শান্তিতে ঘুমাতে ফেলে গেল ছেলে, প্রচণ্ড শীতে কাঁদছিলেন বাবা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৩৮ এএম, ১১ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ১২:০২ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
৮০ বছরের বৃদ্ধ সাহাবুদ্দিন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অথচ এ মানুষটিকেই সড়কে ফেলে রেখে গেছেন নিজের ছেলে ও পুত্রবধূ। পরে প্রচণ্ড শীতে শিশুর মতো কাঁদছিলেন তিনি।
সাহাবুদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভার আনোয়ার খিলা ওয়ার্ডে। সোমবার ফজরের নামাজের পর ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের পাশে সাহাবুদ্দিনকে শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেন মুসল্লিরা। পরে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে পুলিশকে খবর দেন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃদ্ধ অসুস্থ বাবাকে ভরণপোষণ দেয়া নিয়ে পুত্রবধূ ও নিজ সন্তান এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। খবর পেয়ে সকালে ফুলপুর থানার ওসি ও স্থানীয় সাংবাদিক ওই বৃদ্ধের খোঁজখবর নিতে বাড়িতে যান। এ সময় ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান ছেলে রফিকুল।
সাহাবুদ্দিনের বাড়ি ছিল শেরপুর শহরে। এক সময় টাকা-পয়সা, বাসা-বাড়ি, ফসলের জমি সবই ছিল। এলাকার কিছু প্রভাবশালীর খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। ৩০ বছর আগে ফুলপুরে চলে আসেন। স্থানীয় একজনের দেয়া জমিতে একটি টিনশেড বাড়িতে থাকতেন তিনি।
দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে দিন চলত সাহাবুদ্দিনের। তার দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম ও মিরাশ উদ্দিন রয়েছেন। দুই ছেলেই বিবাহিত। বড় ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গেই থাকেন তিনি। ছোট ছেলে মিরাশ ফুলপুরে একটি রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি বাবার কোনো খোঁজখবর রাখেন না।
রফিকুল ইসলামের চার সন্তান। অভাবের সংসারে বৃদ্ধ বাবার ওষুধ ও খাবার দিতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া বৃদ্ধ বাবার ব্যথায় চিল্লাচিল্লিতে সারারাত ঘুমানো যায় না। বৃদ্ধ বাবার প্রতি রাগান্বিত হয়ে এ কাজ করছেন বলে স্বীকার করছেন পুত্রবধূ। পুত্রবধূ নাছিমা খাতুন এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানান, অভাবের জন্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ভবিষ্যতে শ্বশুরের দেখাশোনা করতে অসুবিধা হবে না। তার দাবি নিজের জমি নেই, করোনার জন্য ঢাকা শহরে কোনো কাজ নেই। এলাকায় সামান্য কাজকাম করে একমাত্র স্বামীর উপার্জনে ছয়জনের ভরণপোষণ চলে। এছাড়া প্রায় ছয় মাস ধরে শশুরের বয়স্ক ভাতা পাননি। নাছিমার এমন কষ্টের কথা শুনে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে।
নাছিমাকে ফুলপুর থানার ওসি ইমারত হোসেন গাজী বলেন, শ্বশুরের প্রতি আর যেন এমন না হয়। নাছিমা খাতুন তখন দুঃখ প্রকাশ করলে ওসি তাকে টাকা দিয়ে সহায়তা করেন।