অধ্যাপক শাহজাহান খান
কেন একজন বাংলাদেশি উপাচার্য অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে প্রশংসিত হলেন?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:১৮ পিএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ঢাকার উপাচার্য ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডের (ইউনিএসকিউ) অ্যামেরিটাস অধ্যাপক শাহজাহান খানকে নিয়ে সম্প্রতি একটি বক্তব্য দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে সিনেটর পল স্কার।
দেশটির টুওউম্বা শহরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি সৃষ্টিতে আমার (শাহজাহান খান) যুগান্তকারী ও দীর্ঘস্থায়ী অবদানের কথা স্বীকার করে, দেশটির বহু সংস্কৃতবাদের শো-সহকারী মন্ত্রী সিনেটর পল স্কার বলেছেন, ‘একজন ভদ্রলোক, যাকে আমি প্রকৃতির শক্তি হিসেবে বর্ণনা করব, যে তার সাথে দেখা করেছেন তিনি বুঝতে পারবেন আমি কী বলতে চাইছি। অ্যামেরিটাস প্রফেসর শাহজাহান খান, যিনি ইসলামিক সোসাইটি অব টুওউম্বার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুখপাত্র ছিলেন- তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তি, যিনি টুওউম্বাতে সামাজিক সংহতি প্রচারের জন্য অনেক কিছু করেছেন।’
কেন ও কীভাবে অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষাবিদ সম্পর্কে এমন অকপট বক্তব্য দেবেন? কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও ইউনিভার্সিটি থেকে আমার পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করার পর ইউনিএসকিউতে পরিসংখ্যানের লেকচারার হিসেবে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে টুওউম্বাতে আমার আগমন। সেই থেকে আমার প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের পেছনের গল্পটি শুরু হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে ড. জন ম্যাকভেই এমপি ও কুইন্সল্যান্ড পার্লামেন্টে জনাব ডেভিড জেনেটস্কি এমপি তাদের প্রথম বক্তৃতায় ২০১৬ সালে আমার কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে টুওউম্বার দৈনিক ক্রনিকল আমাকে টুওউম্বাতে ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে ৪৯তম স্থানের মর্যাদা দিয়েছে।
যাত্রার শুরু
আমি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতা, বিশ্বাসী গোষ্ঠী, সরকারী বিভাগ, রাজনৈতিক নেতা, দাতব্য কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে সকলের জন্য সম্মান এবং মর্যাদা সমুন্নত রেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য কাজ করেছি। ১৯৯৪ সালে ইসলামিক সোসাইটি অব টুওউম্বার (আইএসটি) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। টুওউম্বা ইসলামিক চ্যারিটেবল ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে আমি ২০১৩-২০১৪ সালে টুওউম্বাতে প্রথম (এবং একমাত্র) মসজিদ তৈরির জন্য দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ২০১৪ সালে আমরা বিশ্বাসের সাথে খাদ্য, মজা এবং বন্ধুত্বের (ফুড, ফান ও ফ্রেন্ডশিপ) মাধ্যমে সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিকে উন্নীত করার জন্য প্রথম টুওউম্বা বার্ষিক আন্তর্জাতিক খাদ্য উত্সব শুরু করি। টুওউম্বাতে ইভেন্টের বার্ষিক ক্যালেন্ডারে এটি একটি উল্লেখযোগ্য দিন।
বার্ষিক অনুষ্ঠানে ফেডারেল ও রাজ্যের মন্ত্রী, এমপি, সিনেটর, ভাইস চ্যান্সেলর, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মেয়র ও কাউন্সিলর, গির্জার নেতা, ইমাম, বহুসংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্র ও ফেডারেল মুসলিম সংগঠনের নেতাসহ বিশিষ্ট বক্তারা উপস্থিত ছিলেন। কুইন্সল্যান্ডের গভর্নর, মহামান্য ড. জিনেট ইয়াং পিএসএম টুওউম্বা মসজিদ পরিদর্শন করেন। এ যাত্রার সবচেয়ে খারাপ দিনগুলোর মধ্যে একটি ছিল ২০১৩ সালের ২৮ মে, যখন দৈনিক ক্রনিকলের এক সাংবাদিক ব্রিসবেনের সংবাদপত্রের একটি মিথ্যা গল্পের উপর ভিত্তি করে টুওউম্বার একটি অস্তিত্বহীন মসজিদ সম্পর্কে আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। সাংবাদিক আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন, আমি যদি তার সাথে কথা না বলি তাহলে পরদিন দশ হাজার ‘রেডনেক’ আমাদের মসজিদের বিরোধিতা করবে। আমি কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলাম ও স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ করতে তিনি ‘টুওউম্বা শহরতলিতে মসজিদ তৈরি’ শিরোনামে একটি বিতর্কিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিলেন। উস্কে দেয়ার এ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ডেইলি ক্রনিকল দ্বারা পরিচালিত একটি অনলাইন জরিপ দেখায় যে, প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা আসলে টুওউম্বাতে একটি মসজিদ থাকার ধারণাটিকে সমর্থন করেছিলেন।
