অনিয়ম তুলে ধরায় হুমকি: আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ইডেনছাত্রী কেয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
‘জেবুন্নেসা হলের বৈধ কক্ষ ছেড়ে পালিয়ে এসেছি। এক কাপড়ে গত দুই রাত পরিচিত আপুদের বাসায় পালা করে থাকছি। এতেও হুমকি থেকে মুক্তি মেলেনি। প্রতিনিয়ত আমার ফোনে কল আসছে। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারেও আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে ভাবছিলাম বিষয়টি কলেজ প্রশাসনকে জানাবো। কিন্তু উল্টো কলেজ প্রশাসন থেকেও আমাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- ছাত্রাবাসে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, মেয়েদের নির্যাতনের যেসব অভিযোগ নিয়ে আমি বক্তব্য দিয়েছি তার প্রমাণ দিতে হবে। নইলে আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবে। আমি এখন চরম আতঙ্কে আছি, আমি নিরাপদে বাঁচতে চাই।’
ইডেন মহিলা কলেজের চলমান সমস্যা নিয়ে সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের সামনে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় কথা বলেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান কেয়া। মুহূর্তেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সভা শেষে ইডেন কলেজের জেবুন্নেসা হলের নিজ কক্ষে যান কেয়া। কক্ষে ঢুকেই জানতে পারেন তাকে খুঁজতে একটু আগেই রুমে ছাত্রলীগ নেত্রীরা এসেছেন। এই খবর পেয়ে আতঙ্কে হাতের কাছে যা পেয়েছেন তাসহ ভেনেটি ব্যাগটি নিয়েই রুম ছাড়েন ওই হলের ৫০২ নম্বর রুমের এই ছাত্রী। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাভিশনকে এই আতঙ্কের কথা জানান কেয়া।
এ সময় তার হাতে ছিল একটি ভেনেটি ব্যাগ এবং একটি কাপড়ের ব্যাগ। একইসঙ্গে চেহারায় ছিল চরম ক্লান্তিও। চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। নুসরাত তাকে দেওয়া কয়েকটি হুমকির প্রমাণও দেখান প্রতিবেদককে। বার বার বলতে থাকেন, ‘খারাপকে খারাপ বলে আমার জীবন এখন হুমকিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বলা কি অপরাধ?’
তিনি বলেন, আমি হলে সিট বাণিজ্য নিয়ে বলেছি। আমি নিজেও ছাত্রলীগ নেত্রীদের টাকা দিয়ে হলে সিট নিয়েছি। ছাত্রীদের নির্যাতনের কথা বলেছি, সেটাতো রিভা আপু যে নির্যাতন করেছেন সেটি ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমেই উঠে এসেছে। আর দেহ ব্যবসার বিষয়টিতো ছাত্রলীগের নেত্রী বৈশাখি আপুই বলেছেন। আমি তার বক্তব্যকে রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরেছি। ইডেন ক্যাম্পাসে যে এসব সমস্যা আছে এটা শুধু শিক্ষার্থী নয় বাইরের মানুষও জানে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইডেন কলেজের সব ছাত্রী তো খারাপ না। পুরো কলেজে হাতে গুনে খারাপ পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ জন। অথচ এদের জন্য ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর বদনাম। আমরা কোথাও মুখ দেখাতে পারি না। এদের সামাজিক জীবন ব্যহত হচ্ছে। বিয়েতেও এর প্রভাব পড়বে। একজন সাধারণ ছাত্রী হিসেবে এর প্রতিকার কি চাইতে পারি না আমরা?’
খারাপকে খারাপ বলা অপরাধ কিনা প্রশ্ন তুলে নুসরাত বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতা চাইবো। কিন্তু তার আগেই সরকার দলপন্থী একাধিক শিক্ষক ইতোমধ্যে আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। আমি এখন কার কাছে নিরাপত্তা চাইবো।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই কলেজেরই শিক্ষার্থী। আপনার কলেজ নিয়ে এমন বদনাম নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগবে না। আমারও তেমন লেগেছে তাই প্রতিবাদ করে ঝুঁকিতে পড়েছি। আপনি আপনার কলেজটাকে বাঁচান। আমাদের মান-ইজ্জত আর রইলো না। আপনি একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ইডেন কলেজের এই সমস্যার জন্য দোষীদের চিহ্নিত করুন এবং ব্যবস্থা নিন। প্লিজ ঐতিহ্যবাহী কলেজটাকে বাঁচান।’