গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করেছেন এডিসি দস্তগীর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:৩৬ এএম, ২৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের রিমান্ডে গুলি ছোড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিলেট নগর পুলিশের সাবেক এডিসি সাদেক কাউসার দস্তগীর। তিনি বলেছেন- এক কনস্টেবলের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি গুলি ছোড়েন। এ সময় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যও গুলি ছোড়েন। তবে; কার গুলিতে সাংবাদিক তুরাব মারা গেছেন বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এদিকে- রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার বিকালে সাবেক এডিসি দস্তগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পিবিআই বলছে; দস্তগীরের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দস্তগীরকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১-এ হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন শুনানি শেষে সাদেক কাউসারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ১৯শে জুলাই সিলেটের বন্দরবাজারে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। এ সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৯শে আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর।
এ মামলায় ১৭ই নভেম্বর রাতে পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। ১৮ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেরপুর থেকে সাদেক কাউসার দস্তগীরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে তাকে সিলেট আদালতে তোলা হয়। তখন তাকে আদালত ভবনে বিক্ষুব্ধ কয়েকজনকে লাথি-ঘুষি মারতে দেখা গেছে। আদালতে নেয়ার পর তুরাব হত্যা মামলায় সাদেক কাউসার দস্তগীরের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। সাদেক কাউসার আন্দোলন চলাকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তাকে তিনি শেরপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার দিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়- ১৯শে জুলাই বেলা ২টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপি’র মিছিলে পেছন থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এ সময় সাদা পোশাকে থাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাদেক কাউসার একজন কনস্টেবলের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে একের পর এক গুলি ছুড়ছেন। গুলিতে গুরুতর সাংবাদিক তুরাব ওইদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার দেহে ৯৮টি স্প্লিন্টার পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই সময়ে নিহত তুরাবের ভাই থানায় মামলা করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ। এদিকে- তুরাব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিলেটের সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দস্তগীর গ্রেপ্তারের দিন আদালত এলাকায় সাংবাদিকরা ক্ষোভ দেখান। পরিবারের সদস্যরা তুরাব হত্যার ঘটনায় জড়িত সকলের ফাঁসি দাবি করেছেন। মামলার বাদী ও তুরাবের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- তুরাব হত্যাকাণ্ড দিনের বেলা প্রকাশ্যে ঘটেছে। কারা তুরাবকে হত্যা করেছে সবাই দেখেছে। তিনি তুরাব হত্যায় জড়িত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার ও তাদের ফাঁসির দাবি করেন। তিনি বলেন- তুরাব হত্যার ঘটনা যেন দ্রুত বিচার আইনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা হয়। আর এ বিচার যেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।