২৫০ টাকার খাঁচা ৬০০ টাকায়, গাছের চারাও কেনা হচ্ছে বেশি দামে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ জুন,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৩৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
উষ্ণতা কমাতে এবং সবুজ ঢাকা বাস্তবায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ফুটপাত, সড়ক বিভাজক ও ফাঁকা স্থানে দুই লাখ গাছের চারা লাগানোর ঘোষণা দেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। গত মে মাসে মেয়রের এমন ঘোষণার পর গাছ লাগানোর এই কর্মসূচি শুরু হয় গত ৬ জুন। তবে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে গাছের চারা ও বাঁশের খাঁচা সরবরাহে ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। বছরজুড়ে ডিএনসিসির বিভিন্ন কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিএফ করপোরেশন।
ওদের দিয়েই গাছ লাগানোর এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পিএফ করপোরেশন বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে গাছ ও বাঁশের খাঁচা কিনে ডিএনসিসিকে সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে চার ফুট উচ্চতা ও দেড় ফুট প্রস্থের বাঁশের তৈরি একটি খাঁচা (দুই খুঁটিসহ) ঢাকার বাজারে পাওয়া যায় ২৫০ টাকায়। ঢাকার বাইরে এই খাঁচার দাম আরো কম।
জানা গেছে, ডিএনসিসিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিএফ করপোরেশন এই খাঁচা সরবরাহ করছে ৬০০ টাকায়। ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকে লাগানোর জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারাও বেশি দামে কেনা হচ্ছে। উত্তর সিটির ফুটপাতে লাগানোর জন্য ছাতিম, বকুল, কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া ও সোনালুগাছের তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার প্রতিটি চারা কেনা হচ্ছে ২৫০ টাকায়। যদিও ছাতিম ছাড়া অন্য গাছের চারা নার্সারিতে পাওয়া যায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
এ ছাড়া সড়ক বিভাজকে লাগানোর জন্য এক থেকে দেড় ফুটের কাঁটা মেহেদি, রঙ্গন, করবী, বাগানবিলাস ও বামন জারুলের চারার প্রতিটির দাম পড়ছে ৯০ টাকা। এসব চারা ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যায়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন নার্সারি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি সরঞ্জামের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর সিটির চাহিদাপত্রের গাছের চারা ও বাঁশের খাঁচা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। পূর্ব মেরুল বাড্ডা এলাকার এম এস এন্টারপ্রাইজ নামের বাঁশের সরঞ্জামের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, চার ফুট উঁচু এবং পাশে দেড় ফুটের একটি বাঁশের খাঁচার দাম জানতে চাইলে ৩০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। পরে পরিমাণে বেশি অর্ডার করার কথা জানালে ২৫০ টাকায় দিতে রাজি হয়।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ইমাম হোসেন স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুটি খুঁটিসহ চার ফুটের খাঁচা আমরা ২৫০ টাকায় দিতে পারব। আর উচ্চতা বাড়লে দাম কিছুটা বাড়বে।’
সাব্বির হার্ডওয়্যার ও টিন বিতান নামের আরেকটি দোকানে জিজ্ঞাসা করলে তারাও ২৫০ টাকায় দিতে পারবে বলে জানায়। স্বত্বাধিকারী মিলন মিয়া বলেন, ‘বাইরে থেকে ঢাকায় মাল নিয়ে আসতে বাড়তি খরচ হয়। আর খাঁচা বানাতে আরো খরচ পড়ে। না হলে দাম আরো কম রাখা যেত।
রাজধানীর ইস্কাটন রোডের স্টার নার্সারির কর্মী নূর মোহাম্মদ জানান, বড় চারা (তিন থেকে চার ফুট) হলে বকুল ও কাঠবাদাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কৃষ্ণচূড়া ও সোনালু ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেন তাঁরা। তবে একই আকারের ছাতিমের চারা বিক্রি করেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এ ছাড়া পলিথিনের প্যাকেটে রাখা ছোট কাঁটা মেহেদি, রঙ্গন, করবী, দেশি বাগানবিলাস ও জারুলের চারা ৪০ থেকে ৫০ টাকা আর সিমেন্টের বস্তার প্যাকেটে রাখা চারা ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করেন তাঁরা। কাছাকাছি দামের কথা জানালেন হাতিরঝিল পুলিশ প্লাজার পাশের লিজা নার্সারির কর্মী সাদেক হোসাইন।
ডিএনসিসির পরিবেশ সার্কেলের তথ্যানুযায়ী রাজধানীর আনিসুল হক সড়কের ফুটপাতে ১৫১টি ছাতিম, বকুল ও কাঠবাদাম গাছের চারা লাগানোর মাধ্যমে উত্তর সিটিতে গাছ লাগানোর কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। একই সড়কের বিভাজকে লাগানো হচ্ছে তিন হাজার ৬০০টি মেহেদি, রঙ্গন, করবী, বাগানবিলাস ও বামন জারুলের চারা। এসব চারা ৯০ থেকে ২৫০ টাকায় কেনা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিএফ করপোরেশনের প্রকৌশলী মো. বিজয় হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান ডিএনসিসির বছরব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে। চলতি বছর মেয়রের দুই লাখ গাছ লাগানোর কাজও আমরা করছি।’
বাঁশের খাঁচা ও গাছের চারা বেশি দামে কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেনাকাটার বিষয়টি আমি জানি না। সেটি আমাদের ক্রয়সংক্রান্ত বিভাগ দেখে।’
বেশি দামে বাঁশের খাঁচা ও গাছের চারা কেনার বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই লাখ গাছ লাগানোর কাজে কোনো ধরনের অসংগতি মানা হবে না। ঢাকাকে বাঁচাতে, ঢাকার মানুষকে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির কোনো টাকা এখনো কাউকে দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি বাঁশের খাঁচা এবং গাছের চারা বেশি দামে কেনে, সেটা তো আমরা দেব না। আমরা অবশ্যই বাজারদর দেখে টাকা পরিশোধ করব। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’