avertisements 2

কেড়ে নেওয়া হলো অসহায় মমতা রানীর মুজিববর্ষের উপহার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:৩৫ পিএম, ১৪ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫২ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দুই শতাংশ জমি ও একটি পাকা গৃহ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন হতদরিদ্র মমতা রাণী বৈষ্ণবী। উপজেলার ভেরাডহর গ্রামের স্বামী-সন্তাহীন এই হতদরিদ্র নারী পরের দান-দক্ষিণায় চলেন। বিধবা ভাতা হিসেবে সরকার তাকে সুবিধা দিয়ে থাকে। এই নারী খাসজমিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছিলেন। তার এই অবস্থা দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি সুবিধাভোগী হিসেবে তার নাম দাখিল করলে চূড়ান্ত তালিকায় মনোনীত হন। সরকার তার নামে মুজিববর্ষে বাড়ি বানানোর জন্য ইট, বালু, পাথর, সিমেন্টসহ নির্মাণ উপকরণ পাঠিয়ে দেয়। তিনি কাজও শুরু করেন। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে শাল্লা উপজেলা থেকে মুজিববর্ষের ১৪৬টি ঘর কেটে নিলে তিনিও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তাই এই অজুহাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ দিয়ে তার অর্ধনির্মিত ঘরটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় নির্বাক হয়ে গেছেন এই অসহায় নারী। এখন সারাক্ষণ বিলাপ করছেন তিনি।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও দরিদ্র উপজেলা শাল্লা। হতদরিদ্র মানুষজন খাস জমিতে গ্রাম তৈরি করে বসবাস করেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে শাল্লা উপজেলায় মুজিববর্ষের প্রায় দেড় হাজার ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু এসব ঘর বরাদ্দের নামে একটি চক্র দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় নানা অজুহাত দেখিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ১৪৬টি ঘর কেটে নেয়। এই ঘর নির্মাণে জড়িত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রশিদকে ইতিমধ্যে পার্বত্য এলাকায় বদলি করা হয়েছে। মনোনীত সবাইকেই গৃহ নির্মাণের উপকরণ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল সরকার। এগুলো পেয়ে কাজও শুরু করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। যার একজন এই অসহায় মমতা রাণী বৈষ্ণবও। 

স্থানীয়রা জানান, মাস খানেক আগে মমতা রাণী বৈষ্ণবের ঘর নির্মাণের জন্য ইট, সিমেন্ট, বালু ও পাথর দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। এই উপজেলায় মুজিববর্ষের উপহারপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ঘর বরাদ্দের নামে একটি সিন্ডিকেট অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় জেলা প্রশাসন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে তদন্ত করায়। এ সময় ভুক্তভোগী অনেকেই নানা অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর বিভিন্ন এলাকায় কিছু টাকাও ফেরত দেওয়া হয়। তাই নানা কারণে, ১৪৬টি ঘর কেটে নেওয়া হয় শাল্লা উপজেলা থেকে। কেটে নেওয়া তালিকায় হতদরিদ্র নারী মমতা রাণী বৈষ্ণবও রয়েছেন। তবে তিনি এ বিষয়টি জানতেন না। এর মধ্যেই ঘরের কাজও শুরু হয়। সপ্তাহ খানেক আগে তিনি খবর পান তার ঘর বাতিল হয়ে গেছে এবং ঘর ভেঙে উপকরণ নিয়ে যাওয়া হবে। এই খবরে বেকে বসেন এই নারী। শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ভাঙতে দিবেন না বলে পণ করেন। গত ৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ পাঠিয়ে তার ঘর ভেঙে নির্মাণ উপকরণ নিয়ে আসেন বলে জানান এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করেও থামাতে না পারায় নির্বাক হয়ে যান এই বৃদ্ধা নারী। এখন নীরবেই চোখের জল মোছেন।

মমতা রাণী বৈষ্ণব বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলান মুজিবের নামের ঘরে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। যখন ঘর তৈরির সরঞ্জাম পাঠানো হয় তখন মনে হয় আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। কাজও শুরু করি। কিন্তু দুইদিন আগে পুলিশ এসে আমার ঘরটি ভেঙে মালামাল নিয়ে গেছে। আমাকে কেন ঘর দিয়ে আবার কেড়ে নেওয়া হলো আমি জানি না। আমি শেখ হাসিনার কাছে এই বিচার চাই। আমি ঘর ফিরত চাই।

ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চৌধুরী বলেন, উনি খুব অসহায় নারী। কেউ নেই উনার। বিধবা ভাতা আর আত্মীয় স্বজনদের দানেই খুপড়ি ঘরে সংসার চালাচ্ছেন। উনি সুবিধাজনক খাস ভূমিতে খুপড়ি ঘরে থাকায় আমি তার নাম তালিকাভূক্ত করি। তিনি মনোনীত হন এবং নির্মাণ উপকরণ পেয়ে ঘরও তৈরি শুরু করেন। দুইদিন আগে শুনেছি তার ঘরের নির্মাণ সামগ্রী খুলে নিয়ে আসা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদীর হোসেন বলেন, উনাকে আমরা পরবর্তীতে ঘর করে দেব। এখন নানা সমস্যার কারণে ১৪৬টি ঘর কেটে নেওয়া হয়েছে। এর একটি উনারও। তাই তার মালামাল নিয়ে আসা হয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2