avertisements 2

এক পায়ে দৈনিক ২ কিমি পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:০৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

অদম্য ইচ্ছা শক্তি মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তেমনি এক শিশু এক পায়ে ভর করে ইচ্ছা শক্তির জোরে প্রতিদিনই ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার স্কুলছাত্রী সুমাইয়া। বয়স তার মাত্র ১০ বছর। দুই বছর বয়সে এক পায়ের চলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় গত আট বছর ধরে শুধু ডান পায়ে ভর করেই চলতে হচ্ছে তাকে।

বাড়ি থেকে তার বিদ্যালয়ের দূরত্ব এক কিলোমিটার। এক পায়ে ভর করেই এই পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে এই শিক্ষার্থী। তবে বর্তমানে তার বাম পা দিয়ে চলাচল না করতে পারলেও চিকিৎসা করলে এটি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সুমাইয়ার রিকশাচালক বাবার পক্ষে চিকিৎসার তিন লাখ টাকা জোগানো অসম্ভব।

সে চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রিকশাচালক পরিবারের শফিকুল ইসলামের সন্তান। উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার স্বপ্ন বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। কিন্তু এক পায়ে ভর করে এই স্বপ্নের কতটুকু পথ অতিক্রম করতে পারে সেটিই প্রশ্ন।

জানা গেছে, দুই বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় বাঁ পা বেঁকে যায়। সুমাইয়ার বাঁ পা বর্তমানে ডান পায়ের থেকে ছোট হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কোনোভাবে পা-টি মাটিতে পড়ে না। বাড়ি থেকে তার বিদ্যালয়ের দূরত্ব এক কিলোমিটার। পিঠে ব্যাগ নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যায়।

বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, এই আট বছরে অনেক চিকিৎসা করেছি। কিন্তু ফল পাইনি। অর্থোপেডিক চিকিৎসকরা বলেছেন, অনেক টাকা হলে তোমার মেয়ের পা ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আমার পক্ষে রিকশা চালিয়ে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না।

মা সুমি আক্তার বলেন, মেয়ে যখন স্কুলে যায় তখন তার লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়ার এই দৃশ্য দেখে আমি মা হয়ে আর সহ্য করতে পারি না। দু-চোখে শুধু পানি আসে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আমার মেয়ে যেন সুস্থ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সবার মতো দুই পা দিয়ে হেঁটে চলতে পারে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। সুমাইয়া মেজো। অভাবের সংসার তাই বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। বাড়িতে থাকলে কোলে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতাম।

তার এভাবে স্কুলে যাওয়া আসা দেখে আমাদের বুক পাহাড় সমান কষ্ট হয়। চিকিৎসক বলেছে, তিন লাখ টাকা হলে তাকে ভালো করা সম্ভব। তাই আমি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

সুমাইয়ার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ বলেন, ১০ বছরের সুমাইয়া আমাদের আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। চিকিৎসার অভাবে যেন তার ভবিষৎ অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। সুমাইয়া পড়াশোনায় খুবই ভালো।

আমরা তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। সুমাইয়া আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। দেশের প্রতিটি শিশু সুশিক্ষা চায়। সেই সুশিক্ষা অর্জন করে সে অনেক বড় হোক আমরা তার জন্য এই কামনা করি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2