avertisements 2

লুঙ্গি পরে অনলাইন পরীক্ষা দেয়ায় ৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ অক্টোবর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

লুঙ্গি একটি 'অশালীন' পোশাক। লুঙ্গি পরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) তিন ছাত্রকে পরীক্ষা থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বলছেন, 'শুধু লুঙ্গি পরা নয়, তর্কে জড়িয়েছিল ওই শিক্ষার্থীরা, যা শিষ্টাচারবহির্ভূত।'

বহিস্কার হওয়া ছাত্ররা হলেন- ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সবুজ ইসলাম, বনি আমীন ও জুবায়ের আল মামুন। এ সময় হুমায়রা সিদ্দিক ও ইমরান হোসেন আকাশ নামের আরও দুই শিক্ষার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনের জন্য বহিস্কার করা হয়।

জানা গেছে, করোনাকালে সৃষ্ট সেশনজট নিরসনে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৪ আগস্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুম অ্যাপে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সময়সূচি অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের জেনারেল কেমিস্ট্রি কোর্সের (সিএইচই-১১১) পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা চলাকালে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ঠিক করার সময় জুম পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক এক ছাত্রকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখতে পান। ওই বিষয়টি অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে সংশ্নিষ্ট ছাত্রকে জানিয়ে জুম থেকে তাকে অপসারণ করেন পরিদর্শক। আরেক ছাত্রকে জানালা দিয়ে অধিক আলো প্রবেশ করায় জানালার পর্দা টেনে দেওয়ার নির্দেশ দেন শিক্ষক। ওই ছাত্র জানালার পর্দা টানার জন্য উঠলে শিক্ষক তাকেও লুঙ্গি পরা দেখতে পান। এ সময় তাকেও জুম থেকে অপসারণ করেন। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করায় ঘটনাটি জানাজানি হয়।

সংশ্নিষ্ট শিক্ষকরা জানান, লুঙ্গি পরার কারণে কাউকে বহিস্কার করা হয়নি। অনলাইনে নির্দেশনাবলি অনুযায়ী পরীক্ষার সময় ছাত্রদের লুঙ্গি পরা যাবে না- বিষয়টি অবগত করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। বারবার বলার পরও তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। একপর্যায়ে তারা অনলাইনেই শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়ায়, অবজ্ঞা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করে। এ কারণে তাদের জুম থেকে রিমুভ করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কার করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, পরীক্ষা চলাকালে আমার পেছনের জানালা দিয়ে আলো আসছে জানিয়ে পর্দা টেনে দেওয়ার কথা বলেন একজন পরিদর্শক। এ সময় আমি উঠে জানালা বন্ধ করতে গেলে ওই শিক্ষক আমাকে লুঙ্গি পরা দেখতে পান। এতে তিনি অনলাইনে পরীক্ষার 'ড্রেসকোড'-এর কথা বলে আমাকে জুম থেকে বের করে দেন। মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি বহিস্কার।

সংশ্নিষ্ট বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাত হোসেন সরকার বলেন, অনলাইনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশকিছু নীতিমালা আছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো 'ড্রেসকোড'। ওই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে লুঙ্গি পরিহিত ছিল। তাদের লুঙ্গির পরিবর্তে 'ড্রেসকোড' অনুযায়ী পোশাক পরতে বললে তারা সংশ্নিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে বাজেভাবে তর্কে জড়ায়। আর একজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্ররা অসদাচরণ করবে; এটি কাম্য নয়।

বহিস্কার হওয়া বনি আমীন জানান, তাদের অনলাইনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নীতিমালা অনুযায়ী 'শালীন' পোশাক পরতে বলা হয়েছিল। পরীক্ষার সময় তিনি তা অনুসরণ করেননি জানিয়ে তাকে জুম অ্যাপ থেকে অপসারণ করে বহিস্কার করা হয়। তবে এ বিষয়ে তিনি সংশ্নিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে তর্কে জড়াননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংশ্নিষ্ট ডিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। তবে পরীক্ষার হলে সুপারভাইজার কিংবা ডিনরা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই চূড়ান্ত। এর পরও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ডিন অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসাইন বলেন, আমরা আশা করি, অনলাইনে পরীক্ষা হলেও এমন পরিবেশ বজায় থাকতে হবে যাতে করে মনে হয়, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসেই সশরীরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। আর ছাত্ররা শিক্ষকের সঙ্গে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2