avertisements 2

বিয়ের পর থেকে ঈদে নতুন শাড়ি জোটেনি নূরজাহান বেগমের

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ জুলাই,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৮ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

টিনের গামলায় রাখা আধাপোড়া ভুট্টা। পাশে আরেকটি গামলায় নিভু নিভু করছে কয়লা। এগুলো সামনে নিয়ে ঘাসের ওপর বসেছিলেন এক বৃদ্ধা। সামনে এগিয়ে যেতেই হাতপাখা দিয়ে কয়লায় বাতাস করলেন। বেরিয়ে এল গনগনে আগুন। এক দুকথা হতে হতে এগিয়ে চলল গল্প। শোনালেন যাপিত জীবনের আখ্যান।

নাম তার নূরজাহান বেগম। বয়স ৬০ পেরিয়েছে। বাবার আদি নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার টেকেরহাটে। বাবা এক সময় পরিবার নিয়ে রাজশাহীতে চলে আসেন। তখন তার বয়স ১০ বছরের মতো। নগরীর শালবাগান এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বাবা শাক বিক্রি করতেন। কখনো কখনো ধান কিনে আনতেন। মায়ের সঙ্গে সেই ধান সিদ্ধ করে চাল তৈরি করতেন। সেই চালের মুড়ি ভেজে দিতেন মা। বাবা সেই মুড়ি বিক্রি করতেন। মুড়ি বিক্রির সুবাদে নগরীর উপকণ্ঠ বায়ার বরইপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমির আলী শেখের সঙ্গে পরিচয় হয় বাবার। ১৬ বছর বয়সে তার সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। কিন্তু

স্বামীর সংসারে গিয়ে সুখের মুখ দেখিনি। ফিরে আসেন শালবাগান এলাকায়। পরে ছোটোবনগ্রাম এলাকায় জমি লিজ নিয়ে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। এরই মধ্যে কোলজুড়ে আসে দুই ছেলে। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সুখের আশায় দিন গুনছিলেন। বড় ছেলের বয়স তখন সাত বছর। হঠাৎ জ্বর হলো তার। এক বেলার সেই জ্বরে আর বাঁচল না সে। ওষুধ এনেও ছেলের মুখে তুলে দিতে পারিনি। পরে সেই ওষুধ ফিরিয়ে দিয়েছি।

সময় কখনো থেমে থাকে না। পুত্রশোক ভুলে আরেক ছেলেকে আঁকড়ে ধরি। কিন্তু তখন আসে আরেক ধাক্কা। স্বামীকে হারিয়ে ফেলি। তখন ছোট ছেলে কবির হোসেনের বয়স ৫। নূরহাজান বলেন, ঘরে খাবার ছিল না। এক দিন আধা কেজি বাদাম নিয়ে বিক্রির উদ্দেশে বেরিয়েছিলাম। তখন এক প্রতিবেশী দেখে বাড়ি নিয়ে গেলেন। কিছু ভুট্টা বের করে দিয়ে বললেন,

পুড়িয়ে বিক্রি করতে। সেই থেকে শুরু। নগরীর আলিফ-লাম-মীম ভাটার মোড়ে শীত বর্ষা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভুট্টা পুড়িয়ে বিক্রি করছি। ছেলে পেশায় স্যানেটারি মিস্ত্রির সহকারী। হাতে কাজও নেই দীর্ঘদিন। ফলে ভুট্টা বিক্রি করে মা-ছেলের সংসার কোনো রকমে চলে যাচ্ছে। এদিকে রোজার সময় ভুট্টা বিক্রি নেই বললেই চলে। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। রোজার শুরুতে একজন ১২ কেজি চাল দিয়েছিলেন।

সেই চালে অর্ধেক রোজা পেরিয়েছে। এখন ভুট্টা বিক্রির টাকায় পেটের খাবার যোগাচ্ছেন। সরকারি সহায়তা বলতে বছর দুয়েক হলো বয়স্কভাতা পাচ্ছেন নূরজাহান বেগম। কিন্তু রোজায় টিসিবির পণ্য কেনার কার্ড কিংবা সরকারের অর্থসহায়তা কিছুই পাননি। ফলে দুর্মূল্যের বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে তার। ঈদের প্রস্তুতি জানতে চাইলে নূর’জাহান বেগম বলেন

, বাবার সংসারে থাকাকালে নতুন ‘জামা পরে ঈদ করেছি। কিন্তু স্বামীর টানাটানির সংসারে কখনো নতুন শাড়ি হয়নি। সন্তানদের নতুন পোশাকে আনন্দ খুঁজতাম। তিনি আরও বলেন, পেট চা’লানোয় এখন দায়। নতুন শাড়ি পাব কোথা থেকে? ছেলে ও

পুত্রবধূকে এবার কিছুই দিতে পারিনি। আর আমি তো প্রায় চার যুগ নতুন পোশাক ছাড়াই ঈদ পালন করে আসছি। এবারও ঈদ হয়তো পুরোনো শাড়িতেই কাটবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2