‘র’ ও শেখ হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ৩ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট:  ০১:২১ এএম,  ১ নভেম্বর,শনিবার,২০২৫
                                
 
                        
                    ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোগো ও শেখ হাসিনা/ সংগৃহীত
১৬ জুলাই যখন হাসিনা সরকার শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়, তখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে চলে যায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার বিশেষ অনুরোধ ও ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সরাসরি তদারকিতে বাংলাদেশে ‘র’ এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪০০ কর্মকর্তা ঢাকায় যান। তাদের ভাষায়, আন্দোলন কাশ্মীরি কায়দায় দমন করে তারা দিল্লি ফেরেন ২৮ জুলাই।
কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ‘র’ ওয়াকিবহাল ছিল না। তাদের ভাষায়, তারা সিআইএ’র কৌশলের কাছে হেরে যান ৫ আগস্ট। যদিও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দিল্লি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া নয়। ২ আগস্ট প্লান ‘সি’ এর অংশ হিসেবে এই পরিকল্পনা করে রাখে হাসিনা ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিদ ডোভাল। উল্লেখ্য, ভারত দক্ষিণ এশিয়াকে তার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল হিসেবে দেখে, ফলে এসব দেশের ব্যাপারে নিরাপত্তা উপদেষ্টার একটা হস্তক্ষেপ থাকে।
‘র’ ৫ আগস্টের পর ১০ আগস্ট সংখ্যালঘুদের সমাবেশের আড়ালে একটি প্রতিবিপ্লব করার পরিকল্পনা করে। তার জন্য বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সাংবাদিকও সেদিন ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। সেটি ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় ক্যু পরিকল্পনা করা হয় ১৫ আগস্ট। সেটিও ব্যর্থ হয়। তবে সম্প্রতি দেশে যে আনসার বিদ্রোহের পরিকল্পনা হয়, তা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ। তার সাথে ‘র’ এর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি দ্য মিরর এশিয়া।
ভারতের পরবর্তী পরিকল্পনা কী হতে পারে, তা নিয়ে গেল এক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান করেছে দ্য মিরর এশিয়া। সম্প্রতি হাসিনাকে সাউথ দিল্লির একটি সরকারি আবাসিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, হাসিনা বর্তমানে ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) সুরক্ষিত একটি ভবনে থাকছেন। অতি সম্প্রতি ভারতের ডজনখানেক হাই-প্রোফাইল মিটিং হয়েছে তার সাথে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ‘র’ প্রধান নিজে শেখ হাসিনার দেখভাল করছেন এবং তার সাথে প্রায়ই বৈঠক করছেন।
মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য হাসিনার সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করছে তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও। নিয়মিত যোগব্যায়ামও করছেন হাসিনা। হাসিনার নতুন বাসভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নিয়োগ দেখে দিল্লিতে কর্মরত এক বাঙালি সাংবাদিক দ্য মিরর এশিয়াকে বলেছেন, হাসিনা দিল্লিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবেন।
দ্য মিরর এশিয়া নজর রাখছে হাসিনা ও ভারতের পরবর্তী পরিকল্পনার দিকে। এজন্য বাংলাদেশের ওপর নজর রাখেন এমন দুই সাংবাদিক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা, দুজন থিংক ট্যাংকের গবেষক ও সিক্রেট সার্ভিসের একজনের সাথেও কথা বলেছে দ্য মিরর এশিয়া।
জানা গেছে, ভারত এই মুহূর্তে দুই নৌকায় পা রেখে চলতে চায়। প্রথমত, ঢাকার নতুন সরকার ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, তারা জামায়াতে ইসলামীর সাথেও আলোচনা করতে রাজি। তবে জামায়াতের জন্য আলোচনার ‘দরজা’ খুলতে চান না তারা, ‘জানালা’ খুলতে চায়। যেমনটা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, আপাতত দুটি প্রোজেক্ট দেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রোজেক্ট ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হলো ইউনূস সরকারের ওপর ভর করেছে শিবির, হেফাজত ও হিযবুত তাহরির- বামপন্থিদের মাধ্যমে এই বয়ান হাজির করানো। সেই সাথে হেফাজত ইসলামের একটি অংশ, যার সাথে ‘র’ এর দীর্ঘদিনের যোগাযোগ, তাদের বোঝানো হচ্ছে ‘ড. ইউনূস সুদখোর, তিনি মার্কিন এজেন্ট, কোনভাবে একজন ভালো মুসলিম নন। বেশ কিছুদিন গেলে এই সরকার সমকামীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে পারে’। এই গ্রুপকে জামায়াতের সাথে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ঐক্যে না যাওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে মিশন থেকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের