avertisements 2

ভারত থেকে কক্সবাজার বিএনপি চালান সালাহউদ্দিন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১৭ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

ছিলেন অজ্ঞাত স্থানে। সেখান থেকে দিতেন নিয়মিত ভিডিও বার্তা। তারপর হলেন নিখোঁজ। পাওয়া গেল ভারতের শিলংয়ে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে জেল খেটেছেন। তবে এখন সেখানে মুক্ত জীবনযাপন করছেন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ভারতে বসেই চালাচ্ছেন নিজ জেলা কক্সবাজার বিএনপির কার্যক্রম। হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইবারের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে গত তিন দিনে দলটির বিভিন্ন স্তরের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। সেখানে অধিকাংশ নেতাই দাবি করেন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জেলার নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয় ভারতে অবস্থানরত সালাহউদ্দিন আহমেদের। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে জেলা বিএনপি।

জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, কক্সবাজার বিএনপি একসময় দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। একটি ধারা নিয়ন্ত্রণ করতেন অলি আহমেদ (বর্তমানে এলডিপি সভাপতি), অন্যটি আবদুল্লাহ আল নোমান। সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজনীতিতে যোগ দিলে অলি আহমেদের ধারায় রাজনীতি করতেন। আর নোমানের ধারায় রাজনীতি করতেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রয়াত খালেকুজ্জামান।

১৯৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সে সময় জেলা বিএনপির রাজনীতি দেখাশোনা করতেন তিনি। ২০০১ সালে সালাহউদ্দিন আহমেদ যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হলে জেলা বিএনপির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন। সেই থেকে এখনো জেলার রাজনীতি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই। কক্সবাজারে এখনো ‘এপিএস’ সালাহউদ্দিন নামে পরিচিত তিনি।

কক্সবাজার বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার বিএনপির নেতা-কর্মীরা শিলংয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে আসেন। কিন্তু করোনার কারণে গত দেড় বছর নেতারা ভারত যেতে পারছেন না। ভিসা চালুর পরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। চলতি মাসের শেষের দিকে কয়েক নেতা শিলং যাবেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এক নেতা বলেন, কক্সবাজার বিএনপির সঙ্গে জড়িত অনেক নেতাই শিলং গিয়েছেন। করোনার আগে প্রায় প্রতি মাসে তাঁরা সেখানে যেতেন। কেউ কেউ বলেন, অনেক নেতা শুধু সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করেছেন।

এ নিয়ে কথা হয় চকরিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম হায়দারের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সপ্তাহে প্রায় দুই-তিনবার কথা হয় তাঁর। জেলা বিএনপি ওনার (সালাহউদ্দিন) ওপর নির্ভরশীল। মোটামুটি কক্সবাজার বিএনপির পুরো কার্যক্রম ওনার নিয়ন্ত্রণে।

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিনি (সালাহউদ্দিন আহমেদ) ভারতে থাকলেও আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশনা ও পরামর্শমতো আমরা চলছি।’

কক্সবাজারে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে সালাহউদ্দিন আহমেদের ভারতীয় নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ) কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মেসেজ করলেও তিনি উত্তর দেননি।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে উত্তরার একটি ভবন থেকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে একদল অস্ত্রধারী সালাহউদ্দিন আহমেদকে ‘অপহরণ’ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। নিখোঁজের দুই মাস পর ১২ মে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের একটি রাস্তা থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনে মামলা হয়। এরপর থেকে তিনি শিলংয়েই অবস্থান করছেন।

