avertisements 2

সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় মরীয়া বাংলাদেশের জোট হেফাজতে ইসলাম

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৬ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

বাংলাদেশে মাদ্রাসা-ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারা সোমবার মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যে বৈঠক করেছেন, সেটিকে তারা সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নিরসনের চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন। সম্প্রতি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে চরম সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল হেফাজত।

এরপর সরকার সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। হেফাজতের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা মামুনুল হককেও সরকার গ্রেফতার করেছে।

হেফাজতের নেতারা বলেছেন, তাদের যে কোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই তারা সরকারকে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এবং একই সঙ্গে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে হেফাজতের নেতারা মূলত নিজেদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।

সংগঠনটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় হেফাজতের কোন কর্মসূচি ছিল না-সেটা তারা বোঝাতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এর সমর্থনে তারা গত ২৬শে মার্চের আগে তাদের সংগঠনের সংবাদসম্মেলনের বক্তব্যসহ কাগজপত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছেন।

হেফাজতের ঐ নেতা আরও জানিয়েছেন, তারা মনে করছেন, সরকার তাদেরকে প্রতিপক্ষ বা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে দেখছে। সেজন্য তারা সরকারকে বোঝাতে চাইছেন যে, হেফাজতে ইসলাম সরকারের কোন প্রতিপক্ষ নয়।

তিনি বলেন, সরকার যেনো কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ করে এবং গ্রেপ্তারকৃতরা যাতে আইনগত সব সহায়তা নিতে পারে- সে ব্যাপারে তারা সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছেন।

গত ১৮ই এপ্রিল রোববার গ্রপ্তারের সময় মামুনুল হক

গত ১৮ই এপ্রিল রোববার গ্রপ্তারের সময় মামুনুল হক

এদিকে, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, একটা ভুল বোঝাবোঝি কারণে সরকারের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় সেটাই মূল বিষয় ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

"ভুল বোঝাবুঝিতো আছে। এগুলোর নিরসন হলে অগ্রগতি সাধিত হবে ইনশাআল্লাহ। ভুল বোঝাবুঝির কারণেইতো দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তার মানে এই নয় যে আমরা সরকারের ভেতরে ছিলাম। আমরা স্বতন্ত্রভাবেই হেফাজতের কাজ করতেছিলাম" বলেন নুরুল ইসলাম জেহাদী।

তিনি আরও বলেছেন, "এর মধ্যে হঠাৎ করে ২৬, ২৭ এবং ২৮শে মার্চ অনাকাঙ্খিত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। সেজন্য আমরা মনে করলাম, কিছু আলাপ আলোচনা করলে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে। এই ধারণা নিয়ে হঠাৎ বৈঠক (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে) হয়। উভয় পক্ষের কথার মাধ্যমে আশা করা যায় যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে" বলে তিনি মনে করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হাটহাজারী সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনার পর গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে হেফাজত চাপে পড়েছে। হেফাজতের নেতাদের অনেকের বিভিন্ন দলের সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

হেফাজতে ইসলামের ডাকা গত ২৮শে মার্চে হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা

হেফাজতে ইসলামের ডাকা গত ২৮শে মার্চে হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা যদিও সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দাবি করেছে। কিন্তু তাদের কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে নতুন করে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসেছে।

সেজন্য এখন সংগঠনটির নেতারা নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে বক্তব্য তুলে ধরছেন। সোমবার রাতেও যখন হেফাজতের একদল নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার বাসভাবনে দেখা করতে যান, তার আগে হেফাজতের আমীর জানায়েদ বাবুনগরী এক ভিডিও বার্তায় তাদের সংগঠনকে হেফাজত হিসাবে দাবি করে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

"কাউকে ক্ষমতায় বসানো, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো-হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। পরিস্কার ভাষায় বলে আসতেছি," ব্যাখ্যা করেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বা সমঝোতার জন্য তাদের সংগঠনের মুরব্বী বা বয়স্ক নেতা যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারাও কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় গিয়েছিলেন হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদীর নেতৃত্বে কয়েকজন বয়স্ক নেতা। সেই আলোচনায় তাদের বক্তব্য ছিল, এখন 'ঢালাও' গ্রেপ্তার চলছে। মামুনুল হকসহ তাদের দশ জনের মতো কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, ঢালাও গ্রেপ্তার হবে না-এমন আশ্বাস তারা পেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে।

"গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। অনেক নিরীহ মানুষও গ্রেপ্তার হচ্ছে। আমরা এই গ্রেপ্তার এবং হয়রানি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)বলেছেন, নির্দোষ বা কোন অপরাধ নাই- এ ধরনের লোককে হয়রানি করা হবে না। সহিংসতার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে তারা ব্যবস্থা নেবে" বলেন নুরুল ইসলাম জেহাদী।

তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তিও দাবি করেছেন তারা।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে এই সমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম আলোচনায় এসেছিল

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে এই সমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম আলোচনায় এসেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এটি কোন বৈঠক ছিল না। এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। এছাড়া এই কর্মকর্তা বলেছেন, সহিংসতার ঘটনায় মামলা আছে, সেগুলো আইন অনুযায়ী চলবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, তারা তাদের দলের পক্ষ থেকে মনে করেন, সহিংসতার ঘটনায় কোন ছাড় দেয়া ঠিক হবে না।

"সম্প্রতিকালে যে সমস্ত নাশকতা কর্মকাণ্ড করা হয়েছে, বিশেষ করে ২৬, ২৭ এবং ২৮শে মার্চ এবং এরপরে ৩রা এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রিসোর্টে যে সহিংসতা হয়েছে-এসব ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে নাশকতা করা হয়েছে।

"এই নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনে আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়াটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই" বলেন আওয়ামী লীগ নেতা মি: হানিফ।

যদিও সরকার এবং আওয়ামী লীগ সহিংসতার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথাই তুলে ধরছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনার পর হেফাজত নেতারা মনে করছেন, তাদের সমঝোতার চেষ্টায় গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ হতে পারে এবং ইতিবাচক ফল হতে পারে। হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জেহাদী আশা প্রকাশ করেন যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তাদের অল্প সময়ের মধ্যে আবার আলোচনা হতে পারে।

 

আরও পড়ুন

avertisements 2