avertisements 2

প্রখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান অধ্যাপকের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য হিসাবে যোগদান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৪ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (USQ) তিরিশ বছরের মত পরিসংখ্যানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হিসাবে অধ্যাপনা শেষে অধ্যাপক ড.শাহজাহান খান তার জন্মভূমি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য হিসাবে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন।

অধ্যাপক খান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাষ্টারস ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আরেকবার মাষ্টারস, ও পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। আশির দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের প্রভাষক হিসেবে তার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। তিনি ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, কানাডা; সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস; বাহরাইন এর বাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয়; ওমানের সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়; এবং বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক পদে দায়িত্ব¡ পালন করেন।

অধ্যাপক খান ২০০৫ হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইসলামিক কান্ট্রিস সোসাইটি অফ স্ট্যাটিস্টিক্যাল সায়েন্সেস (ISOSS) এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া (২০০৭); ঢাকা, বাংলাদেশ (২০০৮); কায়রো, মিশর (২০০৯); দোহা, কাতার (২০১১); এবং বোগর, ইন্দোনেশিয়া (২০১৪) তে সফলভাবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান সম্মেলন সমূহের প্রধান সংগঠক ছিলেন। 

অধ্যাপক খান নেদারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট (ISI) এর একজন নির্বাচিত সদস্য; যুক্তরাজ্যের রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটি (RSS) এর নির্বাচিত ফেলো; ও যুক্তরাস্ট্রের গাণিতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট (IMS) এর সদস্য।এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ান পরিসংখ্যান সমিতি,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতি এবং ISOSS এর আজীবন সদস্য।

অসামান্য গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পেশাদারী নেতৃত্বের জন্য, অধ্যাপক খান ২০০১ সালে ISESCO  স্বর্ণপদক এবং ২০০৭ সালে ISOSS স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতি কর্তৃক ১৯৯০ সালে প্রবর্র্তিত মর্যাদাপূর্ণ কাজী মোতাহার হোসেন স্বর্ণপদক (২০১২) বিজয়ী চারজন বিজেতার একজন ও সর্বশেষ বিজেতা। মৌলিক গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ, অধ্যাপক খান ২০১৩ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (BAS) এর একজন“প্রবাসীফেলো” নির্বাচিত হন।

অধ্যাপক খান ২০০৬ সাল থেকে যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড প্রোবাবিলিটি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (JAPS)- এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব¡পালন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি সম্মেলনের কার্যবিবরণী সম্পাদনা করেছেন। ২০১১ সালে ইসলামিক কান্ট্রিস সোসাইটি অফ স্ট্যাটিস্টিক্যাল সায়েন্সেস অধ্যাপক খানের সম্মানে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। অধ্যাপক খানের গবেষণার ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে- Public Health, Evidence-based Decision, Meta-analysis, predictive inference, linear models, preliminary-test Gesshrinkage estimation. তিনি উচ্চমান সম্পন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে দুইশত পঞ্চাশের অধিক পিয়ার রিভিয়ূড জার্নাল নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশে ২০টিরও বেশি কর্মশালায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন, পঁচিশটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এবং শতাধিক আমন্ত্রিত আলোচনা এবং পেশাদার সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। 

তিনি তার পেশাগত দায়িত্বপালন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। সম্প্রতি Springer Nature কর্তৃক প্রকাশিত তার Meta-Analysis Methods for Health and Experimental Studies" বইটি ইতিমধ্যেই মাত্র বিশ মাসে সতের হাজারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে।

USQ-তে, অধ্যাপক খান বহুবছর ধরে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান এবং ছয়বছর একাডেমিক বোর্ডের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। অধ্যাপক খান বিশজন পিএইচডি এবং তিনজন এমফিল শিক্ষার্থীর গবেষণার তত্ত্বাবধান করেছেন। তার উচ্চ ডিগ্রীধারী ছাত্রদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশী রয়েছে যাদের এমফিল এবং পিএইচডির তত্ত্বাবধান তিনি নিজে করেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশের অনেক পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো এবং তরুণ গবেষণা সহকর্মীদের মেন্টর হিসেবে দায়িত ¡পালন করেছেন। সম্প্রতি অধ্যাপক খান USQ-তে অ্যাডজান্কট প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর প্রতি বিরল সম্মান প্রদর্শন হিসেবে সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে সেখানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের জন “অধ্যাপক শাহজাহান খান বৃত্তি” চালু করেছে।

একজন বহিরাগত বিজ্ঞানী / অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপক খান যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন তার কয়েকটি হল-জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়; কানাডার কার্লটনবিশ্ববিদ্যালয়; ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়; ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর; সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়; মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ মালয়া, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া, এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি মালয়েশিয়া; এবং পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়।

