avertisements 2

সিন্ডিকেটের ফাঁদে বেড়েছে ডিমের দাম, স্বস্তি নেই পেঁয়াজে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ মে,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:৫৪ পিএম, ১০ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে দেড়শ’ ছাড়িয়েছে ডিমের ডজন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সরবরাহ সংকটে ডিমের বাজারে অস্থিরতা চলছে। এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হিমাগারে ডিম অবৈধভাবে মজুদ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানির সুযোগ সত্ত্বেও লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির ঝুঁকি নিতে চায় না ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ডলারের বাড়তি দাম আমদানিকে অনুৎসাহী করছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়েই রাজধানীর বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ডিমের দাম। সর্বশেষ রোববার প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি ১শ’ পিস ডিমে ২শ’ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকার ওপর, যা বাজারভেদে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২.৫০ টাকা থেকে ১৩ টাকা দরে। অথচ চলতি মাসের শুরুতে খুচরা বাজারে প্রতিপিস ডিম বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা এবং গত সোমবার বিক্রি হয়েছে ১০.৫০ টাকা রেটে।

খামারিরা জানান, গরমের প্রভাবে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের ক্ষতি না হলেও প্রান্তিক খামারিদের লোকসান বেড়েছে, মূলত ডিম নষ্ট হওয়ার কারণে গত মাসজুড়েই খামারিরা কম দামেই কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের কাছে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে বাজারে ডিমের সরবরাহ এবং দাম এখন তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। এতেই বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ খামারিদের।
প্রবাসী আয় ৮১ কোটি ডলার এলো ১০ দিনে

এদিকে খামারিরা প্রতি পিস ডিম ৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করলেও বাজারে ভোক্তার ব্যয় ১৩ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী ডিমের সরবরাহ বাড়িয়ে-কমিয়ে সিন্ডিকেট চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিমাগারে অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার প্রায় অর্ধকোটি ডিমের অবৈধ মজুতের সন্ধান পেয়েছে। যার মধ্যে একটি হিমাগারে পাওয়া গেছে প্রায় ২৮ লাখ ডিম। এভাবে দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য হিমাগারে ডিমের মজুদ বাড়িয়ে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু চক্র এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজার দর নির্ধারণ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, রাজধানীর বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় তেজগাঁওয়ের আড়তদারদেরে মাধ্যমে। মজুদদারদের সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করে বিভিন্ন বাজারে এসএমএস করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কর্পোরেট খামারিরাও। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ কমিয়ে বাজার পরিস্থিতি জটিল করে তোলেন। যদি তারা সরবরাহ বাড়াতেন তাহলে হিমাগার মালিকদের সিন্ডিকেট খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারতেন না। কিন্তু তারা না করে তারাও সুযোগ বুঝে বাজারে ডিম সরবরাহ করছে।

এদিকে গত এক মাস ধরে তীব্র দাবদাহে পোল্ট্রি পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশেষ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে প্রান্তিক খামারিরা। গরমে মুরগির মৃত্যু ও অসুস্থতার হার বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। এ ছাড়া ডিম নষ্ট হওয়ার ভয়ে দ্রুত বাজারে ছাড়তে বাধ্য হন। ফলে ডিমের দাম কমে ডজন ১১৫ টাকায় নেমে আসে। চাহিদার তুলনায় বাজারে বেশি দাম থাকায় হিমাগার মালিকরা এই ডিম সংগ্রহ করলে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার যায়যায়দিনকে বলেন, দিনে প্রায় ৪ কোটি ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি। তাই উৎপাদনে দেশে কোনো সংকট নেই। মূলত রাজধানীর একটি বাজার থেকেই সারাদেশের পাইকারি ও খামারিদের ডিমের বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত হয়। যখন দাম বেশি থাকে তখন মজুদকারীরা ডিমের সংগ্রহ কমিয়ে দেন এবং নিজের মজুদ ডিম বাজারে ছাড়েন। একইভাবে সরবরাহ বাড়িয়ে ডিমের দাম কমিয়ে দিয়ে কম দামে খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। এভাবে এই চক্র সারাবছর বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সুমন হাওলাদারের দাবি, সরকার যেন খামারিদের কাছ থেকে ডিমের ক্রয়ে মূল্য উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে দেন। তাহলে এই সিন্ডিকেটের প্রভাবে কিছুটা হলেও কমবে। দেখা গেছে, উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা হলে এপ্রিলজুড়ে ৭ টাকা দরে খামারিরা ডিম বিক্রি করেছেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তরের যে পার্ট, তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। হঠাৎ দাম কমিয়ে ডিম মজুত করায় নরসিংদীর এক হিমাগার থেকে ২০ লাখ পিস ডিম উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের এগারোসিন্ধুর হিমাগার থেকেও ২৮ লাখ ডিম উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া বাজারে ভুট্টার দাম কমেছে। তারপরও কেন পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়তি তা দেখা হচ্ছে’।

এদিকে দেশের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না পেঁয়াজের দামে। প্রতিদিনই বেড়েছে চলছে অতি প্রয়োজনীয় এই মসলা পণ্যের দাম। সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বরং গত দু-সপ্তাহে প্রায় ২৫ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।

রোববার রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে ৭৫ টাকা দরে। অথচ দেশে এখন হালি পেঁয়াজের সরবরাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি অনুমতি পাওয়া গেলেও কি পরিমাণ পেঁয়াজ আনা হবে তা এখন অনিশ্চিত। দেখা গেছে, এখন দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো রয়েছে। তাই বর্তমান দামে পেঁয়াজ আমদানি করে সে অনুযায়ী বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ সরবরাহ আরও বাড়ালে দাম কমে যেতে পারে। তখন বেশি দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে হতে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে হারে ডলারের দাম বাড়ছে তাতে আগামীতে পেঁয়াজসহ যে কোনো আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের বাজারে সংকট আরও বাড়বে। এখন লোকসানের ভয়ে যদি পেঁয়াজ আমদানি না করা হয় তাহলে বিদ্যমান দাম আরও বাড়তে থাককে। হয়তো দাম ১শ’ ছাড়িয়ে গেলে তখন ব্যবসায়ীরা আমদানিতে উৎসাহী হতে পারেন। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2