avertisements 2

ইসলামী ব্যাংকিং বলতে কিছু নেই ?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ আগস্ট,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ১১ মার্চ,সোমবার,২০২৪

Text

অগ্রণী ব্যাংককে গুডবাই বলে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম যেটি পাঠকদের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষন করেছে এবং প্রচুর মন্তব্য বা কমেন্ট করেছেন পাঠকগণ। ইসলামী ব্যাংকিংকেও কেউ তুলাধোনা করার চেষ্টা করেছেন ,সুদ আর লাভ একই কথা, ইসলামী ব্যাংক সুদী ব্যাংকের চেয়েও খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু কিছু কমেন্টে কৌতুক অনুভব করেছি , কোথাও অবাক হয়েছি। এ বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে একটি রেসপন্স দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি। প্রায় দেড় শতাধিক কমেন্টে পৃথক পৃথক রেসপন্স দেয়ার মত সময় আমার হাতে নেই।

প্রথমেই আমি পাঠকদের ধন্যবাদ দিচ্ছি লেখাটি পড়ার জন্য এবং সময় ব্যয় করে কমেন্ট করার জন্য। কমেন্টগুলোকে নিম্নরূপ ভাগ করা যায় :


 
১) ইসলামী ব্যাংকিং বলতে কিছু নেই; ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কাজ করে শুধু ইসলামের লেবেল লাগিয়ে নিয়েছে।

২) ইসলামী ব্যাংকের লোকেরাই কি শুধু জান্নাতে যাবে এবং বাকিরা সব জাহান্নামে যাবে ?

৩) ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের লোকসানের ভাগ নেয় না , সুতরাং এটা ইসলামী ব্যাংকের নামে প্রতারনা।


 
৪) ইসলামী ব্যাংকিং বাস্তবে কোনো ক্রয় বিক্রয় করে না শুধু ভুয়া ভাউচার করে ইত্যাদি।

এর বাইরে আরও কিছু কমেন্ট রয়েছে সেগুলোর ভাব ভাষা আলোচনায় আনা দরকার নেই। এগুলো যারা করেছেন তাদের শিক্ষা , পারিবারিক পরিবেশ ও রুচিবোধের প্রমান রেখেছেন ওগুলোর বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই।

প্রথমেই বলতে হয় যে , লেখাটি আমার একটি স্মৃতিচারণমুলক লেখা। আমি মাঝে মধ্যে ব্যাংকিং এ আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি যাতে এখনকার কর্মরত ব্যাংকারদের যদি কোনো কাজে লাগে। অগ্রণী ব্যাংকে আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ ক’টি লেখা দিয়েছিলাম । এ লেখাটিতে অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রায় চার দশক আগে কিভাবে এবং কোন অনুভুতি নিয়ে আমি সুইচওভার করেছিলাম সেটার একটি বর্ণনা ছিল। এখানে আমি জান্নাত বা জাহান্নামের কোনো শব্দও উল্লেখ করিনি শুধু সুদ সম্পর্কে দু’জন মুরব্বীর কথা উল্লেখ করেছিলাম যেটি আমাকে সুইচওভার করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। যারা জান্নাত জাহান্নামের কথা নিয়ে এসেছেন তাদের নিজেদের হীনস্মন্যতা অথবা কোনো অপরাধ বোধ থেকেই তারা তা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রথম মন্তব্যটির জবার দেয়ার প্রয়োজন নেই , কেননা এ প্রশ্নটি অতি পুরানো এবং ইসলামী ব্যাংক এর জবাব দিয়ে অনেক বই পুস্তক প্রকাশ করেছে , এখানেও অনেকে এটির জবাব দিয়েছেন। সব চেয়ে বড় কথা ‘ব্যসসা তো সুদের মতই’ এ মন্তব্য দেড় হাজার বছর আগেও এক শ্রেণীর লোক করতো বলে আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে উল্লেখ করেছেন। জান্নাতে কে যাবে আর কে যাবে না এটি আল্লাহই ভাল জানেন কেননা তিনিই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। কনভেনশনাল ব্যাংকের অনেক মানুষকে আমি জানি যাদের সততা , সরলতা এবং আল্লাহর প্রতি ভয় , ভালবাসা এবং তাদের ইবাদত বন্দেগী ঈর্ষনীয়। সুতরাং তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেয়ার মত হঠকারী কথা বলা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব ?

