১০ কেজি মরিচে এক কেজি চাল!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৫ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আবাদ খরচ না ওঠার অভিযোগে মোমেনের মতো অনেক চাষি ক্ষেতেই মরিচ নষ্ট করার চিন্তা করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই মরিচের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না তারা। ‘এক বিঘা জমিত মরিচ আবাদ করছু। বাজারোত দাম নাই। জমি থাকি মরিচ তুলি নাই। মরিচ ক্ষেতে নষ্ট হয়া গেইছে। তারপরও কিছুটা উঠায় বিক্রি করিবার নাগেছে। মনে হয়ছে মরিচগুলো রাস্তাত ছিটি দেও।’
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর পাঙ্গা মটকপুর ইউনিয়নের মৌজা পাঙ্গা গ্রামের মরিচচাষি আব্দুল মোমেন। চাষের খরচ না ওঠার অভিযোগে মোমেনের মতো অনেক চাষি ক্ষেতেই মরিচ নষ্ট করার চিন্তা করছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই মরিচের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না তারা।
জেলার ডোমার ও ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কারেন, জিরা, বিন্দু, সাপ্লাই, হটমাস্টার, জামাই ও করিম বিন্দু জাতের মরিচ আবাদ হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারদর কম। লোকসান এড়াতে চাষিদের মরিচ পাকাতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটকটপুর ইউনিয়নের মরিচের হাট পাঙ্গা বাজারে গিয়ে কথা হয় চাষিদের সঙ্গে। কয়েকজন চাষি জানান, এক মণ (৪০ কেজি) হাইব্রিড ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, বিন্দু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং জিরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থ্যাৎ প্রতি কেজি মরিচ হাতবদল হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১২ টাকায়।
চালের কেজিপ্রতি দাম ৫০ টাকা ধরলে তা হবে ৫ টাকা করে ১০ কেজি মরিচের দামের সমান। ১০ কেজি মরিচের দামে ১ কেজি চাল গোমনাতি ইউনিয়নের উত্তর গোমনাতি গ্রামের চাষি আবুজার রহমান বলেন, ‘বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ। সবচেয়ে বেশি খরচ হইছে ওষুধে। ‘এখন পর্যন্ত বিক্রি করি কোনো রকমে খরচাটা উঠার চেষ্টা করছি। এইভাবে দাম পড়ি গেইলে মরিচ আবাদ করমো ক্যাং করি।’
একই এলাকার আরেক কৃষক মমিনুর রহমান বলেন, ‘গত বছর বাজার ভালো ছিল। দুই হাজার টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হয়েছিল। এইবার সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা বিক্রি হয় প্রথম দিকে। ‘তারপর দাম হেটাইতে হেটাইতে কমে দুই শ টাকাত নামিছে। আগামীতে আর মরিচ চাষ করব কি না সন্দেহ আছে।’
মরিচ বিক্রেতা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এক কেজি চালের দাম ৪৫-৫০ টাকা। যদি ভালো চাল কিনতে যান তাহলে ১০ কেজি মরিচ বিক্রি করে এক কেজি চাল কিনতে হবে। কোন জিনিসটার দাম নাই। সবগুলোরেই দাম বাড়েছে, আর কমিল মরিচের।’
হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঙ্গা বাজার থেকে ট্রাকে ট্রাকে মরিচ যায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায়। পাইকারি ক্রেতা নুরুল আমিন বলেন, পাবনা, কুষ্টিয়ার দিকে মরিচ উঠছে, যার প্রভাব পড়েছে এখানকার বাজারে। ওইদিকে দুই টাকা কেজিতে মরিচ পাওয়া যাচ্ছে।
হাট ইজারাদার শফিকুল ইসলাম বলেন, মরিচের দাম ভালো না থাকার কারণ হচ্ছে কুষ্টিয়া পাবনায় মরিচ উঠেছে। তা ছাড়া এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সে কারণে বাজারে দামেরও প্রভাব পড়েছে। গতবারের চেয়ে এবার বাজার আরও খারাপ। এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
১০ কেজি মরিচের দামে ১ কেজি চাল খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোলা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে।
জেলা শহরের শাখামাছা বাজারের পাইকারি মরিচ বিক্রেতা রুবেল ইসলাম বলেন, ‘গেল এক সপ্তাহ থেকে মরিচের বাজার একই রকম বিরাজ করছে। তার আগে আরেকটু কম ছিল। বৃষ্টিপাত হলে বাজারে দাম বাড়বে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর অতিরিক্ত উপপরিচালক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বাম্পার ফলন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এ জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি মরিচ না তুলে জমিতে পাকানো যেতে পারে। এতে লাভ বেশি। এটি করছেনও অনেকে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ১ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও হয়েছে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। অনেকে মরিচ ওঠানো শেষ করেছেন।