অধ্যাপক খান তার একাডেমিক দায়িত্বের বাইরে অসামান্য নেতৃত্ব দিয়ে সামাজিক সেবা মূলক কাজে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার ব্যতিক্রমধর্মী সামাজিক সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ, তিনি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড সরকার প্রদত্ত Multicultural Service Award (২০০২), এবং অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ Cultural Diversity Ambassador Award (2014); Islamic Council of Queensland Community Service Award (2011); Queensland Police Service Award (২০১৪); Islamic Council of Queensland Community Service Award (২০১১); ); Queensland Police Service Award (২০১৭) এবং USQ Diversity and Inclusion Award (২০১৮) লাভ করেন।

USQ তে ২০০০ সালে ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৩-২০২১ মেয়াদে USQ মাল্টিকালচারাল স্টাফ নেটওয়ার্ক এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং টুওউম্বাতে বহু সংস্কৃতিবাদের উপর বেশ কয়েকটি সফল সেমিনার এবং ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেন। তিনি এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি নিবন্ধও লিখেছেন।

ইসলামিক সোসাইটি অফটুওউম্বার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং টুওউম্বা ইসলামিক চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসাবে অধ্যাপক খান টুওউম্বাতে গার্ডেন সিটি মসজিদ তৈরির নেতৃত্ব দেন। ২০১৫ সালে দুবার মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়ার পর তিনি মসজিদ পুননির্মাণের লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। প্রায় দুই মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটি বর্তমানে প্রায় সমাপ্তির পথে।

অধ্যাপক খান কুইন্সল্যান্ডের ইসলামিক কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দুই মেয়াদে (২০০৭ এবং ২০১৪) দায়িত¦ পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অফ ইসলামিক কাউন্সিলের (AFIC)অন্তর্র্বতী সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি মেলবোর্নভিত্তিক,অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম ইসলামিক ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন, মুসলিম কমিউনিটি কো-অপারেটিভ অস্ট্রেলিয়ার (MCCA) নির্বাচিত পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন (২০১৪-২০১৭) ।

জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং নীতি নির্ধারকদের   দৃস্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে অধ্যাপক খান বিভিন্ন সামাজিক ও কমিউনিটির সমস্যা তুলে ধরে ধারাবাহিক চিন্তাশীল নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে আবেদন দাখিলের কার্যক্রম শুরু এবং এটি সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা পালন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পার্লামেন্টের সদস্য, মাননীয় ড. জনম্যাকভে এমপি পার্লামেন্টে তার প্রথম বক্তৃতায় অধ্যাপক শাহজাহান খানকে স্মরণ করেছেন। টুওউম্বা সাউথের রাজ্যসদস্য, মাননীয় ডেভিড জেনেটস্কি এমপিও কুইন্সল্যান্ড পার্লামেন্টে তার প্রথম বক্তৃতায় অধ্যাপক খানের নাম উল্লেখ করেছেন।

নবম বার্ষিক টুওউম্বা ইন্টারন্যাশনাল ফুড ফেস্টিভ্যাল এবং গার্ডেন সিটি মসজিদ ওপেন ডে - ২০২২ এ তার বক্তৃতায়  USQ-এর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর জেরাল্ডিন ম্যাকেঞ্জি অধ্যাপক খানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, "অধ্যাপক খানের কমিউনিটি সার্ভিস অদ্বিতীয়। বোঝাপড়ার প্রচার, বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, আন্তর্জাতিকীকরণ এবং বহু সংস্কৃতিবাদের প্রতি তার অবিচ্ছিন্ন মনোযোগের কারণে অধ্যাপক খান বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায় এবং টুওউম্বা সম্প্রদায়ের মধ্যেএকটি উজ্জ্বল আলো হয়ে আছেন।”

অধ্যাপক খান গোপালগঞ্জ জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্ত্রী আনার কলি লুৎফুন্নাহার ও অধ্যাপক খান তিন পুত্রসন্তানের গর্বিত বাবা-মা। তাদের জ্যেষ্ঠছেলে একজন বিশ্বখ্যাত আইটি পেশাদার ও ছোট দুই ছেলে সুশিক্ষিত উদ্যোক্তা যারা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের উৎপাদন শিল্প চালাচ্ছেন।

 অধ্যাপক শাহজাহান খানের অসামান্য একাডেমিক অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের গুনাবলী ও দেশে বিদেশে সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তার পেশাদারী নেতৃত্বে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌছতে সক্ষম হবে। এইউবি‘র উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব      প্রাপ্তিতে আমি তার সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                লেখক: ডঃ জহিরুল হক, ইমেইল: Zahirul.Hoque@uaeu.ac.ae, অধ্যাপক শাহজাহান খানের একজন প্রাক্তন পিএইচডি ছাত্র এবং বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত।
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2