রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাকসুর টাকা যায় কোথায়!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৩৬ এএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) অচল রয়েছে ৩৩ বছর। নির্বাচন না হলেও একজন শিক্ষার্থী থেকে প্রতি বছর ছাত্র সংসদ ফি বাবদ নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা; আবাসিক হোক কিংবা অনাবাসিক, তাকে বাধ্যতামূলক ৩০ টাকা হারে দিতে হচ্ছে হল সংসদ ফি। প্রায় তিন যুগ ধরে রাকসু অচল থাকলেও শিক্ষার্থীদের থেকে এই খাতে ফি নেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হিসাব কষে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে তার পাঁচ বছরের শিক্ষা জীবনে রাকসু বাবদ ফি দিতে হচ্ছে সর্বমোট ২২৫ টাকা। দীর্ঘ দিন নির্বাচন না হওয়ার ফলে তৈরি হচ্ছে না রাকসু বডি। এতে নির্দিষ্ট ফি দিয়েও একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণে তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাবিতে বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থী আছেন ২৬ হাজার ৩১৫ জন। ফলে প্রতি বছর রাকসু ও হল সংসদ ফান্ডে জমা হচ্ছে ১১ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৫ টাকা। শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে ধরলেও ৩৩ বছরে কেবল রাকসু ফান্ডেই জমা থাকার কথা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
ছাত্র সংসদ ফি থেকে প্রাপ্ত এই মোটা অঙ্কের টাকা আসলে কোথায় যাচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ড. মো: জাফর সাদিক জানান, ‘ছাত্র সংসদের টাকা ফান্ডেই জমা আছে। আমি জয়েন করার আগে একবার স্পোর্টস প্রোগ্রামের জন্য মনে হয় এখান থেকে খরচ করা হয়েছিল; এছাড়া আর কোনো খাতে রাকসুর টাকা খরচ হয়নি। রাকসু নির্বাচন যখন হবে, তখন নিয়মানুযায়ী যেভাবে টাকাটা খরচ হওয়ার কথা সেভাবেই হবে।’
নির্বাচন না দিয়ে ফি নেয়া কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে রাকসুর এই কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘আপনি এসব প্রশ্ন সভাপতিকে জিজ্ঞেস করেন; আমাকে নয়।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান রাকসু ফি নেয়ার যৌক্তিকতা নেই উল্লখ করে বলেন, ‘যেটা ফাংশনাল না বছরের পর বছর ধরে, সেই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে ফি নেয়া হচ্ছে। নীতিগতভাবে তো নয়ই, আইনগতভাবেও এর কোনো যৌক্তিকতা থাকার কথা নয়। রাকসু যেহেতু ফাংশন করছে না, আমি মনে করি এই বাবদ ফি আদায় অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকলাইন গৌরব বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের খবর নেই; ছাত্র সংসদ অকার্যকর হয়ে আছে, অথচ প্রশাসন প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে অনৈতিকভাবে রাকসুর ফি নিচ্ছে। ৩৩ বছরে জমা ফান্ডের টাকার হিসাব কি তারা আদৌ দিতে পারবে?’
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সবার আগে চাই রাকসু নির্বাচন। রাকসু কার্যকর হলে, এই ফান্ডের অর্থ নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রশাসনের কাছে কৈফিয়ত চাইবে। তবে যেহেতু দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে রাকসু ফি সাময়িকভাবে স্থগিত করা যেতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর ১১ দিনব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাকসুর আয়োজনে একটি ক্রীড়া উৎসব হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের ৮৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন এই ক্রীড়া উৎসবে। এতে হ্যান্ডবল, ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল ও অ্যাথলেটিকস খেলায় সর্বমোট ৩০৩টি পুরস্কার দেয়া হয়। সার্বিক আয়োজনে রাকসু ফান্ড থেকে ব্যয় হয় ১২ লাখ টাকা। ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া রাকসুর নাম ব্যবহার করে অনুষ্ঠান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো তখন এর প্রতিবাদ জানায়।
রাকসু ফান্ডে বর্তমানে কত টাকা জমা আছে এবং কী খাতে এই টাকা খরচ হয় তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ের তত্ত্বাবধানে থাকেন কোষাধ্যক্ষ। তবে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাঊদের কাছেও একই প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয় এই প্রতিবেদক। তিনিও রাকসু ফি নেয়ার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো: সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘রাকসু সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে রাকসুর সভাপতি অর্থাৎ ভিসি মহোদয়কেই জিজ্ঞেস করুন। এই বিষয়টি নিয়ে আমার জায়গা থেকে কোনো মন্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই।’
রাকসু সম্পর্কিত এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ভিসি অফিসে সকল নিয়ম মেনেই দেখা করার সময় চাওয়া হয়; কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া পায়নি প্রতিবেদক।
পরে মুঠোফোনে রাবি ভিসির সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য দিতে রাজি হননি।