avertisements 2

সহিংসতার আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ, কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে শঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ আগস্ট,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:৪৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্য ছবি: সংগৃহী 

৫ আগস্ট বেলা দেড়টা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে শুরু হয় আনন্দ মিছিল। এমনই একটি মিছিল যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয় অন্তত দুই শতাধিক সাধারণ মানুষ। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জনরোষের শিকার হয় যাত্রাবাড়ী থানা। সেখানে অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যদের গণপিটুনি দিয়ে অস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম লুট করে নেয়া হয়। এসবই হয়েছে কনস্টেবল রফিক উদ্দিনের (ছদ্মনাম) চোখের সামনে।

আহত অবস্থায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো ভুলতে পারেননি সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি। এমন মানসিক অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের শঙ্কা। আবার কর্মস্থলে ফিরলেও এসব পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে জনগণের প্রকৃত সেবা পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জনরোষের শিকার হওয়ার পর থেকে আর থানায় ফেরেননি কনস্টেবল রফিক। পরিবারের সঙ্গে চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। শুধু তিনি নন, অন্য সব পুলিশ সদস্যও ভুগছেন সহিংসতার মানসিক ট্রমায়। এমনকি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতেও তারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। এরই মধ্যে পুলিশ সদস্যদের বাসাবাড়িও জনরোষের শিকার হয়েছে। অনেকের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

জনরোষের এসব ঘটনায় সারা দেশে পুলিশের ৪৫০টি থানা আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় অনেক পুলিশ সদস্য নিহতের পাশাপাশি আহতও হয়েছেন। এর দুদিন পর গত বুধবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় মো. ময়নুল ইসলামকে। দায়িত্ব নেয়ার পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে সব পুলিশ সদস্যকে নিজ নিজ ইউনিটে ফেরার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন তিনি। কিন্তু তাতেও খুব বেশি সাড়া মেলেনি। বরং উল্টো পুলিশকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার না করাসহ কয়েক দফা দাবি সামনে এনে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু পুলিশ নয়, জনরোষের শিকার হওয়া যেকোনো ব্যক্তির জন্য কর্মস্থলে ফেরার আগে মানসিক স্থিতিশীলতা জরুরি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা ভীতিকর পরিস্থিতির পর প্রত্যেকের মানসিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক যত্ন। পুলিশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, শিক্ষার্থীসহ অনেকে হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবার আগে প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পুলিশ সম্পর্কে দেশব্যাপী একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এমন মানসিক ট্রমার মধ্যে তাদের কাছ থেকে প্রকৃত সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে পুলিশের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে এসে তাদের কর্মস্থলে ফেরাতে হবে।’

সাধারণ পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, বর্তমানে বাহিনীতে সদস্য রয়েছে দুই লাখের বেশি। যখন যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তখন সেই সরকার পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। নিজেদের সুবিধার্থে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাহিনীর ভেতরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন সব আমলেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকারই পুলিশকে নিজেদের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও নিজেদের সুবিধা ও স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতায় থাকা সরকারের হয়ে অধস্তনদের ব্যবহার করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের জনরোষপূর্ণ অবস্থা পরিহারে নয় দফা দাবি জানিয়ে ৬ আগস্ট কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সাধারণ পুলিশ সদস্যরা। সেখানে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ দানে সংবিধান ও জনগণের মনের কাঙ্ক্ষিত বিষয় প্রাধান্য দেয়া, পুলিশের সব স্থাপনার নিরাপত্তাবেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা, পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা, পুলিশ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোর পাশাপাশি বাহিনীর মর্যাদা রক্ষায় পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশের এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত আট সদস্যের কমিটি। সেখানে তারা সব পুলিশ সদস্যের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। আইজিপি তাদের প্রস্তাব দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, আহত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও তাদের প্রস্তাব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন আইজিপি। এর বাইরে গতকাল রাজারবাগে সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের প্রস্তাব মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কল্যাণ সমিতি।

এদিকে পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য যে আহ্বান জানানো হয়েছিল সেটির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তাদের আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারণ সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফেরার পর প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে।’
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2