গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এখন একা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৩১ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
উত্তাল শাহবাগ। হাজারো মানুষের স্লোগান। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাতারাতি গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। অচেনা যুবক ইমরান এইচ সরকার সেই মঞ্চের সেনানী।
মঞ্চ গড়ার সাত দিন পর আপিলের রায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় কাদের মোল্লাকে। আরও প্রজ্বলিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
গণজাগরণ মঞ্চের সেই মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এখন নিভৃতে একাকী দিন কাটাচ্ছেন। পেশায় চিকিৎসক ইমরান নিরাপত্তার শঙ্কায় কোনো চাকরি করেন না। চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা করছেন। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নানা জায়গা থেকে বাধা পেয়ে এখন কোনো আন্দোলন-সংগ্রামেও নেই।
কী করছেন এখন—প্রশ্ন করতেই ইমরান বলেন, ‘মেডিকেল গবেষণা করছি। গবেষণার কাজ নিয়েই আছি।’ নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছেন কেন? ‘করোনার মধ্যে মাঠে নেমে জনসমাগম করলে সবাই সমালোচনা করবে। এ কারণে কর্মসূচি সীমিত ছিল। আমার লাস্ট কর্মসূচিগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে রাজনৈতিক বা রাস্তার কর্মসূচি বা প্রতিবাদ করার বাস্তবতাও খুব একটা নেই। ছোটখাটো কর্মসূচি হয়, বড় পরিসরে কিছু করতে গেলেই সরকারের বাধার সম্মুখীন হতে হয়।’
সরকারের বাধার কারণেই গণজাগরণ মঞ্চের এই অবস্থা কি না, এ প্রশ্নে ইমরান বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক। এর সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিও আছে। করোনার আগেও কিছু কর্মসূচি হতো। অনেক লেখক, প্রকাশক থেকে শুরু করে আমাদের কর্মসূচিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে।
সেটার যেমন বিচার পাইনি, যারা সন্ত্রাস করছে, তাদের নিয়ে সরকার দিনে এক কথা বললেও রাতে তাদের নিয়েই বসছে। একধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে তারা। সামগ্রিকভাবে সরকার প্রগতিশীল কোনো কর্মসূচিতে একদিকে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে এর বিপরীত শক্তিকে উত্থানের একটা সুযোগ দিয়েছে।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকা ইমরান এখন রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত নেই। তিনি বলেন, ‘মাঠের কোনো কর্মসূচিতে এখন নেই। অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে রাস্তায় না নামলেও দায়বদ্ধতা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসবের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছি। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি, এতে বাধা আসেনি।’
ইসরান বলেন, ‘আমি মাঠে নেই—এটা অনেকের জন্য স্বস্তিদায়ক। আমি রাস্তায় নামলে অনেকের অস্বস্তি হয়। আমার রাজনীতি বা আন্দোলন কর্মসূচি সবই কিন্তু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সব সময়ই এসব পছন্দ করে না। আমাকে যারা প্রতিপক্ষ ভাবত, তাদের জন্যও আমি অস্বস্তির ছিলাম। কারণ, শাহবাগ অনেকের জন্য বিরাট বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। আমি রাস্তায় না থাকলে তাদের কাছে মাঠটা ফাঁকা মনে হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের সেই সুযোগটা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্মসূচি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।’
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বায়বীয় ছিল বলে দাবি করেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তো আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার প্রশ্ন আসত না। এখন কোনো রাজনৈতিক দল ডাকলে তাতে সাড়া দেওয়ার তেমন কোনো ইচ্ছা নেই। বেটার হচ্ছে আমি রাজনীতি করবই না।’
আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট (অবেদনবিদ) হিসেবে চাকরি করেছেন ইমরান। ওই পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পেলেও পরে স্থায়ী হয়েছিল। সেই চাকরি করেননি তিনি। ঢাকায় থাকলেও এখন কোনো অফিসে যাওয়াকে নিরাপদ মনে না করায় কোথাও চাকরি করেন না ইমরান।
কর্মসূচি পালন না করলেও এখনো হুমকি পান ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমি এখন কর্মসূচিতে না থাকলেও আমার বিরুদ্ধ শক্তি আগের মতোই আমাকে হুমকির মধ্যে রেখেছে। আমি যা-ই লিখি না কেন, তারা হুমকি দেয়, আমাকে ইনবক্স করে। এ ধরনের হুমকি পেয়ে পেয়ে এমন হয়ে গেছে, এসব নিয়ে নতুন করে ভাবি না। আর যদি পুলিশে অভিযোগ করতে চাই, তাহলে দিনে ১০ বার করে তাদের কাছে যেতে হবে।’
ইমরান বলেন, ‘পরিকল্পনা ছাড়াই সময়ের প্রয়োজনে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। সময়ের প্রয়োজনে গণজাগরণ মঞ্চ ন্যায়ের বাংলাদেশের জন্য কাজ করবে, যেকোনো প্রয়োজনে আবার দাঁড়াবে। গণজাগরণ মঞ্চ নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির না। এখানে অনেক মানুষ। সারা দেশেই আমাদের কর্মীরা আছেন। তাঁরা কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন, গণজাগরণ মঞ্চ আসলে থেমে নেই। এখনো রাস্তায় যে কর্মসূচিগুলো হয়, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরাই করেন, তা যে নামেই হোক। গণজাগরণ মঞ্চ থামার মতো কিছু না, এটা থামবেও না।’
২০১৬ সালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ে নাদিয়া নন্দিতা ইসলামকে বিয়ে করেন ইমরান। ২০১৮ সালে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর আর বিয়ে করেননি।
আপাতত বিয়ের পরিকল্পনাও নেই বলে জানান ইমরান। বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে ইমরান বলেন, ‘আমি আসলে এই বিষয়টা ওরকম জানিও না। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু হয়েছে কি না, কারণ আমার তরফ থেকে কিছু হয়নি।’ বিবাহবিচ্ছেদ মেনে নিয়েছেন? ‘হ্যাঁ। ডিভোর্স হয়ে গেছে, মেনে নিয়েছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তো যে কারও আছে।’