একটি মসজিদে রূপান্তরিত করার জন্য পুরানো গির্জার সম্পত্তি কেনার চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর আমরা ইউনিএসকিউ অডিটোরিয়ামে একটি থ্যাঙ্কইউ ইভেন্টের আয়োজন করি। সেখানে উপাচার্য, মেয়র, এমপি, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের নেতাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি বিশ্বাস করি, আপনি যা করছেন সে সম্পর্কে লোকেদের অবহিত রাখা পারস্পরিক আস্থার চাবিকাঠি।
সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ
টুওউম্বার ‘গার্ডেন সিটি মসজিদ’টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি পুরনো ইউনাইটিং চার্চের সম্পত্তি কিনে, যেন শহর ও অঞ্চলের দুই হাজারেরো বেশি মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন মেটানো যায়। মসজিদটি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য উন্মুক্ত। মুসলিম সম্প্রদায় তাদের প্রতিবেশীদের সাথে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখে। সেই সঙ্গে মসজিদ ব্যবহারকারীদের দ্বারা কোনো ঝামেলা বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই শান্তিতে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করে। সম্পত্তি ক্রয় চূড়ান্ত হওয়ার আগে আমরা মসজিদের আশপাশের প্রতিবেশীকে ইউনিএসকিউ ইসলামিক সেন্টারে বিকেলের চায়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তাদের আশ্বাস দিয়েছিলাম যে, আমরা প্রতিবেশীদের অধিকার নিশ্চিত করব। এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।
২০১২ সালে যখন টুওউম্বার মুসলিমদের জন্য একটি মসজিদের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল, তখন তৎকালীন ইউনিএকিউ ভিসি প্রফেসর জান থমাস ও ক্যাম্পাস সার্ভিসেসের প্রধান ডেভ পোভেই আমাকে এবং ড. শাহিদুজ্জামানকে বিক্রি হওয়া চার্চ ভবন দেখাতে নিয়ে যান। ২০১৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে আইএসটি ৮ লাখ ২০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যখন আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩০ হাজার ডালার ছিল। আমাদের কিছু সম্প্রদায়ের সদস্য তখন আমাকে সতর্ক করেছিলেন যে, আমরা যদি ছয় মাসের মধ্যে এত বেশি অনুদান সংগ্রহ করতে না পারি তবে আমানতের অর্থ হারানোর সম্ভাবনা থাকবে। তবে আমরা স্থানীয়, আন্তঃশহর ও আন্তঃরাজ্য দাতাদের কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ১০ লাখ ডলারের বেশি সংগ্রহ করি। এক জুম্মার দিনে ব্রিসবেনের কুরাবি মসজিদ থেকে ৬৫ হাজার ডলারের বেশি অনুদান পাই।
স্থানীয় নাম গ্রহণের উদ্যোগ
স্থানীয়দের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আমরা এর নাম দিয়েছি ‘গার্ডেন সিটি মসজিদ’, কারণ টুওউম্বা অস্ট্রেলিয়ার গার্ডেন সিটি নামে পরিচিত। এছাড়া মসজিদের পুনঃনির্মাণে আমরা স্থপতিকে নির্দেশ দিয়েছিলাম, ভবনটির নকশার কাঠামো আশপাশের সাথে মেলাতে, যেন মসজিদটি খুব আলাদা বা চোখে পড়ার মতো না লাগে।
২০১৪ সালের ৩০ মার্চ মসজিদের একটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। অনুষ্ঠানটি শুধু মসজিদের জন্যই উল্লেখযোগ্য ছিল না, বরং পুরো শহরের জন্যও একটি বিশেষ উপলক্ষ ছিল। আদিবাসী নেতা ও ফেডারেল মন্ত্রী মাননীয় ইয়ান ম্যাকফারলেন থেকে শুরু করে রাজ্যের এমপি, কুইন্সল্যান্ডের ইসলামিক কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিলের (এএফআইসি) সভাপতিসহ ধর্মীয় নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন ও তাদের মূল্যবান বক্তব্য দেন।
দু’বার মসজিদ পুড়িয়ে দেয়া
