণ্য সরবরাহের ৫০ শতাংশই পেতো রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।

যুদ্ধ চলাকালে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সামরিক অবরোধের ফলে গত বছরের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ইউক্রেনের রপ্তানি এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কিয়েভের সঙ্গে যুগান্তকারী শস্যচুক্তি করে মস্কো। এ চুক্তির পরে ২০২২ সালের জুলাই ও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ইউক্রেন থেকে ৩ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা, গম ও অন্য শস্য রপ্তানি হয়।

কিন্তু গত ১৭ জুলাই রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন না করায় ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি আবারও হুমকির মধ্যে পড়ে। এমনকি সম্ভাব্যভাবে ইউক্রেনের পরিকল্পিত ৪ কোটি ৫০ লাখ টন শস্য রপ্তানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

অধ্যাপক মতিন কাইম বলেন, আমি উদ্বিগ্ন যে গত দুই দশকে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়ে আসছে, তা কিছুটা থেমেছে। আমরা এখন দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছি। এমন চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও সব ধরনের অপুষ্টি অবসানের যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য রয়েছে, তা অর্জিত হবে না।

এফএও’র ২০২৩ সালের স্টেট অব ফুড ইনসিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ বা ৬৯ কোটি ১০ লাখ থেকে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

কানাডা ও ইউরোপে দাবানল, দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব আফ্রিকায় খরা, চীনে বন্যা ও ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক অংশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যসংকট আরও বেড়েছে।

প্রতিকূল জলবায়ু

২০২২ সালে পাকিস্তানের বিশাল অংশজুড়ে বিধ্বংসী বন্যার কারণে প্রায় চেক প্রজাতন্ত্রের আয়তনের সমান কৃষিজমি প্লাবিত হয়। ওই বন্যায় দেশটির ৮০ শতাংশেরও বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও চরম খাদ্যসংকটে তৈরি করে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও স্পেন, যারা চলতি বছর অভূতপূর্ব খরার সম্মুখীন হয়েছে।

এমন সময় অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, এ বছর তাদের গমের ফলনে নাটকীয় হ্রাস ঘটতে চলেছে। এল নিনোর প্রভাবে এ বছর বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক দেশটির গমের উৎপাদন ৩৪ শতাংশ হ্রাস পেতে চলেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পর্কিত কৃষি-শিল্প বিশ্লেষণ সংস্থা গ্রো ইন্টেলিজেন্সের মতে, উচ্চ তাপমাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টার ফলনের পাশাপাশি ইউরোপ ও কানাডায় গমের উৎপাদনকেও প্রভাবিত করছে।

কেনিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া, হাইতি, চিলি ও বলিভিয়ায়ও এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফসলের ফলন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের একটি অংশে উৎপাদন হ্রাস, তাত্ত্বিকভাবে অন্যান্য দেশে বাম্পার ফলন দ্বারা ক্ষতিপূরণ করা যেতে পারে।

নয়াদিল্লির অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ভরত রামস্বামী আল জাজিরাকে বলেন, আবহাওয়া চরমভাবে ফসলের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে, কিন্তু এ প্রভাব সারাবিশ্বে এক নয়। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের খুব বেশি পরিবর্তন ঘটে না। একটি বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা এ ধরনের ঘাটতি মোকাবিলা করতে পারে, কারণ অধিকাংশ দেশের মধ্যে যথেষ্ট সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রয়েছে ও আমরা খাদ্যকে অবাধে চলাচলের অনুমতি দিই।

তিনি আরও বলেন, খরার কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ এশিয়ার কিছু দেশে গম ও ভুট্টার ফলন কম হলেও একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় গমের বাম্পার ফলন হয়েছিল।

সংকট ‍উত্তরণে কী প্রয়োজন?

অধ্যাপক ভরত রামস্বামী বলেন, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও ফলন হ্রাস উভয় চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করা যেতে পারে, যা দরকার তা হলো একটি যুগোপযোগী বৈশ্বিক কৌশল। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো নানা সংকট দেখা দিলেও খাদ্যের মজুত কিন্তু কয়েক বছর ধরে একই স্তরে রয়েছে। এমনকি চলতি বছরের জুনে এফএও’র সর্বশেষ পূর্বাভাস প্রকৃতপক্ষে মৌলিক কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও মজুত বৃদ্ধি দেখিয়েছে।

তার মতে, এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোকে আশ্বস্ত করার জন্য রপ্তানিকারকদের একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাদের ভাবা উচিত যে, আমরা নিজেদের ইচ্ছামতো সরবরাহ বন্ধ করবো না ও দরিদ্র দেশগুলোর স্বার্থ বিসর্জন দেবো না। এটি বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করবে।

একই সময়ে অধ্যাপক মতিন কাইম বলছেন, ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে ও দেশগুলোকে অবশ্যই আরও অধিক স্থিতিস্থাপক শস্যবীজ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের এখন এমন ফসল উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে, যা চরম আবহাওয়ায়ও টিকে থাকবে ও আশানুরূপ ফলন দেবে। অর্থাৎ দেশগুলোকে কৃষিতে গবেষণা ও প্রযুক্তিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আসন্ন খাদ্যসংকট এড়ানো যেতে পারে।

আল জাজিরা বলছে, বর্তমানে ‘জোয়ার’ বা ‘বাজরা’র মতো চরম আবহাওয়া সহ্য করে টিকে থাকা ফসলের চাষ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বাজরা একসময় আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক অংশের প্রধান খাদ্য ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ গোত্রের খাদ্যশস্য রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘ ২০২৩ কে ‘আন্তর্জাতিক বাজরা বছর’ হিসেবে মনোনীত করেছে। প্রাচীন এ শস্যের পুষ্টি (প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে সমৃদ্ধ) ও জলবায়ুবান্ধব বৈশিষ্ট্যগুলোর ওরপ জোর দিয়ে প্রচারও চালানো হচ্ছে।

এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা ধান, গম, ভুট্টা ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ ফসলের খরা সহনশীল জাত উদ্ভাবনে কাজ শুরু করছেন। এগুলো যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত শস্যের জাতগুলোর বিকল্প হয়ে উঠবে এমন নয়, তবে তারা একটি সম্ভাব্য ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2