খেয়া ঘাটের রুটি বিক্রেতা আলাউদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক!
খেয়া ঘাটের রুটি বিক্রেতা আলাউদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৪৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
খেয়াঘাটে আটার রুটি তৈরি ও বিক্রি করা থেকে থেকে ভেদুরিয়া ঘাট নিয়ন্ত্রক আলাউদ্দিনের শত কোটি টাকার মালিক হওয়া এখন ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছে। ভোলা-বরিশাল রুটের ভেদুরিয়া ঘাটে দীর্ঘ দিনের রাজত্ব কায়েম করা আলাউদ্দিনের অবৈধ কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার বিক্ষোভ করেছেন ওই ঘাটের লঞ্চ, স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিকসহ দোকানিরা।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সভা সমাবেশ বন্ধ থাকলেও তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হন বলে জানান স্পিডবোট মালিক সমিতির সম্পাদক ইকরামুল হোসেন ডালিম।
সম্প্রতি ইয়াবা খাওয়ার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনার তুঙ্গে। বের হতে শুরু করে তার নানা অবৈধ কার্যক্রমের খবর।
স্থানীয় এক নেতার নাম ভাঙিয়ে গেল কয়েক বছর রাজত্ব করা, শতাধিক স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণ, তেলের ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জমি দখল নানা অপকর্মের ঘটনা প্রকাশ পেলে স্থানীয় নেতাদের আশীর্বাদ সরে যায় তার মাথার ওপর থেকে। আর এতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জেলা সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মাত্র দুই শতাংশ জমি কিনে ছোট ঘর তুলে ওই বাড়িতেই পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতেন আলাউদ্দিনের পিতা জয়নাল আবদীন ছিদ্দিক। যাকে খেয়াঘাটের কুলিরা চিনতো রানীর বাপ হিসেবে। ওই সময়ে লঞ্চে রুটি বিক্রির কাজ করা আলাউদ্দিনের ভাগ্য পাল্টাতে থাকে স্পিডবোট ব্যবসায় নামতেই।
ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ৩৩ শতাংশ জমি কিনে একতলা পাকা ভবন করেন। পরে জেলা শহরের পৌর ৪নং ওয়ার্ডে ৫তলা ফাউন্ডেশনে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। যার দুই তলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ওই নির্মাণাধীন বাড়ির পাশেই তিনি বর্তমানে ভাড়া থাকেন।
শহরের ওয়েস্টর্নপাড়া ডাক্তারবাড়ি এলাকায় ক্রয় করেছেন ১০ শতাংশ জমি। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান এলাকায় ভায়রা ভাইয়ের পাশাপাশি নিজে ক্রয় করেন ৮ কাঠা জমি। এ ছাড়া ভোলা-বরিশাল রুটের ভেদুরিয়া ঘাটে রয়েছে জ্বালানি তেলের ব্যবসা।
আলাউদ্দিন এখন ৮টি স্পিডবোটের মালিক। রয়েছে নাভানা ও ফ্রেস এলপি গ্যাস এজেন্সি, সিএনজি ডিলারশিপ, দুটি ট্রাকের মালিক, ঢাকা ও বরিশালে বাড়ি। সব মিলি আলাউদ্দিনের রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ। যা শুনে অনেকেই হক চকিয়ে যান।
সম্প্রতি স্পিডবোট বিদ্রোহ দেখা দিলে আলাউদ্দিনের নেতৃত্ব অস্বীকার করেন বেশিরভাগ মালিক ও চালকরা। সমিতির সদস্যেদের ৪০ লাখ টাকা তার পকেটে। এ ছাড়া ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির শ্রমিক নেতা হালে আওয়ামী লীগ বনে যান।
ওই ঘাটে ৬০ জন মালিকের ১০৫টি স্পিডবোট রয়েছে। এর মধ্যে আলাউদ্দিনের নিজ নামে ৫টি ও ভাইয়ের নামে ৩টি, ভগিনীপতির নামে ২টি রয়েছে।
ঘাটের লাইনম্যান মনজরুল ইসলাম মনজু জানান, আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনি বাদী হয়ে মামলা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রতিবন্ধী (পা নেই) হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি ছোট বেলা থেকে ওই ঘাটে। ১২ বছর ধরে স্পিডবোট চালান। দুর্ঘটনায় তার একটি পা হারান। তাকে কোনো সহায়তা করা হয়নি। তিনি একটি স্পিডবোট ক্রয় করেন। বোটটি ওই ঘাট থেকে ছাড়তে দেয়নি আলাউদ্দিন।
রুবেল ও বাবুল জানান, স্পিডবোট দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে তা বুঝে দেননি।
স্পিডবোট মালিক মোসলেউদ্দিন, নিজামউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, জানান আলাউদ্দিন ঘাটে রাজত্ব করতেন। এখন গা ঢাকা দিয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ভেদুরিয়া ঘাটে তেলের ব্যবসার পাশাপাশি মাদকের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। কয়েক দিন পর পর একটি মাইক্রোবাস ওই দোকানে আসে। কিসের যেন প্যাকেট তাতে তোলা হয়। এতদিন আলাউদ্দিনের দাপটে কেউ এ সব বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি। এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
ভোলার গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ওসি সহিদুল ইসলাম জানান, আলাউদ্দিনের বিষয়ে তারা তদন্ত করছেন।
একই কথা জানান ভোলা থানার ওসি এনায়েত হোসেন।
আলাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিও এটি কাটপিস। তার সিগারেট খাওয়া দৃশ্যকে ইয়াবা খাওয়া দেখানো হয়। এটি একটি চক্র করেছে। মেদুয়া এলাকায় নদী ভাঙনের পর তার বাবা খেয়াঘাটে আটার রুটি তৈরির দোকান দেন এটি সত্য। ওই সময় তিনি ছোট ছিলেন। তিনি অনেক পরিশ্রম করে টাকা আয় করেন বলেও দাবি তার।
খেয়াঘাটের নজরুল মেম্বারের তেল ব্যবসা ও টেলিফোন কল সেন্টারে দৈনিক ২০ টাকা বেতনে কাজ করতেন। এটাও স্বীকার করেন।