হাজার হাজার মানুষের রক্ত ঝরিয়ে হাত মেলাল সিরিয়া-সৌদি আরব
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৩৫ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
গত এক দশকে হাজার হাজার মানুষের রক্ত ঝড়েছে সিরিয়ায়। ধ্বংস হয়ে গেছে দেশটি অংশকাংশ অবকাঠামো। বাস্তু হারা লাখ লাখ মানুষ। এতিম ও বিধবা হয়েছে অংশ নারী ও শিশু। পুঙ্গত বরণ করেছে লাখ লাখ যুবক।
টানা চলা এই যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচের অর্থনীতি রুগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হলো অনেক মানুষের রক্ত ঝড়িয়ে অবশেষে থাকলো রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধ। বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সম্প্রীতির বন্ধন।
জানা যায়, সিরিয়ার দশকব্যাপী আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার অবসানে দেশটিতে সফরে গেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। ওই অঞ্চলে ব্যাপক সম্প্রীতির সময়ে মঙ্গলবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদ।
এর আগে ২০১১ সালে বিক্ষোভকারীদের ওপর আসাদ নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর দেশটিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলে। এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। দেশটি কিছু অংশ বিদ্রোহীদের বিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে যুদ্ধ চলছে।
তবে এই সহিংসতার জেরে আরব বিশ্বের দেশগুলো সিরিয়ার সাথে প্রায় সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। সম্পর্ক ছিন্নের পর আরব বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ সৌদি আরবের শীর্ষ কোনও কূটনীতিক প্রথমবারের মতো দামেস্ক সফর করছেন। তবে আশা করা হচ্ছে এই সফরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের ইতি ঘটবে।
এদিকে সিরিয়া অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে সিরিয়া সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে; যা সিরিয়ার আরব পরিচয় রক্ষা এবং ‘দেশটিকে আরব পরিবেশে’ ফিরিয়ে দেবে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেছেন, সৌদি আরবের উন্মুক্ত ও বাস্তবসম্মত নীতি এই অঞ্চলের জন্য উপকার বয়ে আনছে।
বিবৃতিতে আগামী মাসে রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। গত শুক্রবার আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মিসর, ইরাক ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সৌদি আরবে এক বৈঠকে সিরিয়ার সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন। যদিও এই বিষয়ে তারা কোনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি।
২০১১ সালের সহিংসতার সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের পর আরব লীগে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। সৌদি আরব-সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় রাষ্ট্র বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিতে শুরু করে।
সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার প্রধান মিত্র ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় সিরিয়ার অনেক অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান। গত কয়েক মাস ধরে সৌদি আরব বলেছে, বাশারকে বিচ্ছিন্ন করে কোনও কাজ হচ্ছে না।
উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে রাজি হয়েছে। এর আগে একাধিক সূত্র রয়টার্সকে বলেছিল, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিন ফারহান প্রেসিডেন্ট আসাদকে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে দামেস্কে যাবেন।
যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কিছু দেশ দামেস্কের সাথে সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক করেছে। তবে কাতার এবং অন্য কয়েকটি দেশ সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সিরিয়াকে আরব লীগে ফিরিয়ে আনার বিরোধিতা করছে।