সারা দেশের মতো কক্সবাজার জেলা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দিবসভিত্তিক। ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দলটি। গত শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে শহরের শহীদ সরণি সড়কের বিএনপির জেলা কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, কার্যালয়টির তালা খোলা। ভেতরে প্রবেশের পরে কাউকে দেখা যায়নি। গণমাধ্যমকর্মী শুনে এগিয়ে আসেন অফিস সহকারী রুহুল আমিন বাদশা। বাদশা জানান, প্রতিদিনই কার্যালয় খোলেন। বিকেলে নেতা-কর্মীরাও আসেন। ৭ নভেম্বরের কর্মসূচির আলোচনা সভা হবে। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় আবারও সেখানে গিয়ে দেখা যায় কার্যালয়ের বাতি জ্বলছে। ডায়াসের সামনে কয়েকটি চেয়ার পাতা আছে। যদিও বিকেলে ৭ নভেম্বর কর্মসূচি পালন করে দলটি। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সাংসদ লুৎফর রহমান কাজল।

স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজার একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি থাকলেও বর্তমানে তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। তেমন জৌলুশ নেই। দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি না থাকায় দলটির কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে না। জেলা সম্মেলনের তৎপরতা শুরু হলে কোন্দল প্রকাশ্যে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। আবার তাঁদের জন্য জেলা বিএনপি নেতারাও প্রচার-প্রচারণায় অংশও নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি যেভাবে চলছে, আমরাও তেমন চলছি। কেন্দ্র যদি ঢাকায় আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, মাঠে নামে তাহলে এখানেও আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামবে। শুধু শুধু আমরা মাঠে নেমে মামলা-হামলার সম্মুখীন হব, দরকার কী? আর কক্সবাজারের মানুষ বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল। সুযোগ সৃষ্টি হলে তারা আমাদের পক্ষে মাঠে নামবে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। সেখানে শাহজাহান চৌধুরীকে সভাপতি ও শামীম আরা স্বপ্নাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলনে শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন লুৎফর রহমান কাজল। ফলে সম্মেলনে কাজলের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সেই সম্মেলনের মাধ্যমে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় কাজলের। প্রকাশ্য না হলেও সেই ঘটনার রেশ এখনো রয়েছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ তিনবারের সাংসদ। ২০০৮ সালে এখানে সাংসদ হন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। সর্বশেষ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হন। কক্সবাজার-২ আসন (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনটি সর্বশেষ নির্বাচনে জোটের শরিক জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান আজাদকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এ আসনে সর্বশেষ ২০০১ সালে বিএনপির সাংসদ ছিলেন আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ। তবে সর্বশেষ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হয়নি আলমগীরকে।

কক্সবাজার-৩ (সদর ও রামু) আসনের কর্মকাণ্ড সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজলের নিয়ন্ত্রণে। এখানে কাজলের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রয়াত খালেকুজ্জামানের ছোট ভাই শহীদুজ্জামান। বিএনপির সাবেক সাংসদ শহীদুজ্জামান ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। সেই থেকে বিএনপির রাজনীতিতে ব্রাত্য। যদিও জেলায় তাদের কর্মী ও সমর্থক রয়েছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীকে ঘিরে। সর্বশেষ নির্বাচনেও তিনি সেখানে প্রার্থী ছিলেন। বিএনপির মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখানে দলীয় পদ-পদবি নিয়ে প্রতিযোগিতা রয়েছে। কিন্তু সেটা কোন্দলের পর্যায়ে নেই। আমরা সবাই একসঙ্গেই দলীয় কর্মসূচি পালন করি।

ইউপি নির্বাচনে বিএনপির নেতারা: বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সেই অনুযায়ী চলমান ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীও দিচ্ছে না তারা। কিন্তু কক্সবাজারের ইউপিতে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন।

পেকুয়া সদর ইউপিতেই দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিনের বাড়ি। এই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ। উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউপিতে প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর ভাতিজা সাদমান জামী চৌধুরীও। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন চেয়ারম্যান হয়েছেন। আবার অনেক ইউনিয়নে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে।

জেলা বিএনপির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, যাঁরা নির্বাচন করছেন তাঁদের আমরা বাধা দিচ্ছি না। কোথাও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে প্রার্থীকে সহযোগিতাও করছি। নেতা-কর্মীদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের অনেক সমর্থক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2