রিজার্ভ আসলে কত?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫১ পিএম, ১১ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২৫

উন্নয়নশীল দেশে আমদানি-রফতানির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় একশ ভাগ শিক্ষিতের আমদানিনির্ভর দেশ শ্রীলংকাকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল। বাংলাদেশও আমদানিনির্ভর। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে রিজার্ভের ঊর্ধ্বগতির সুখবর নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে গণমাধ্যমে। প্রবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স আর পোশাক রফতারিতে আসা ডলারের হিসেবে প্রতিদিন ফলাও করে প্রচার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীলদের হাবভাব দেশের রিজার্ভের পরিমাণ পাহাড়ের চ‚ড়া স্পর্শ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার এবং তা ৫০ বিলিয়ন ছুঁতে যাচ্ছে প্রচার করা হয়। দায়িত্বশীল মন্ত্রী, আমলাদের রিজার্ভ নিয়ে আহ্লাদের শেষ নেই। কিন্তু আইএমএফের ঋণের আবেদন করার পর রিজার্ভের বিষয়টি কাজীর গরু কেতাবের হিসেবের বদলে গোয়ালে দেখা শুরু হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেখানো হয় ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু আইএমএফের প্রতিনিধিরা ঢাকা এসে নেট রিজার্ভের পরিমাণ জানতে চান। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, গ্রস রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের কয়েকটি ফান্ডে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আছে। সেখান থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে নেট রিজার্ভ চলে আসবে ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রশ্ন হচ্ছেÑ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ কত?
জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য সম্প্রতি বলেন, রিজার্ভের পরিমাণ যা বলা হচ্ছে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদ সঙ্কেত। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। আরো পড়বে। একইসঙ্গে এটি টাকার বিনিময় মূল্যকে আরো দুর্বল করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত রিজার্ভ কত তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ দেশের কিছু প্রতিষ্ঠানের ভুল তথ্য দেয়ার বাতিক রয়েছে। ফলে তাদের দেয়া সব তথ্য বিশ্বাস যোগ্যতা পায় না। পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন হিসেবে এমনকি আদমশুমারীর দেয়া জনসংখ্যার হিসেবে মানুষ বিশ্বাস রাখতে পারে না। প্রতিষ্ঠান প্রকৃত তথ্য লুকিয়ে রেখে মনগড়া তথ্য দেয়ার নজির রয়েছে। এদিকে এতোদিন মানুষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেয়া তথ্যে ৪৮ বিলিয়ন, ৫০ বিলিয়ন রিজার্ভের গল্প শুনেছে। কিন্তু এখন শুনছে ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের গল্প। কেউ কেউ বলছেন, আইএমএফের চাপে যে হিসেব দেখানো হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সে পরিমাণ ডলার জমা রয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। অথচ কোনো কিছুর পরিকল্পনা করতে গেলে প্রকৃত তথ্য জানা অপরিহার্য। প্রকৃত তথ্য, পরিসংখ্যান লুকিয়ে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভের প্রকৃত চিত্র জানানো উচিত।
বছর খানেক ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে এখন সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) মানদÐ বিবেচনায় এ অঙ্ক দাঁড়াবে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার (২৬ বিলিয়ন ডলার)। অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ জমা রাখতে হয়। গত অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে আমদানিতে খরচ হয়েছে ৮৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার (৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন)।
আর গত নভেম্বরে পণ্য আমদানিতে খরচ হয়েছে ৭৮৫ কোটি ৪৬ লাখ (৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন) ডলার। নভেম্বরের হিসেবে আগামী তিন মাসে ব্যয় হবে প্রায় ২৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও সরকার এখন বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমদানিতে লাগাম টেনেছে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারি খরচে বিদেশভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও আমদানিতে লাগাম টেনে সরকার প্রতিমাসে ৭ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ব্যয় রাখতে পারবে।