ভুয়া পরিচয়ে ৩ বছর ঢাবিতে ক্লাস করেছেন তিনি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৫ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ছবি সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও তিন বছর ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশগ্রহণ করে আসছিলেন সাজিদ উল কবির নামের এক যুবক।
আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে অছাত্র ও বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাজিদ উল কবির নামের ওই ছেলে যার নামে পরীক্ষা দিতেন তিনি মেডিক্যালে সেকেন্ড টাইমে চান্স হওয়ার পর চলে যান। তার রোল ব্যবহার করে ইনকোর্স পরীক্ষা দিতেন ছেলেটি; কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা দিতেন না।
আজ ষষ্ঠ সেমিস্টারের একটি কোর্সের ইনকোর্স পরীক্ষা চলাকালে দুজন শিক্ষক এসে তাকে জেরা করেন। পরে আরো কয়েকজন শিক্ষক এসে তার ডিটেইলস নিতে চাইলে পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট দিতে পারেননি ছেলেটি। পরে তাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রক্টরিয়াল টিম এসে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২০০ স্টুডেন্ট শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে আসে। সবাইকে কিন্তু আইডি চেক করে ক্লাসে ঢোকানো সম্ভব না। তাই এটি কারো পক্ষে খেয়াল করা সম্ভব না। ’
তিনি বলেন, ‘ইনকোর্স পরীক্ষাগুলোতে সাধারণত রোল নম্বর দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এবার কোনো একটা বিষয়ে শিক্ষকদের খটকা লেগেছ দেখে বিষয়টা তাদের নজরে আসে। ফাইনাল পরীক্ষায় গিয়ে নাম, রোল সব কিছু বিষয়ে হালনাগাদ আসে; কিন্তু ছেলেটি তাতে অংশগ্রহণ করত না। অন্যের রোল নম্বর ব্যবহার করে ছেলেটি ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশ নিত। এরই মাঝে শিক্ষকরা খেয়াল করেছেন বলে ছেলেটি ধরা পড়েছে। ’
ড. তাসনিম আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা তাকে আমাদের বিভাগের ছাত্র নয় বলে শনাক্ত করেছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসের প্রতিনিধিদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একটি কোর্সের পরীক্ষা চলাকালীন বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের দুজন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিভাগে যাই৷ এরপর তাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে জানানো হয় তার ছাত্রত্বের কোনো ডকুমেন্ট সেখানে নেই এবং ওই যুবকও তার ছাত্রত্বের কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। ’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ওই যুবকের নানা তৎপরতা দেখে বিভাগ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগগুলো বিভাগ, অনুষদের ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সমন্বিতভাবে যাচাই-বাছাই করে তাকে অছাত্র ও বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। ছেলেটি নিজেও স্বীকার করেছে ভর্তি পরীক্ষা দিলেও সে তাতে উত্তীর্ণ হয়নি। এর পর থেকে সে ওই বিভাগে বিভিন্ন সময় ক্লাস-পরীক্ষা দিলেও আজ হাতেনাতে ধরা পড়ে। যেহেতু সে কোনো ছাত্রত্বের ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি আর আমরাও কোনো ডকুমেন্টস পাইনি তাই তাকে অছাত্র ও বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আরো কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা তদন্তের জন্য তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা তদন্ত করব এ বিষয়ে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আমাদের তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’