avertisements 2

'ভাই, দুনিয়াতেই এতো কষ্ট! মৃত্যুর ভয়ে দম আটকে যাচ্ছে'

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ জানুয়ারী, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

ভাই, দুনিয়াতে বেঁচে থাকতেই এতো কষ্ট পাচ্ছি; মৃত্যুর কথা চিন্তা করলেই ভীষণ ভয়ে দম আটকে যায়। আগে অন্ধকারে ঘুমাতাম, এখন রাতের বেলা বাতি নেভালেই ভয় লাগে; দুশ্চিন্তায় কোনোভাবেই ঘুমাতে পারি না। কথাগুলো বলছিলেন সদ্য কৈশোর পার করা ২০ বছর বয়সী তরুণ মো. দেলোয়ার হোসেন। 

দেলোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, মাস তিনেক আগেও অন্য মানুষদের মতো স্বাভাবিক ছিলাম। সবাই বলছিল, স্বাস্থ্য একটু ভালো হয়েছে এবং আমি নাকি একটু ফর্সা হয়েছি। অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তার পরীক্ষা করে বললো- আমার দুই কিডনিই নষ্ট। হুট করেই আমার জীবন থমকে গেল।

'তারপর ডায়ালাইসিস দেওয়া শুরু হলো। প্রথমে বাম পায়ে ফুটো করে নল লাগিয়ে ডায়ালাইসিস দিচ্ছিল, এখন ডান পায়ে নল লাগিয়ে ডায়ালাইসিস দিচ্ছে। সপ্তাহে দুইদিন যখন ডায়ালাইসিস দেয়, শরীরের সব রক্ত এক নল দিয়ে বের হয়ে মেশিনের মধ্যে দিয়ে এসে আরেক নল দিয়ে শরীরে ঢুকে। তখন কষ্টতো হয়ই, ভীষণ শীত লাগে, খিঁচুনি উঠে যায়। ডায়ালাইসিস দিতে দেরি হলে শ্বাস নিতে পারি না। এর আগে তো দম বন্ধ হয়ে মুখ দিয়ে রক্ত উঠছিল।'

তিনি আরো বলেন, ডাক্তার বলেছে- সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আরো কিছুদিন ডায়ালাইসিস দিতে হবে। ডায়ালাইসিস না দিলে বাঁচার সম্ভাবনা নাই। আব্বার জমি বেচা টাকা শেষ হওয়ার পর গত মাসে যখন আমাকে বাড়ি নিয়ে চলে গেল, তখন মৃত্যুর ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।

দেলোয়ার হোসেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তিলনী গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধ মো. আলাউদ্দীনের ছেলে। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস দেলোয়ার বৃদ্ধ মা-বাবার সহায়তার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় অনার্সে ভর্তির ফরমও তুলেছিলেন। এরই মধ্যে কিডনির সমস্যা ধরে পড়ে সব ওলটপালট হয়ে যায়। গত অক্টোবরে ক্রিয়েটিনিন লেভেল ১৪ তে ছিল। চিকিৎসা শুরুতে দেরি হলে ক্রিয়েটিনিন লেভেল ১৬ তে উঠে যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন থেকে ডায়ালাইসিস দেওয়ার পর তা ১০-এ নেমে আসে। বর্তমানে তার ক্রিয়েটিনিন লেভেল আট।

বৃদ্ধ আলাউদ্দীন জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করেছেন। এরই মধ্যে ৯ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে দেলোয়ারকে। তিন মাস ধরে ছেলের চিকিৎসা চলছে। আমার সামর্থ্য আগেই শেষ হয়ে গেছে; মানুষের দয়ায় ছেলেটার চিকিৎসার ব্যবস্থা আল্লাহ করে দিয়েছে।  

টাকার অভাবে বাধ্য হয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর ছেলেকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন হতদরিদ্র এই বৃদ্ধ। বর্তমানে হৃদয়বান মানুষদের সহায়তায় তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু দেলোয়ারের চিকিৎসা টাকার অভাবে আবারো থমকে যাওয়ার উপক্রম।

দেলোয়ারের বৃদ্ধা মা মোসা. আমবারা বিবি অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাবা, অনেক কষ্ট করে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। একটাই ছেলে আমার। আল্লাহ তাকে এতো বড় রোগ দিল। ওর পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের তো ছেলেকে বাঁচানোর ক্ষমতা নাই। মানুষের সহায়তায় এখনো চিকিৎসা হচ্ছে আমার ছেলেটার। ছেলেটা দিন দিন সুস্থ হয়ে উঠছে দেখে ভালো লাগে। আবার চিন্তাও হচ্ছে, যে কয়ডা টাকা আছে সেটা ফুরিয়ে গেলেই চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। ডাক্তাররা বলে, আপনার ছেলের তো কম বয়স; ডায়ালাইসিসে বেশ উন্নতি হচ্ছে; ডায়ালাইসিস দিতে থাকেন, ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার এতো খরচ কিভাবে যোগাড় করবো?

ছেলেকে বাঁচানোর জন্য সমাজের হৃদয়বান মানুষ এবং প্রবাসীদের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন করেছেন বৃদ্ধা আমবারা বিবি। আমবারা বিবি বলেন, মানুষের কতো টাকা; দেশে এতো মানুষ, অল্প কয়ডা করে টাকা দিলেও আমার ছেলেটার জীবন বেঁচে যেত।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2