২০১৫ সালে মসজিদটি দু’বার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। জানুয়ারিতে প্রথম আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি ছিল কম ও মেরামতের খরচ দিয়েছিল স্থানীয় গির্জাগুলো। ওই সময় টুওউম্বার নেতারা জাতি ও ধর্মের বাধা ভেঙে একত্র হয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক খাদ্য উৎসবের মাত্র দুই দিন আগে দ্বিতীয় আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে। সময়টি ছিল একই বছরের ১৭ এপ্রিল, আর এ অগ্নিসংযোগ অনেক বেশি গুরুতর ছিল। হামলার ফলে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনা স্বত্ত্বেও পুনঃনির্ধারিত নতুন ভেন্যুতে আয়োজিত খাদ্য উত্সবে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ যোগ দিতে এসেছিলেন। পুরো সম্প্রদায় মুসলমানদের সমর্থন করেছিল ও একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে আমার সাথে পুলিশ মন্ত্রী, মেয়র ও টুওউম্বা দক্ষিণ এমপিরা অপরাধীদের নিন্দা করেছিলেন। পোড়া মসজিদের দীর্ঘ পুনর্নির্মাণের যাত্রা মুসলমানরা যেভাবে মোকাবিলা করেছে, তা অস্ট্রেলিয়ার বাকি অংশের জন্য একটি আদর্শ। দুইবার মসজিদ পোড়ানোর পরের ঘটনাকে সামলাতে টুওউম্বার মুসলমানদের নেতারা ইসলামের ও অস্ট্রেলিয়ার মূল্যবোধের প্রতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সচেতন ছিলেন। আমি অবশ্যই মসজিদের প্রথম ইমাম আব্দুল কাদের ও বর্তমান ইমাম ড. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই তাদের ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং সম্প্রদায়কে মৌলবাদ ও সহিংসতা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করার জন্য। গার্ডেন সিটি মসজিদ টুওউম্বার সাংস্কৃতিক মুকুটে একটি নতুন মুক্তা হিসেবে বিবেচিত।
ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ
টুওউম্বা মসজিদ পোড়ানোর বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যা ছিল, যা পরে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই সময় অস্ট্রেলিয়ায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত মসজিদ পরিদর্শন করেন। ২০১৫ সালে উগ্র-ডানপন্থী মুসলিম বিরোধী দল ‘রিক্লেইম অস্ট্রেলিয়া’ আমাদের মসজিদের বিরুদ্ধে একটি বড় জটিলতা তৈরি করেছিল। তবে যখন দলটির নেতা ব্লেয়ার কটরেল একটি বৈঠকের জন্য টুওউম্বাতে আসেন, তখন ২০ জন ও তার কমরেড ছাড়া আর কোনো শ্রোতা ছিল না। ২০১৬ সালে এসবিএসের (একটি অস্ট্রেলীয় সম্প্রচার নেটওয়ার্ক) প্রখ্যাত সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক রবসন টুওউম্বায় প্রায় এক সপ্তাহ কাটান। ওই সময় তিনি মসজিদ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন ও একটি বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন লেখেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার ওয়েসিস টিভি চ্যানেল টুওউম্বা মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে একটি বিশেষ তথ্যচিত্র তৈরি করে।
পুনর্নির্মাণের চ্যালেঞ্জ
নির্ধারিত সংখ্যক গাড়ির পার্কিংয়ের স্থানের জন্য মসজিদের পাশে সম্পত্তি কেনা প্রয়োজন ছিল। নির্মাণ কাজ শুরু করতে ইসলামিক অর্থায়নের জন্য নিরাপত্তা হিসেবে আমাদের ব্যক্তিগত বাড়ি বন্ধক রাখতে হয়েছিল। আমি বর্তমান আইএসটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. মাইনুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যিনি এ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগে আমার সাথে যোগ দেন। আলহামদুলিল্লাহ, প্রকল্পটি ২০২২ সালে সম্পন্ন হয়। বর্তমানে সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সমান। টুওউম্বার একটি গুরুত্বপূর্ণ একর জমিতে অবস্থিত এ মসজিদ একবারে ৫০০ জনের বেশি মুসল্লি ধারণ করতে সক্ষম। মসজিদটি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সৌরশক্তির উৎপন্ন করতে পারে।
তুওম্বারে আসা
আমার পরিবার যখন ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে টুওউম্বায় চলে আসে, এটি তখন মূলত ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত মানুষের শহর ছিল। ওই বছর প্রথম ঈদের নামাজ আমাদের পেছনের উঠোনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০০-২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি ইউনিএসকিউ ইসলামিক সেন্টারের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। যখন মিস্টার মাইকেল থমাস ইউনিএসকিউতে ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে আসেন, আমি তার সাথে কাজ করে মুসলিম প্রার্থনার জন্য একটি স্থায়ী কক্ষ স্থাপন করি।
আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আমার প্রধান অবদান হলো পাঠদান এবং গবেষণা, কিন্তু আমি সবসময় একটি সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে সক্রিয় ছিলাম মানুষের সাহায্য করার জন্য। আমার সম্প্রদায়ের কাজ প্রথমে কুইন্সল্যান্ডের তৎকালীন প্রিমিয়ার পিটার বিটি ২০০২ সালে মাল্টিকালচারাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আমি ইউনিএসকিউতে অনেক বহুসাংস্কৃতিক ইভেন্টের আয়োজন করেছি এবং এসব অনুষ্ঠানে সব ভাইস চ্যান্সেলর, শহরের মেয়র, সংসদ সদস্য, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা, সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় নেতারা বক্তৃতা দিয়েছেন।
আমার অসামান্য সম্প্রদায় নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে, আমি কুইন্সল্যান্ড পুলিশ সার্ভিসেস অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), ইসলামিক কাউন্সিল অব কুইন্সল্যান্ড অ্যাওয়ার্ড (২০১২), এবং ইউনিএসকিউ ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড (২০১৯) লাভ করেছি। কুইন্সল্যান্ড সরকার আমার সম্প্রদায়ের কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাকে সর্বোচ্চ সম্মানিত কালচারাল ডাইভার্সিটি অ্যাম্বাসাডর অ্যাওয়ার্ড (২০১৪) প্রদান করে।
টুওউম্বা ছাড়িয়ে
আমি দুই দফায় কুইন্সল্যান্ড ইসলামী কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি; ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামী কাউন্সিলসের (এসএফআইসি) ইন্টারিম কমিটি চেয়ারম্যান ছিলাম; এবং মুসলিম কমিউনিটি কোঅপারেটিভ অস্ট্রেলিয়ার (এমসিসিএ) পরিচালকের ভূমিকা পালন করেছি, যা বিশ্বের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম ইসলামী ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালের নভেম্বরে এমসিসিএর ১০০ কোটি ডলার শরিয়া সম্মত গৃহঋণ সম্পর্কিত আমার একটি প্রবন্ধ আলওয়াসাত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।
এছাড়া বন্ধু ডেভিড ফোর্ডের সাথে আমি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অধিকার ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টে একটি পিটিশন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এই পিটিশনে হাজার হাজার লোক স্বাক্ষর করেছিল।
সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে
আমরা বাইবেল এবং কুরআনের সাধারণ অনুশাসনগুলো প্রচার করেছি এবং আব্রাহামিক ধর্মসমূহ এবং বহুবিশ্বাসী ওয়ার্কিং গ্রুপের সাথে কাজ করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মানবতার ঐক্য প্রচারের অন্যতম চাবিকাঠি হলো বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের সাথে যুক্ত হওয়া। আমাদের ধর্ম শুধু নিজ ধর্মের অনুসারীদের নয়, বরং মানবতার সেবা করতে শেখায়।
অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন
কিছু মুসলমান হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আমরা কেন অমুসলিমদের সাথে কাজ করব। আমি ইসলামের সৌন্দর্যকে শান্তিপূর্ণভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সবসময় কুরআনের শিক্ষা এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উদাহরণ দ্বারা পরিচালিত হয়েছি। বাস্তবে, আমি হুদাইবিয়ার সন্ধি ও মদীনার সনদের উদাহরণ থেকে পথনির্দেশনা পাই।
সার্বজনীন শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত
ইসলাম যখন দান করার কথা বলে, এটি তার প্রাপককে শুধুমাত্র মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে না। আমাদের যখন প্রতিবেশীদের যত্ন নেয়ার আদেশ দেয়া হয়, ইসলাম অমুসলিমদের বাদ দেয় না। যখন আমাদের ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়, এটি অন্য ধর্মের বিশ্বাসীদের বাদ দেয় না। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেছেন যে, যদি কোনো মুসলমান কোনো অমুসলিমের ক্ষতি করে, তাহলে কিয়ামতের দিনে তিনি আল্লাহর কাছে সেই অমুসলিমের পক্ষে আবেদন করবেন। পবিত্র কুরআন যখন আদমের সন্তানদের সম্মানিত করে, এটি কোনো মানুষের প্রতি বৈষম্য করে না। যখন আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করেছেন, তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্যই তা করেছেন।
অধ্যাপক শাহজাহান খান: উপাচার্য, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা; অ্যামেরিটাস অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া; এবং প্রবাসী ফেলো, বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।