avertisements 2

ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতারণার ফাঁদে এমপি-ডিআইজি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪৯ এএম, ১৫ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৫

Text

শুরুতে ছিলেন লেগুনার চালক। কিছু সময় পার করেছন ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে। এখন তিনি কোটিপতি। এতে সময় লেগেছে ১০ বছর। একসময় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সেই সময়কার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের সম্পত্তির কেয়ারটেকার পরিচয় দিতেন। এখন তিনি ব্যবসায়ী। আর এই ব্যবসা হচ্ছে প্রতারণার ব্যবসা। তিনি ব্যবসার ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন, সংসদ সদস্য, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), পুলিশ সুপার, ট্রাফিক সার্জেন্টসহ সরকারি কর্মকর্তাদের। এমন একজন প্রতারক হচ্ছেন জাকির হোসেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে গাড়ি ব্যবসার ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন । ২০০৮ সালে ঢাকায় এসে গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর  শুরু করেন লেগুনা চালানো। লেগুনা চালানোর পর তিনি একটি গাড়ি কেনেন। ধীরে ধীরে দশ বছরের মাথায় হয়েছেন বিপুল অর্থের মালিক। কুমিল্লায় রয়েছে তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি। ঢাকায় কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট। একশ’ গাড়ি নিয়ে শুরু করেন রেন্ট এ কারের ব্যবসা। বন্দর থেকে অল্প দামে গাড়ি ক্রয় করে দেয়ার নাম করে প্রথমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। এরপর সেই গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর কথা বলে মালিকের সঙ্গে চুক্তি করতেন ও গাড়ি নিজের কাছে রেখে দিতেন।

এভাবে প্রতারণা করে তিনশ’ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংসদ সদস্য (এমপি) ছাড়াও রয়েছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সম্পদের মালিক হওয়ার পর তিনি কুমিল্লার স্থানীয় পর্যায়ে যুবলীগের পদ বাগিয়ে নেন। 
এক পর্যায়ে তিনি কুমিল্লার মেঘনার মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানা এলাকা থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জাকির বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়ি কিনতে পুরো টাকা নিলেও সেটি ডাউন পেমেন্টে কিনতেন। ভাড়ায় খাটানোর কথা বলে চুক্তির পর কয়েক মাস ঠিকমতো অর্থ পরিশোধ করতেন তিনি। তবে কয়েক মাস পর থেকে তিনি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিতেন। তার  প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এভাবে অনেকেই ভুক্তভোগী হয়েছেন। ঢাকার মুগদা থানার একটি মামলার সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মেঘনা থেকে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা ও সুলভমূল্যে গাড়ি কেনাবেচার নামে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারকচক্রের মূলহোতা জাকিরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের সদস্যরা।

একাধিক গাড়ি এভাবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভুয়া নথি দেখিয়ে চুক্তি করতেন তিনি। এমনকি একই নিবন্ধিত নম্বরের গাড়ি জাল নথির মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন।  হারুন-অর রশীদ বলেন, কুমিল্লায় জাকিরের সঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই কর্মকর্তা তাকে একটি গাড়ি কিনে ভাড়া দেন।  ধীরে ধীরে তার সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পরিচয় হয়। এই সখ্যের সূত্র ধরেই অল্প দামে গাড়ি কিনে ভাড়ায় খাটানোর প্রলোভনের ফাঁদে পা দেন অনেকেই। তাদের একটি বড় অংশ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া ৩ জন এমপিও কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে এভাবে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন জাকির। কুমিল্লায় ৩তলা বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জমি কিনেছেন। ঢাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে। সম্পদের মালিক হওয়ার পর তিনি কুমিল্লায় স্থানীয় পর্যায়ে যুবলীগের পদ বাগিয়ে নেন। একপর্যায়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জাকির চেয়ারম্যান প্রতারিত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে ডাউন পেমেন্ট গাড়ি কিনতো। আবার ব্যাংক থেকে গাড়ির বিপরীতে কাস্টমারকে না জানিয়ে ব্যাংক লোন সুবিধা নিতো। দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০০ ভুক্তভোগীর সঙ্গে সে এমন প্রতারণা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2