সাথে হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্টতা ও তাদের ভাবাদর্শ নিয়ে একটি ভয় তৈরি করার দিকে। দ্য মিরর এশিয়া জানতে পেরেছে, ইতিমধ্যে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী’ তিনজন বামপন্থী সাবেক ছাত্রনেতার সাথে পশ্চিম বাংলায় দিল্লিতে কর্মরত একজন সাংবাদিক দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেছেন। তাদের সাথে ভবিষ্যতে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে ‘র’ এর মধ্যে একটি উপ-গ্রুপ করা হয়েছে ‘বাংলা মিশন’ সম্পন্ন করার জন্য। সম্প্রতি চিকেন নেক নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর মন্তব্য ও সেভেন সিস্টার নিয়ে সমন্বয়কদের কারো কারো বক্তব্যকেও আমলে নিয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত গোয়েন্দা উপ-টিম ‘বাংলা মিশন’। তাদের প্রত্যেকের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে হিন্দি ও ইংরেজিতে অনুবাদ করে ভিক্টর-২ এর টেবিলে দেওয়া হয়েছে। ভিক্টর-২ হলো ‘র’ এর একটি প্রোটোকল, যার কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কিত সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের নিয়ে ও তাদের আদর্শিক ধারণা নিয়ে দিল্লির দুটি ও আসামের একটি থিংক ট্যাংক গত ২০ দিন ধরে গবেষণা করেছে। তিনটি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, সমন্বয়করা যে দল গঠন করতে যাবে তা হবে একটি ভারতবিরোধী রাজনৈতিক দল। বামপন্থি বৈপ্লবিক ধারণা তারা পোষণ করলেও তাদের সাথে ধর্মের বিরোধ থাকবে না। এই আদর্শের ফলে মূলত দেশের বামপন্থিদের রাজনৈতিক স্পেস একেবারে শূন্য হয়ে যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। ফলে তারা বামদের সাথে তরুণদের একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হবে বলে ধারণা করছেন। সে চিন্তা থেকেই ‘র’ বামপন্থি ছাত্র নেতাদের সাথে যোগাযোগ করছে।
এছাড়া সম্প্রতি হয়ে যাওয়া গণঅভ্যূত্থানকে তারা একটি দার্শনিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি দিতে চাইলে বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র বয়ান ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন, যা ঢাকায় ভারতের সফট পাওয়ারকে দুর্বল করে দেবে। এই গণঅভ্যূত্থানের চেতনাকে বৃহত্তর পরিসরে গ্রহণ করা হলে, ‘র’ এর দ্বিতীয় পরিকল্পনা ‘রিসেটেল আওয়ামী লীগ-২০২৫’-ও খুব কঠিন হয়ে যাবে।
দিল্লিভিত্তিক একজন বাংলাদেশ গবেষক দ্য মিরর এশিয়াকে বলছিলেন, হাসিনার অসাধারণ ক্ষমতা আছে কামব্যাক করার। তিনি ৮১-তে, ৯৬-তে কামব্যাক করেছেন। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে গিয়ে তিনি ২০০৯ সালে অপ্রতিরোধ্যভাবে ফিরে এসেছেন। আমি মনে করি, হাসিনা ফিরতে পারবেন আবার, তিনি হয়ত দিল্লি থেকে দল পরিচালনা করবেন। কিন্তু তার দল ফিরতে পারবে। তবে সেখানে সংকট হবে গণঅভূত্থানের ইতিহাসকে জাতীয় ইতিহাস, সাহিত্যকর্মের অংশ করে একটি আদর্শিক ভিত্তি তৈরি করলে। তাই আমরা ছাত্রদের বেশি সময় দিতে চাই না। ভারত মনে করছে, বিএনপি আমলে বরং আওয়ামী লীগ বেশি নিরাপদ থাকবে। বিএনপির নানা সংকট সামনে চলে আসলে, বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি হলে আওয়ামী লীগ একটা পলিটিকাল স্পেস পেতে পারে।
আসাম থেকে একজন বাংলাদেশ এক্সপার্ট কথা বলেছে দ্য মিরর এশিয়ার সাথে। তিনি বলেছেন, হাসিনা নর্থ ইস্টের সাথে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার যে কথা বলছিলেন, সে স্বপ্ন একেবারে ভেঙে গেছে। বিএনপি এ ক্ষেত্রে ভারতকে সহযোগিতা করবে না। নতুন রাজনৈতিক দল হবে অনেক বেশি তারুণ্য নির্ভর, তারা কূটনীতির চেয়ে রাজনৈতিক ভাষায় বেশি কথা বলবেন। এমনকি তাদের কিছু সিদ্ধান্ত সেভেন সিস্টারের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আমরা মনে করছি।
ফলে এই মুহূর্তে ভারতের অগ্রাধিকার হলো- তরুণদের কোন দল গঠনের সুযোগ না দিয়ে বর্তমান সরকারকে নভেম্বরের মধ্যে হিযবুত তাহরির ও শিবির প্রভাবিত সরকার বলে একটা অস্থিরতা তৈরি করা। অন্যদিকে নির্বাচনের পরিবেশের কথা বলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নিয়ে আসা,
সুত্র: দ্য মিরর এশিয়া
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর
 
                                    ভাইরাল এই ছবিটি শেখ হাসিনার নয়
 
                                    আসিফ নজরুল প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন, এখন বল তার কোর্টে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
 
                                    ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে কিছু করার নেই: তারেক রহমান
 
                                    অনেক উপদেষ্টা আখের গুছিয়েছে সেফ এক্সিটের বিষয়ে ভাবছেন: নাহিদ
 
                                    