ইসলামী ব্যাংক লোকসানের ভাগ নেয় না , সুতরাং এটা প্রতারণা। এটি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উপর একটি অজ্ঞতাপ্রসুত মন্তব্য। ব্যাংকের মোদারাবা ডিপোজিটরদের সাথে যে ভাবে ইনকাম রেসিও ভাগ করার চুক্তি করা হয় সেভাবেই লাভের অংশ ভাগ করা হয়। এখন বিনিয়োগ করার সময় যদি বাই মোয়জ্জল বা মোরাবাহা চুক্তিতে ক্রয় বিক্রয় হয় সেখানে লোকসানের ভাগ বহন করার তো প্রশ্নই আসে না। যদি মোশারাকা চুক্তিতে ব্যবসা হয় , সেখানে লোকসানের প্রশ্ন আসে। কিন্তু মোশারাকা ব্যবসা করার জন্য ব্যাংক তো বাধ্য না। মোশারাকা যেমন হালাল , মোরাবাহা বা বাই মোয়াজ্জল চুক্তিতে ব্যবসা করাও শরীয়াতের দৃষ্টিতে তেমন হালাল। ইসলামী ব্যাংকগুলো সেটা করছে এতে সমস্যা কোথায় ? আমরা আইবিবিএল এ মোশারাকা চুক্তিতে দু’একটি ব্যবসা করেছি এবং যেখানে লোকসান হয়েছে সেখানে তা বহন করেছি। কিন্তু এরকম গ্রাহক কোথায় যে তার সাথে মোশারাকা ব্যবসা করা যায় ? এরপর থাকে ব্যাংক ক্রয়বিক্রয় করে না ; শুধু ভাউচার করে। হ্যাঁ , এ অভিযোগটির হয়তো কিছু সত্যতা আছে এবং তা শুধু লোকাল পার্চেজ এর বেলায়। কিন্তু আমদানী , রফ্তানী কিংবা হায়ার পার্চেজ এর ক্ষেত্রে এটি মোটেই সম্ভব নয়। এখন ইসলামী ব্যাংকে কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিও তো ঢুকে গেছে যাদের কাছে লাভটাই মুখ্য। তারা শরীয়াহর বিধানকে কেয়ার করতে চায় না। মদীনাতে একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা হলে সাদ বিন রবী যেমন ইসলাম গ্রহন করেছিলেন ; তেমনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা কপটাচারী বা মুনাফিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এখন দু’জনকেই এক পাল্লায় মাপা ঠিক হবে নাকি পুরো সমাজকেই মুনাফিক বলা যাবে ? আবার কিছু কিছু ভুল হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের অভাবে। এতে পুরো ইসলামী ব্যাংকিংকেই বাতিল করে দেয়া কি এর উপর সুবিচার করা হয় ?

সবশেষে আমার কথা হলো , আপনি যদি মনে করেন ইসলামী ব্যাংকিং বলতে কিছু নেই বা কনভেনশনাল ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক একই , তো আপনাকে তো কেউ বাধ্য করছেনা ইসলামী ব্যাংকে আসতে। আপনি আপনার জায়গায় থাকুন। আমি যদি মনে করি ইসলামী ব্যাংক যা করছে সেটি সঠিক এবং এটিই সুপেরিয়র সিস্টেম আমার চিন্তা ও বিশ্বাসকে আপনি কটাক্ষ করবেন কেন ? অন্যের চিন্তা ও বিশ্বাসকে সম্মান করতে পারলে আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসও সম্মান পাবে এটিই সুস্থ মানসিকতার পরিচয়।

ধন্যবাদ সকলকে। আল্লাহ এই অতিমারীর সময়ে সকল ব্যাংকার ভাইদের নিরাপদ রাখুন ; আমাদের সবাইকে নিরাপদ রাখুন, সুস্থ রাখুন এবং ভাল রাখুন !

লেখকঃ
নূরুল ইসলাম খলিফা
সাবেক ডিএমডি
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2