avertisements 2

শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বৃদ্ধি: রপ্তানিতে বড় ধাক্কার শঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৫ | আপডেট: ০৮:০৯ পিএম, ১৩ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৫

Text

ছবি: সংগৃহীত  

ভ্যাট-ট্যাক্স ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা আসবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের রপ্তানি খাত ধারাবাহিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত কয়েক বছরের ধাক্কা এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এর মধ্যে নতুন করে ভ্যাট-ট্যাক্স ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এ খাতকে আরও চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি তাদের আহ্বান, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, যে হারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বহন করা উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হবে। শিল্পের জন্য এটা সহনীয় হবে না। উদ্যোক্তারা বলছেন, বৈশি^ক মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবারও বিশ^ অর্থনীতি বিপর্যস্ত করে দেয়, যার ধাক্কা বাংলাদেশকেও সইতে হয়েছে। এরপর জুলাই বিপ্লবের ধাক্কা আসে রপ্তানি খাতে। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এখনও সময়ের

প্রয়োজন। উদ্যোক্তারা এখনও প্রস্তুত হতে পারেননি। এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা। বলছেন, এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। রপ্তানি খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা প্রয়োজন। এরই মধ্যে যখন রপ্তানি খাত ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় ভ্যাট-ট্যাক্স ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা দেওয়াটা ঠিক হবে না।

জানা গেছে, গেল কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে রপ্তানি খাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদনসহ সার্বিক রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে শ্রম অসন্তোষ শুরু হয় সরকার পরিবর্তনের পরপরই। আশুলিয়া, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে চলতে থাকে শ্রম অসন্তোষ। এমন অবস্থার মধ্যেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। একক মাসের হিসাবে ডিসেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে কম হারে বাড়ে রপ্তানি আয়। তবে গত তিন মাসে রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি এসেছে। এ সুবাদেই ছয় মাসের গড় রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও ভালো। এই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি বাড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। আগস্টে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে হয় ২১ শতাংশ। নভেম্বরে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ডিসেম্বরে রপ্তানি বাড়ে ১৮ শতাংশ।

ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪৬৩ কোটি ডলারের, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট রপ্তানির পরিমাণ ২?হাজার ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার।

তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ, টানা পাঁচ মাসের শ্রম অসন্তোষের মধ্যেও পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ২২৩ কোটি ডলার বা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

বিশ^ব্যাংকের ঢাকা আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ শিল্পের ওপর একটার পর একটা আঘাত আসছে। এর মধ্যেও তারা রপ্তানিতে ভালো করছেন। গ্যাসের চাপ থাকলে পণ্য উৎপাদন সাধারণত ব্যাহত হয় না। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ থাকে না। ফলে অনেক সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। এর প্রভাব পড়ে রপ্তানিতে। তিনি বলেন, যে হারে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বহন করা উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হবে।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা অযৌক্তিক। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই বিগত সরকারের মতো চাপিয়ে দেওয়াটা এই সরকারের কাছে কাম্য নয়। বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস আছে, তারা শিল্পের ক্ষতি হোক- এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সময় পার করছে। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। এ শিল্পকে নিতে হবে। তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে। বেকারত্ব কমবে। তিনি বলেন, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেবল চাপিয়ে দেওয়া হবে। এতে রপ্তানিমুখী শিল্প হুমকির মুখে পড়বে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্প। এখন এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার সময়। উদ্যোক্তারা শিল্প বাঁচাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। এমন সিদ্ধান্ত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ চেম্বারের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, দেশে বর্তমানে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে। ঋণের উচ্চ সুদ হার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন কমে গেছে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। চাহিদামতো এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না, বেসরকারি খাতে ক্রেডিট গ্রোথ ৭.৬৬ শতাংশ। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর/মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, জুলাই আন্দোলনের প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। বাড়তি দামে গ্যাস কেনার মতো অবস্থা উদ্যোক্তাদের এখনও তৈরি হয়নি। এই চাপ নেওয়ার মতো অবস্থা তাদের আছে কি না, তা বোঝা উচিত। গ্যাসের দাম বাড়লে উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। এ ছাড়া নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে না বরং বেকারত্ব বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্সের পরিধি বাড়ানো দরকার। অনেকে এখনও এই জালের বাইরে রয়ে গেছে। ট্যাক্সের জাল না বাড়িয়ে যারা ট্যাক্স দেন, তাদের ওপর বাড়তি কর চাপানো উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2